প্রশ্ন – জাতীয় আন্দোলনে সরােজিনী নাইডু বিখ্যাত কেন? আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারী সমাজের ভূমিকাকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে ৩+৫=৮
উত্তর:
প্রথম অংশ : জাতীয় আন্দোলনে সরােজিনী নাইড় : বিশ শতকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের। মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন সরােজিনী নাইডু। তিনি বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত, যেমন—
১) মহিলা সমিতি গঠন : ১৯১৫-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন এবং সামাজিক উন্নতি, নারীশক্তির উজ্জীবন ও জাতীয়তাবাদী আদর্শ সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় মহিলা সমিতি’ (WIA) প্রতিষ্ঠা করেন।
২) জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ : তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় থেকেই জাতীয় আন্দোলনে যােগদান করেন।
প্রথমত, অসহযােগ আন্দোলনকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। করলেও ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের। সভাপতি হন। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা সভাপতি।
দ্বিতীয়ত, আইন অমান্য আন্দোলনকালে তিনি গান্ধিজির ডান্ডি। অভিযানে অংশ নেন ও ধরসানা লবণগােলা অভিযান করেন।
তৃতীয়ত, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়াে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি জেলবন্দি হন।।
৩) গভর্নররূপে : তিনি স্বাধীন ভারতে ১৯৪৭-১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ। পর্যন্ত আগ্রার সংযুক্ত প্রদেশ ও অযােধ্যার গভর্নররূপে শাসনভার পরিচালনা করেন।
দ্বিতীয় অংশ, আইন অমান্য আন্দোলনে নারীসমাজ । অসহযােগ আন্দোলনের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়। (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) তুলনামূলকভাবে নারীর যােগদান ছিল বেশি।
গান্ধিজি লবণকে আইন অমান্যের বিষয়ে পরিণত করে নারীদের ছে এই আন্দোলন আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন।
যােগদান : আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের যােগদানের উল্লেখযােগ্য দিক হল—
১) লবণ আইন ভঙ্গ : ডান্ডিতে মহাত্মা গান্ধির লবণ আইন অমান্য কালে অনেক নারী যােগদান করেন ও লবণ আইন ভঙ্গ করেন এবং এরপর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার নারী লবণ আইন ভঙ্গ শুরু করে দেয়। সরােজিনী নাইডুর নেতৃত্বে ‘ধরসানা লবণ গােলা অভিযান সম্পন্ন হয়।
২) বিক্ষোভ কর্মসূচি : বিদেশি বস্ত্র ও মদের দোকানের সামনে পিকেটিং-এ সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীরাও অংশ নেয়। এর পাশাপাশি বােম্বাই, এলাহাবাদ, লাহাের, দিল্লি প্রভৃতি শহরে নারীরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
৩) কৃষক-নারীদের অংশগ্রহণ : আইন অমান্য আন্দোলনে মেদিনীপুরের ঘাটাল, কাথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের কৃষক নারীরা পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লবণ প্রস্তুত ও বিক্রয় করে।
৪) নারী সংগঠনের যােগদান : এই আন্দোলনে বােম্বাইয়ের ‘দেশ সেবিকা সংঘ’, বাংলার মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ’, কলকাতার ‘ছাত্রী সংঘ’ প্রভৃতি বিভিন্ন নারী সংগঠন যােগ দিয়েছিল।
মূল্যায়ন : আইন অমান্য আন্দোলনকালে ভারতের। নারীসমাজের যােগদানের প্রকৃতি ভারতজুড়ে একইরকম ছিল না। ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন যে, অংশগ্রহণের দিক থেকে বােম্বাইয়ের আন্দোলন ছিল সবচাইতে সংগঠিত, বাংলার আন্দোলন ছিল উগ্র এবং মাদ্রাজের নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।