প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর পথচলতি গল্পের প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পথচলতি গল্প রয়েছে। গল্পের শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
পথচলতি
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
হাতে কলমে
১.১ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম কী?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম ‘জীবনকথা’।
১.২ ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে কোন গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ‘The Origin and Development of the Bengali Language’ গ্রন্থ রচনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
2. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও:
২.১ লেখকের কোন ট্রেন ধরার কথা ছিল?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখকের ‘দেহরা-দুন-এক্সপ্রেস’ ট্রেন ধরার কথা ছিল।
২.২ একটা তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লোকের ভিড় নেই কেন ?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে একটা তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লোকের ভিড় না থাকার কারণ, ট্রেনের সেই অংশটি ছিল কাবুলিওয়ালাদের দখলে।
২.৩ পাঠানদের মাতৃভাষা কী?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্য পাঠে জানা যায় পাঠানদের মাতৃভাষা ‘পশতু’।
২.৪ বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা বাংলাদেশের কোথায় ছিল?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা ছিল বাংলাদেশের বরিশালের পটুয়াখালি বন্দরে।
২.৫ খুশ-হাল খাঁ খট্টক কে ছিলেন?
উত্তর:- খুশ-হাল খাঁ খট্টক ছিলেন আওরঙ্গজেবের সমসাময়িক এবং পাঠানদের পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।
২.৬ আদম খাঁ ও দুরথানির কিসসার কাহিনি কেমন?
উত্তর:- আদম খাঁ ও দুরথানির কিসসার কাহিনি হল ‘দিল – ভাঙা- কাহিনি’ অর্থাৎ করুণ-রসাত্মক।
২.৭ এই পাঠ্যে কোন বাংলা মাসিকপত্রের উল্লেখ আছে?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ পাঠ্যাংশে ‘প্রবর্তক’ নামে বাংলা মাসিকপত্রের উল্লেখ আছে।
২.৮ রোজার উপোসের আগে কাবুলিওয়ালারা ভরপেট কী খেয়েছিলেন?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে রোজার উপোসের আগে কাবুলিওয়ালারা বড়ো বড়ো পাঠান ‘রোটা’ আর ‘কবাব’ খেয়েছিল।
২.৯ ‘তসবিহ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:- ‘তসবিহ’ শব্দের অর্থ ‘জপমালা’।
২.১০ আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে কী বলা হয় ?
উত্তর:- আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে ‘নব্বদ্-ও-নও অসমা – ই – হাসানা’ বলে।
৩. নিম্নলিখিত শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো:
হুংকার, স্বস্তি, বিষয়ান্তর।
উত্তর:-
হুংকার – হুম্ + কারা
স্বস্তি – সু + অস্তি।
বিষয়ান্তর – বিষয় + অন্তর।
৪. নিম্নলিখিত শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করো:
ফিরতি, আভিজাত্য, জবরদস্ত, নিবিষ্ট, উৎসাহিত।
উত্তর:-
ফিরতি – ফির্ + তি
আভিজাত্য – অভিজাত + য
জবরদস্ত – জবর + দস্ত।
নিবিষ্ট – নি – বিশ্ + ত ৷
উৎসাহিত – উৎ – সহ্ + ই + ক্ত।
৫. ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো :
শীতবস্ত্র, মাতৃভাষা, শিশুসুলভ, ত্রিসীমানা।
উত্তর:-
শীতবস্ত্র – শীতে পরিধেয় বস্ত্র। (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।)
মাতৃভাষা – মাতার ভাষা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
শিশুসুলভ – শিশুর মতো সুলভ (উপমান কর্মধারয় সমাস)।
ত্রিসীমানা – ত্রি সীমানার সমাহার (দ্বিগু সমাস)।
৬. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো:
৬.১ গাড়িতে সেদিন অসম্ভব ভিড় দেখা গেল। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- গাড়িতে সেদিন ভিড় একটুও কম দেখা গেল না।
৬.২ কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিল না। (প্রশ্নবোধক বাক্যে )
উত্তর:- কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর তখন সম্মান ছিল কি?
৬.৩ কলকাতার ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয়নি। (জটিল বাক্যে)
উত্তর:- কলকাতার যে ভাষা সে তার আয়ত্ত হয়নি।
৬.৪ দুই-একজন মাঝে-মাঝে এক-আধ লবজ ফারসি বললে বটে, কিন্তু এদের বিদ্যেও বেশিদূর এগোল না। (সরল বাক্যে)
উত্তর:- দুই একজন মাঝে মাঝে এক আধ লবজ ফারসি বললেও এদের বিদ্যে বেশিদূর এগোল না।
৬.৫ বাংলাদেশে তোমার ডেরা কোথায়? (নির্দেশক বাক্যে )
উত্তর:- বাংলাদেশে তোমার ডেরা কোথায় বলো।
৭. প্রসঙ্গ উল্লেখ করে টীকা লেখো:
কাবুলিওয়ালা, পশতু, ফারসি, আফগানিস্থান, বরিশাল, গজল, উর্দু, নমাজ
কাবুলিওয়ালা:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে দেহরা দুন এক্সপ্রেসের একটি কামরায় ষোলোজন কাবুলিওয়ালার প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। লেখক যাত্রাপথে এদের সঙ্গী হন।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের অধিবাসীদের মধ্যে যারা বাংলায় নানা জিনিসপত্র বিক্রি ও সুদের কারবার করতে আসেন, তারাই সাধারণভাবে কাবুলিওয়ালা নামে পরিচিত।
পশতু:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে কাবুলিওয়ালাদের মাতৃভাষা প্রসঙ্গে, খুশ হাল খাঁ খট্টকের গজল ও আদম খান দুরখানির মহব্বতের কিসসা প্রসঙ্গে পশতু ভাষার কথা এসেছে।
পশতু ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের ইরানীয় শাখার একটি ভাষা আফগানিস্তান এ প্রায় ১০ লক্ষ লোক এই ভাষায় কথা বলে। এরা প্রায় সবাই পশতুন জাতির লোক পাকিস্তানে আরও প্রায় ৯৫ লক্ষ লোক পশতু ভাষায় কথা বলেন।
ফারসি:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখক আফগানিস্তানের শিক্ষিত জনের ভাষা, উচ্চ ও ভদ্র সমাজের ভাষা, সরকারি ভাষা হিসেবে ফারসি এর প্রসঙ্গ এনেছেন।
ফারসি হল মধ্য এশিয়ায় প্রচলিত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের ইরানীয় শাখার অন্তর্ভুক্ত একটি ভাষা। পারস্যের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে ফারসি ভাষার উদ্ভব হয়েছে। বর্তমানে ভাষাটির তিনটি সরকারী রূপ প্রচলিত: ইরানে এটি ফর্সা বা পর্সী নামে পরিচিত। আফগানিস্তানে দ্যারী নামে পরিচিত। ভাষাটির আরেকটি রূপ তাজিকিস্তান এবং পামির মালভূমি অঞ্চলে প্রচলিত। তাজিকিস্তানে এর সরকারি নাম তজিকী।
বরিশাল:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে বাংলাদেশে বৃদ্ধ পাঠানের বাসস্থান প্রসঙ্গে বরিশাল জায়গার নাম উল্লিখিত হয়েছে।
বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রধান শহর। এটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ও একই সাথে জেলা ও বিভাগীয় সদর দপ্তর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে মোগল আমলে স্থাপিত লবণচৌকি গিরদে বন্দর কে কেন্দ্র করে এ শহর গড়ে ওঠে ও ১৮০১ সালে বরিশালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হলে, শহর হিসেবে এর ব্যাপক গুরুত্ব বাড়ে।
গজল:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখক ট্রেনযাত্রী কাবুলিওয়ালাদের কাছে পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ হাল খা খট্টকের গজল শুনতে চেয়েছিল।
গজলের উৎপত্তি আরব থেকে হলেও ফারসি ভাষায় এটি বিশেষ বিকাশ লাভ করে। পরবর্তীতে উর্দু ভাষায় এটি সমধিক জনপ্রিয়তা পায়। আরবি, ফার্সি, পশতু, উর্দু ছাড়াও হিন্দি, পাঞ্জাবী, মারাঠি, বাংলা এমনকি ইংরেজিতেও গজল লেখা হয়।
উর্দু:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখকের সামনের বেঞ্চিতে বসা দুজন পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে লেখক সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। লেখক পশতু ভাষা না জানলেও উর্দু জানার সুবাধে তাদের কথা বুঝতে পারছিল।
উর্দু ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারেরইন্দো-আর্য শাখার ভাষা। পাকিস্তানে প্রায় ১ কোটি লোক এবং ভারতে প্রায় ৫ কোটি লোকের মাতৃভাষা উর্দু। এছাড়াও এটি আফগানিস্তানের শহরগুলিতে ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির শহর এলাকায় প্রচলিত।
নামাজ:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে পরের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে লেখক দেখেন ট্রেনের সহযাত্রী কাবুলিওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ নামাজ পড়ছে।
নামাজ বা সালাত বা সালাহ ইসলাম ধর্মের একটি দৈনিক নিয়মিত ইবাদত। একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে হয় যা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে। এটি মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন অবশ্যকরণীয় একটি ধর্মীয় কাজ।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো :
৮.১ স্টেশনে পৌঁছে লেখক কী দেখেছিলেন?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে শ্বশুর বাড়ি গয়া থেকে ফেরার সময় দেহরা-দুন এক্সপ্রেস ধরবেন বলে স্টেশনে পৌঁছে লেখক দেখলেন, ট্রেন যথাসময়ে এলেও গাড়িতে অসম্ভব ভিড়। মধ্যম শ্রেণির কোনো কামরায় ঢুকতেই পারা যায় না। দ্বিতীয় শ্রেণির গাড়িগুলোতে লোকে মেঝেতে বিছানা করে নিয়ে, কোথাও বা বসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কেবলমাত্র তৃতীয় শ্রেণির একটি বড়ো বগির কাছে একেবারেই লোকের ভিড় নেই। সেটি জনাকয়েক কাবুলিওয়ালা দখল করে রেখেছে।
৮.২ দু-চারটি ফারসি কথা বলতে পারার ক্ষমতা লেখককে কী রকম সাহস দিয়েছিল?
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে শ্বশুর বাড়ি গয়া থেকে ফেরার জন্য স্টেশনে এসে লেখক দেখেন ট্রেনে সেদিন প্রচন্ড ভিড়। কেবলমাত্র একটা বড়ো তৃতীয় শ্রেণির বগিতে একদম ভিড় নেই। কারণ সেটি কাবুলিওয়ালাদের দখলে। তখন লেখক ঠিক করলেন এই কামরাতেই তিনি উঠবেন। লেখকের মনে সাহস ছিল কারণ তিনি দু একটি ফারসি কথা বলতে পারেন। ফারসি ছিল তখনকার সময়ে আফগানিস্তানের শিক্ষিত জনের ভাষা, উচ্চ ও ভদ্র সমাজের ভাষা, সরকারি ভাষা। আর কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা ছিল পশতু। যে ভাষার তখন সম্মান ছিল না। এদের মধ্যে ফারসি বলাটা ছিল শিক্ষা ও আভিজাত্যের লক্ষণ। তাই লেখক ভেবেছিলেন পশতুভাষী এই কাবুলিওয়ালাদের সাথে ফারসি ভাষায় কথা বললে এরা প্রথমত হকচকিয়ে যাবে এবং বাঙালি বাবুর মুখে ফারসি ভাষা শুনে তারা সম্ভ্রমের লেখককে কামরায় জায়গা ও দিতে পারে।
৮.৩ ‘আলেম’ শব্দের মানে কী? লেখককে কারা, কেন ‘এক মস্ত আলেম’ ভেবেছিলেন?
উত্তর:- ‘আলেম’ শব্দের অর্থ ‘সর্বজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তি’ । অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখককে দেহরা-দুন এক্সপ্রেসের তৃতীয় শ্রেণির কামরার কাবুলিওয়ালারা ‘এক মস্ত আলেম’ ভেবেছিলেন।
বাঙালি হয়েও লেখক যেভাবে তাদের সঙ্গে ফারসি ভাষায় কথাবার্তা বলতে শুরু করেন তাতে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। তাঁদের ফারসি জ্ঞানের অভাবের সুযোগ নিয়ে লেখক গলা চড়িয়ে ঠাট্টার সঙ্গে তাচ্ছিল্যের ভাব দেখায়। কাবুলিওয়ালাদের মধ্যে একটি অল্পবয়সি ছেলে ফারসি জানায় সে লেখকের অভিপ্রায় জানতে চায়। লেখক ফারসি ভাষায় জানায় তিনি কলকাতায় যেতে চান। এরপর ইশারায় দলের লোকের অনুমতি পেয়ে ফারসি জানা ছেলেটি লেখকে কামরায় ঢুকতে বলে। লেখকের এই ফারসি জ্ঞানের কারণেই কাবুলিওয়ালারা তাকে মস্ত আলেম ভেবেছিলেন।
৮.৪ আগা-সাহেব সম্বন্ধে যা জানা গেল, সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে ট্রেনে সহযাত্রী বৃদ্ধ আগা সাহেবের সঙ্গে কথোপকথনে লেখক জানতে পারেন, আগা সাহেবের ব্যবসা শীতবস্ত্র আর হিং বিক্রি করা, আর চাষিদের টাকা ধার দেওয়া। বাংলার পল্লি অঞ্চলে, বরিশালের পটুয়াখালি বন্দরে তাঁর কেন্দ্র। বরিশালের ভাষা তিনি মাতৃভাষার মতোই বলতে পারেন, বরং কলকাতার ভাষা তার আয়ত্ত হয়নি।
৮.৫ লেখকের সামনের বেঞ্চির দুই পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে যে আলোচনা করছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো। লেখক কীভাবে সেই কথার অর্থ বুঝতে পারলেন?
উত্তর:– সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখক সম্বন্ধে সামনের বেঞ্চির দুই পাঠান সহযাত্রী যা আলোচনা করছিলেন তা এমন,
তিনি খুব বিদ্বান আর অত্যন্ত বুদ্ধিমান। ইংরেজদের লেখা সব বই তিনি যেমন পড়েন, তেমনি আবার ফারসি ও পড়েন। এভাবেই কাবুলিওয়ালাদের সম্বন্ধেও তিনি কতই না খবর জেনেছেন। এমনকি তাদের আটপৌরে কথাবার্তাও তিনি অনেকখানি আয়ত্ত করে নিয়েছেন।
লেখক পশতু ভাষা না জানলেও দুই পাঠান সহযাত্রীর কথার প্রচুর ফারসি ও আরবি শব্দের সংমিশ্রণ ছিল। এক্ষেত্রে লেখকের উর্দু ভাষার জ্ঞান তাঁকে ওদের কথার অর্থ বুঝতে সাহায্য করেছে।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১ পাঠ্য গদ্যটির ভাবের সঙ্গে ‘পথচলতি’ – নামটি কতখানি সংগতিপূর্ণ হয়েছে, বিচার করো।
উত্তর:- সাহিত্যের নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।স্রষ্টা মাত্রই তার সৃষ্টির নামকরণ সম্পর্কে অতিমাত্রায় সচেতন। সাহিত্যের নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন,- ১. বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক নামকরণ, ২. চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ, ৩. সাংকেতিক বা ব্যঞ্জনধর্মী নামকরণ।
আলোচ্য গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। গল্পের বিষয়বস্তুতে দেখা যায় লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহরা-দুন এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতা ফেরার সময় ভিড়ের কারণে ট্রেনের মধ্যম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্থান পাননি। তিনি লক্ষ করেন, তৃতীয় শ্রেণির একটি কামরা কিছু কাবুলিওয়ালা দখল করে রেখেছে। লেখক ফরাসি ভাষা জানার সুবাদে ওই কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে অনায়াসেই বার্তালাপ করতে পারেন এবং এর ফলে তিনি কামরায় অনায়াসে জায়গা করে নেন। তাঁদের সঙ্গে কলকাতায় ফেরার অভিজ্ঞতাই আলোচ্য গল্পটির কেন্দ্রীয় বিষয়। সমগ্র গল্পটাই পথের অভিজ্ঞতাতে পরিপূর্ণ তাই চলার পথের অভিজ্ঞতাই যেহেতু এই গল্পের মূল বিষয়, সেজন্য তাকে কেন্দ্র করে নামকরণটি করা হয়েছে। সুতরাং, বিষয়বস্তুর বিচারে ‘পথচলতি’ নামটি যথার্থ ও সার্থক ।
৯.২ পাঠ্য গদ্যাংশটি থেকে কথকের চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি তোমার চোখে ধরা পড়েছে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে লেখো।
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে গল্প কথকের চরিত্রের যে দিকগুলি ফুটে ওঠে সেগুলি হল, –
প্রখর স্মৃতিশক্তি:- বহুদিন আগের এক ঘটনার এমন সজীব স্মৃতিচারণে গল্প কথক সুনীতিকুমারের আশ্চর্য স্মৃতিশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
উপস্থিত বুদ্ধি:- ট্রেনের কোনো কামরায় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে জায়গা না পেয়ে কেবলমাত্র স্বল্প ফারসি ভাষার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কাবুলিওয়ালাদের দখলীকৃত কামরায় ওঠার সিদ্ধান্ত থেকে তার উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় মেলে।
বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য জ্ঞান:- গল্প কথকের বাংলা, ইংরেজি, ফারসি, আরবি, হিন্দুস্থানি, উর্দু ভাষা ও সাহিত্য জ্ঞানের পরিচয় মেলে।
আন্তরিকতা:- অজানা – অচেনা পরিবেশে ভিন্ন রুচি ও ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে একা সময় কাটানো এবং সম্পূর্ণ প্রতিকূল ও বিরুদ্ধ পরিবেশকেও নিজের অনুকূলে নিয়ে আসার মধ্যে গল্প কথকের আন্তরিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
বন্ধুত্বপরায়ণ ও সহানুভূতিশীল:- অত্যন্ত পন্ডিত মানুষ হয়েও লেখক অতি সাধারণ কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে যেমনভাবে মিশে গেছেন তাতে তাঁর চরিত্রের বন্ধুত্বপরায়ণতা ও সহানুভূতির দিকটি ফুটে উঠেছে।
পরিশেষে বলা যায় এছাড়াও গল্প কথকের সহজ, সরল, আলাপি, বৈঠকি মনোভাব রচনাটিকে সুখপাঠ্য করে তুলেছে তাই পান্ডিত্যের পাশাপাশি তিনি যে একজন সার্থক গদ্যকার তা বলবার অপেক্ষা রাখে না।
৯.৩ কথকের সঙ্গে কাবুলিওয়ালাদের প্রারম্ভিক কথোপকথনটি সংক্ষেপে বিবৃত করো।
উত্তর:- পথচলতি’ গদ্যাংশে লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহরা-দুন এক্সপ্রেসে গয়া থেকে কলকাতা ফেরার কাহিনি বর্ণনা করেছেন। ভিড় কামরায় ওঠা অসম্ভব বিবেচনা করে লেখক, কাবুলিওয়ালাদের সম্পূর্ণ দখলে থাকা ভিড়হীন কামরার হাতল ধরলেন। ভিতর থেকে পাঁচ-ছয়জন হুংকার দিয়ে বলল— সে কোথায় আসছে। এই গাড়ি কেবলমাত্র পাঠানদের জন্য। তার জন্য নয়। লেখক ফারসিতে বললেন — খালি একজন লোকের জায়গা দাও। ফারসি বুঝতে না-পেরে হতভম্ব হয়ে একজন জানতে চাইল সে কী চাইছে, তিনি আবার ফারসিতে বললেন—তারা কি ফারসি জানে ? ফারসি বলতে পারে না? ওদের মধ্যে ফারসি জানা কেউ না-থাকায় লেখক তখন গলা চড়িয়ে তাচ্ছিল্যভরে বললেন যে, তারা আফগানিস্তানের কোন এলাকা থেকে আসছে যে, ফারসিতে কথা বলার ক্ষমতা তাদের নেই। তারা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নেওয়ার পর একজন বলে, সে ফারসি জানে। তখন লেখক তাদেরকে গাড়িতে জায়গা দেওয়ার অনুরোধ করলেন। তখন সেই ছোকরা ছেলেটি জানতে চাইল, তিনি কোথায় যাবেন। জবাবে তিনি বললেন, কলকাতায় যাবেন। তারপর সে ইশারায় লেখককে ভিতরে আসতে বললেন। লেখক ভিতরে ঢুকলেন এবং তাঁকে জ্ঞানী ব্যক্তি মনে করে, যথেষ্ট সমীহ দেখিয়ে তারা একটি পুরো বেঞ্চ খালি করে দিল। ইতিমধ্যে গাড়ি ছেড়ে দিল।
৯.৪ কথক কেন বলেছেন — ‘যেন এক পশতু-সাহিত্য-গোষ্ঠী বা সম্মেলন লাগিয়ে দিলুম।’— সেই সাহিত্য সম্মেলনের বর্ণনা দাও।
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে লেখক দেহরাদুন এক্সপ্রেসে গয়া থেকে কলকাতা ফেরার কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অনেক সময় চলতি পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অকৃত্রিম আন্তরিকতা যেমন ফুটে ওঠে, তেমনই মনের রসদ, সাহিত্যের রসের স্বাদ মেলে। তেমনই গল্পে দেখা গিয়েছে, দেহরাদুন এক্সপ্রেসের পশতু-সাহিত্য-গোষ্ঠী বা সম্মেলন শুরু হয় খুশ-হাল খাঁ খট্টকের গজল বিষয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে। ঔরঙ্গজেবের সমকালীন এই কবি পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। লেখকের আগ্রহে জনৈক যাত্ৰী গজল শোনালেন। এরপর হল, আদম খান আর দুরখানির মহব্বতের কিসার কথা। আর শুধু লেখককেই বা কেন—গাড়ির সমস্ত যাত্রীরা অবধারিতভাবে মন দিয়ে সেই কাহিনি শুনল। পাঠানের গলা যদিও কর্কশ, তবে সে গুরুগম্ভীরভাবে কাহিনিটি কিছুটা গান করে আবার কিছুটা পাঠ করে সবাইকে মোহিত করে রাখল। এভাবে সেই তৃতীয় শ্রেণির গাড়িতে গানে, আবৃত্তিতে ও পাঠে যেন এক পশতু-সাহিত্য-গোষ্ঠী বা সম্মেলন হল।
৯.৫ ‘পথচলতি’ রচনায় ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যে সহজ বন্ধুত্ব ও উদার সমানুভূতির ছবিটি পাওয়া যায় তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। বর্তমান সময়ে এই বন্ধুত্ব ও সমানুভূতির প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যে দুটি বহু দূরবর্তী স্থানে বসবাসকারী একদম বিভিন্ন দুটি জাতির মানুষের সৌভ্রাতৃত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। একজন বাঙালি ও অন্যরা কাবুলি। অথচ একই পথের সহযাত্রী হয়ে এরা একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে। অন্য ভাষার গান সাহিত্য বুঝতে কারও অসুবিধে হয়না। ঘুম থেকে ওঠার পর একে অন্যের কুশল জিজ্ঞেস করে এভাবেই দুই ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির লোকের মধ্যে সহজ বন্ধুত্ব ও উদার সহানুভূতির পরিচয় মেলে।
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ও বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ কিংবা সংস্কৃতিগত দিক থেকে যারা অনেকটাই আলাদা তাদের সঙ্গে সদ্ভাব, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতির মনোভাব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। এভাবেই সমাজের শান্তি ও প্রীতি ভাব বজায় রাখা সম্ভব। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাবাদী অশুভ শক্তির অমানবিক চেষ্টা মানুষের উদারতা, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতির জাগরণে পিছু হটতে বাধ্য হবে।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse
চিঠি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Chithi Class 8 Question Answer | Wbbse
গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর | জগদীশচন্দ্র বসু | Class 8 Bengali Gacher Kotha Question Answer | WBBSE
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।