পরিবেশ কাকে বলে | শিশুর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কিত পরীক্ষা

পরিবেশ কাকে বলে | শিশুর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কিত পরীক্ষা

উত্তর :

পরিবেশ :

সাধারণভাবে পরিবেশ বলতে আমাদের চারপাশের সমস্ত সজীব ও নির্জীব উপাদানকে বােঝানাে হয়। পরিবেশের সজীব উপাদান হল গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ ইত্যাদি আর নির্জীব উপাদান হল নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ইত্যাদি। এইসকল উপাদান প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

মনােবিদ স্টোন পরিবেশের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, পরিবেশ হল সেইসকল উদ্দীপকের সমষ্টি যেগুলি শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে উদ্দীপিত করে।

মনােবিদ উডওয়ার্থের মতে, শিশু জন্মানাের পর থেকে যেসকল পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে, সেগুলিই নিয়েই পরিবেশ গড়ে ওঠে। উপরের সংজ্ঞাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়—যেসকল বাহ্যিক শক্তি ও অবস্থা শিশুর বা ব্যক্তির জীবন, প্রকৃতি, আচার-আচরণ, বৃদ্ধি-বিকাশ, পরিণতি ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে, তাই হল পরিবেশ

শিশুর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কিত পরীক্ষা :

শিশুর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাবই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে বহু পরীক্ষানিরীক্ষা ও গবেষণা হয়েছে, এখানে সেগুলির কয়েকটি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল।

[1] ক্যাটেল-এর পরীক্ষা: শিশুর জীবন বিকাশে পরিবেশের প্রভাব কতখানি সে-বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্যাটেল সাহেব আমেরিকার কয়েকজন বিজ্ঞানীর বংশপঞ্জি অনুশীলন করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন মানুষের বুদ্ধির বিকাশ-এর ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবেশের ও অন্যান্য সুযােগসুবিধার গুরুত্বই বেশি। তাই তিনি জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাবকেই অধিক গুরুত্ব দানের কথা বলেন। 

[2] অরণ্য শক্তির ওপর পরীক্ষা : সমাজের বাইরে অরণ্যে বড়াে হওয়া শিশুর ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে তাদের আচার-আচরণ ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন মানবসমাজের বাইরে বড়াে হওয়ার কারণে ওই শিশুর বন্য পশুর স্তরে অবনমিত হয়েছে। সুতরাং, মানবজীবন বিকাশের জন্য পরিবেশ অপরিহার্য। 

[3] ইস্টার ব্রুকের পরীক্ষা : ডাগডেল জিউক সম্পর্কিত পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে মন্তব্য করেছিলেন, শিশুর জন্ম বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বংশগতি। ড. ইস্টার ব্রুক জিউক পরিবারের পরবর্তী পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহ করেন। তিনি লক্ষ করেন পরবর্তী প্রজন্ম আগের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র বসবাসের ফলে তাদের মধ্যে যথেষ্ট চারিত্রিক উন্নতি ঘটেছে। উন্নত পরিবেশে বসবাসের ফলে পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যদের মানসিক ও চারিত্রিক উন্নতি ঘটেছে। সুতরাং, শুধুমাত্র বংশগতি নয়, শিশুর জীবন বিকাশে পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। 

[4] ওয়েলম্যান ও তার সঙীদের সমীক্ষা : আইওয়া (Iowa) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েলম্যান ও তার সঙ্গীরা শিশুর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ব্যক্তি যত ভালাে বা উন্নত পরিবেশে বসবাস করবে, তার বুদ্ধ্যঙ্ক তত ভালাে হবে। অন্যদিকে ব্যক্তি অনুন্নত পরিবেশে বসবাস করতে থাকলে তার বুদ্ধ্যঙ্ক কমে যাবে।

 [5] বারবারা বার্কস-এর গবেষণা : মিস বারবারা বাকস শিশুর জীবন বিকাশে পরিবেশের প্রভাব বিষয়ে গবেষণার জন্য 204 জন শিশু নিয়ে গবেষণা করেন। শিশুগুলির বয়স একবছর পূর্ণ হওয়ার আগেই শিশুদেরকে তার প্রকৃত পিতা-মাতার কাছ থেকে নিয়ে উন্নত পরিবেশে পালক পিতা-মাতার কাছে রাখা হয়। দেখা গেছে পালক পিতা-মাতার পরিবেশ প্রকৃত পিতা-মাতার। তুলনায় উন্নত হওয়ায় প্রায় 17% শিশুর বুদ্ধ্যঙ্ক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। তারা উন্নত বুদ্ধ্যঙ্কের অধিকারী হয়েছে।

 [6] সমকোশী যমজ সন্তানের ওপর সমীক্ষা : গ্লাডিস ও হেলেন নামক দুটি সমকোশী যমজ শিশু দেড় বছর বয়সে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুজন দুটি আলাদা পরিবেশে বেড়ে উঠতে থাকে। গ্লাডিস যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, সেখানে পড়াশােনার কোনাে সুযােগ না-থাকায় জীবিকা অর্জনের তাগিদে কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। অন্যদিকে হেলেন পালিকা মাতার সহযােগিতায় স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়াশুনা করে, শিক্ষকতার পেশায় যােগ দেয়। প্রায় 35 বছর পরে, যখন তাদের সন্ধান পাওয়া গেল, দেখা গেল তাদের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে বহু পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষনিরীক্ষায় দেখা যায় হেলেন গ্লাডিসের থেকে বুদ্ধি, আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্বাস্থ্য প্রভৃতি দিক থেকে অনেক এগিয়ে, এর থেকে বলা যায়, শিশু বা ব্যক্তির জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের উল্লেখযােগ্য প্রভাব রয়েছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment