প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর লেখা অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্প রয়েছে। গল্পের শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
অদ্ভুত আতিথেয়তা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer
হাতে কলমে
১.১ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম ‘বোধোদয়’ ও ‘বর্ণপরিচয়’।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও:
২.১ ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন কোন সেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে।
২.২ ‘তিনি, এক আরবসেনাপতির পটমণ্ডপদ্বারে উপস্থিত হইয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন।’ – উদ্ধৃতাংশে ‘তিনি’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘তিনি’ বলতে মুরসেনাপতির কথা বোঝানো হয়েছে।
২.৩ ‘উভয় সেনাপতির কথোপকথন হইতে লাগিল।’ – ‘উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে?উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
২.৪ ‘তাহা হইলে আমাদের উভয়ের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা।’ — প্রাণরক্ষার কোন উপায় বক্তা এক্ষেত্রে বলেছেন?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে যে ঘোড়াটি দিয়েছিলেন সেই ঘোড়ায় চড়ে মুরসেনাপতি যদি দ্রুতবেগে চলে যেতে পারেন, তাহলে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতি উভয়েরই প্রাণরক্ষার সম্ভবনা আছে।
২.৫ ‘আপনি সত্বর প্রস্থান করুন। বক্তা কেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘সত্বর প্রস্থান’ করার নির্দেশ দিলেন?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে মুরসেনাপতি আরবসেনাপতির পটমণ্ডপ থেকে নির্গত হলে তার অতিথিভাব অপগত হবে এবং সূর্যোদয় হওয়া মাত্রই আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবেন। একারণে, বক্তা আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে সূর্যোদয়ের আগেই নিজ শিবিরে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো:
৩.১ ‘তাঁহার দিভ্রম জন্মিয়াছিল।’ – এখানে কার কথা বলা হয়েছে? দিভ্রম হওয়ার পরিণতি কী হলো?
উত্তর:- কার কথা বলা হয়েছে?:-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
দিকভ্রম হওয়ার পরিণতি:-
মুরসেনাপতিকে আরবসেনা অনেকদূর পর্যন্ত অনুসরণ করলে তিনি প্রাণভয়ে দ্রুতবেগে পালিয়ে যান। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি পথ ভুল করে বিপক্ষ শিবিরে এসে উপস্থিত হন এবং আরবসেনাপতির তাঁবুতে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
৩.২ ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে।’ – এই বক্তব্যের সমর্থন গল্পে কীভাবে খুঁজে পেলে?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে দেখা যায় আরবসেনাপতি না জেনে তাঁর ঘোরতর শত্রু পিতার হত্যাকারী মুরসেনাপতিকে অতিথি হিসেবে আশ্রয় দেয়। তবে প্রকৃত সত্য জানার পর মুরসেনাপতিকে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় পেয়েও আরবসেনাপতি প্রতিশোধ নেননি। কারণ মুরসেনাপতিকে তিনি অতিথির মর্যাদা দিয়েছিলেন। আর আরবদের জাতীয় ধর্ম এই যে, তাদের প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হলেও তারা অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করেনা। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় এই গল্পটি আতিথেয়তা বিষয়ে আরবদের শ্রেষ্ঠত্বেরই নিদর্শন।
৩.৩ ‘সহসা আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল।’ – আরবসেনাপতির মুখ হঠাৎ বিবর্ণ হয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে মুরসেনাপতি দিকভ্রান্ত হয়ে শত্রুপক্ষ আরব শিবিরে অতিথি হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আরবসেনাপতির শিবিরে আশ্রয়প্রার্থী মুরসেনাপতি বিশ্রাম, আহার, জল গ্রহণের পর কিছুটা সুস্থ হলে উভয় সেনাপতি পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম, সংগ্রাম কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেন। এই সময় আরবসেনাপতি বুঝতে পারেন মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু তখন প্রতিশোধ গ্রহণ সম্ভব ছিল না। কারণ সেই সময় মুরসেনাপতি ছিলেন তাঁর অতিথি। আর আরব জাতির ধর্ম তারা অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করে না। একারণে মনের যন্ত্রণায় আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হয়ে ওঠে।
৩.৪ ‘সন্দিহানচিত্তে শয়ন করিলেন।’ * এখানে কার মনের সন্দেহের কথা বলে হয়েছে? তাঁর মনের এই সন্দেহের কারণ কী?
উত্তর:- কার মনের সন্দেহ? :-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে মুরসেনাপতির মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে।
সন্দেহের কারণ :-
আরবসেনাপতির শিবিরে মুরসেনাপতি বিশ্রাম নিয়ে ও খাদ্য গ্রহণ করে কিছুটা সুস্থ হলে উভয় সেনাপতি তাদের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম ও সংগ্রাম কৌশল বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আরবসেনাপতি বিবর্ণ মুখে সেখান থেকে উঠে যান। কিছু পরে মুরসেনাপতিকে বলে পাঠান, তিনি খুব অসুস্থ তাই উপস্থিত থেকে অতিথির সেবা করতে পারছেন না। মুরসেনাপতির আহার ও শয্যা প্রস্তুত আছে। আরবসেনাপতির এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ বুঝতে না পেরে মুরসেনাপতির মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল।
৩.৫. তাঁহার অনুসরণ করিতেছিল…’ – কে, কাকে অনুসরণ করছিলেন? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী?
উত্তর:- কে, কাকে অনুসরণ করছিলেন? :-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন।
অনুসরণের কারণ:-
আরবসেনাপতি জানতে পেরেছিলেন যে, তাঁর অতিথি মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু অতিথির ক্ষতিসাধন আরবদের ধর্মবিরদ্ধ কাজ। তাই নির্বিঘ্নে রাত কাটানোর পর মুরসেনাপতি যখন আরবসেনাপতির কাছ থেকে বিদায় নিলেন, তখন পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন।
8. প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো :
৪.১ ‘যাহাতে আপনি সত্বর প্রস্থান করিতে পারেন, তদ্বিষয়ে যথোপযুক্ত আনুকূল্য করিব।’
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে অতিথিপরায়ণ আরবজাতির প্রতিনিধি আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে এই কথাটি বলে পাঠিয়েছিল।
তাৎপর্য:-
মুরসেনাপতিকে আরবসেনাপতি নিজের শিবিরে অতিথি হিসেবে আশ্রয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পারস্পরিক কথাবার্তার সময় আরবসেনাপতি জানতে পারেন, মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু তার পরেও তিনি অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করেননি। কারণ আরবদের জাতীয় ধর্ম, তাদের প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হলেও অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করে না। তাই মনের মধ্যে রাগ ও হিংসা চেপে রেখে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির সেবা করেছেন। এমনকি পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি মুরসেনাপতিকে দ্রুতগতি সম্পন্ন ঘোড়া দিয়ে সাহায্য করেছেন।
৪.২ ‘এই বিপক্ষ শিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ আর নাই।’
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে খুব ভোরে মুরসেনাপতিকে বিদায় জানানোর সময় তাঁকে মিষ্ট কথায় সম্ভাষণ করে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে আরবসেনাপতি এই কথাটি বলেছিলেন।
তাৎপর্য:-
মুরসেনাপতি বিপদে পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করলে করলে আরবসেনাপতি তাকে আশ্রয় দেন। তাঁর আহারাদির ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে দুজনের কথোপকথনের সময় আরবসেনাপতি জানতে পারেন মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। তবে অতিথিপরায়ণতা বশত আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কোনো অনিষ্ট করেন না। মনে মনে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, সূর্যোদয় হলে পিতার হত্যাকারীকে বধ করে প্রতিশোধ নেবেন। তাই তিনি বলেছিলেন যে, এই বিপক্ষ শিবিরে মুরসেনাপতির সবচেয়ে বড়ো শত্রু আরবসেনাপতিই।
৪.৩ ‘আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।’
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:-
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি আরবজাতির অতিথিপরায়ণতা বিষয়ে এই কথাটি মুরসেনাপতিকে বলেছে।
তাৎপর্য:-
আতিথেয়তা বিষয়ে আরবজাতিই পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কেউ অতিথিভাবে আরবদের আশ্রয়প্রার্থী হলে তাঁরা সাধ্যমতো ওই ব্যক্তির সেবা করেন। সে ব্যক্তি শত্রু হলেও তার অনিষ্ট করেন না। আলোচ্য গল্পে সেই ঐতিহ্য মেনেই আরবসেনাপতি পিতৃহত্যাকারী মুরসেনাপতির অনিষ্ট করেননি। মুরসেনাপতির আহার, বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন এবং পলায়নের জন্য দ্রুতগামী অশ্বের ব্যবস্থা ও করেছেন। মুরসেনাপতির বিদায়কালে আরবসেনাপতি আপন জাতির আতিথেয়তা বিষয়ে ওই মন্তব্যটি করেছিলেন।
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৫.১ গল্পে কার আতিথেয়তার কথা রয়েছে? তিনি কীভাবে অতিথির আতিথেয়তা করেন? তাঁর সেই আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন ?
উত্তর:-
কার আতিথেয়তা? :- বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতির আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে।
আতিথেয়তার ধরণ:- যে আরবজাতি আতিথেয়তার বিচারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি, গল্পে আরবসেনাপতি সেই আরবজাতিরই প্রতিনিধি। মুরসেনাপতি শত্রু হলেও ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও আশ্রয়প্রার্থী এই অতিথিকে আরবসেনাপতি সহজেই নিজ শিবিরে জায়গা দিয়েছেন। তাঁর জন্য যথোপযুক্ত খাদ্য, বিশ্রাম ও শয্যার বন্দোবস্ত করেছেন।
আতিথেয়তা অদ্ভুত কেন? :- আশ্রয়প্রার্থী মুরসেনাপতি তাঁর পিতাকে হত্যা করেছে জেনেও আরবসেনাপতি কর্তব্যে স্থির থেকে অতিথির সেবা করেছেন। তিনি পরম শত্রুকে হাতের কাছে পেয়েও প্রতিশোধ নেওয়ার চেয়ে অতিথি সেবার ওপরই জোর দিয়েছিলেন বলে তাঁর আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ বলা হয়েছে।
৫.২ আরব – মুর সংঘর্ষের ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দাও ।
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পটি যে ইতিহাস আশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এমন কথা বলা যায় না। আলোচ্য গল্পের কাহিনির মধ্যে কোনো ঐতিহাসিক চরিত্রের উল্লেখ লেখক করেননি। সামগ্রিকভাবে একটি জাতির বিশেষ গুনকে তুলে ধরেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের রূপকার। তিনি গল্পটিতে রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। যেমন, –
(ক) সমগ্র গল্পটিতে তৎসম শব্দযুক্ত সাধুভাষার ব্যবহার করেছেন। প্রাচীন ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে যা যথাযথ।
(খ) আরবদের তাবু, পাহারার ছবি, দুই সেনাপতির যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা, লড়াইয়ের খুটিনাটি বর্ণনার প্রসঙ্গ উপস্থাপনে লেখক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যা পাঠকের মনে কাহিনির সুস্পষ্ট চিত্রপট হিসেবে ধরা পড়েছে।
(গ) গল্পের চরিত্রদের খুব বেশি কথোপকথন নেই। অথচ লেখনীর গুনে মনে হয় প্রত্যেক চরিত্রই যেন কথা বলছে।
(ঘ) যুদ্ধের অন্যতম অংশ হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহার, ঘোড়ায় চড়ে মুরসেনাপতির পালিয়ে যাওয়া ও আরবসেনাপতির পিছু নেওয়া ইত্যাদি বর্ণনার মধ্যে ইতিহাসের একটি চিত্রই যেন পাঠকের চোখে ভেসে ওঠে।
- পরিশেষে বলা যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনন্য রচনাশৈলীর মাধ্যমেই অতীত যেন বর্তমানের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে উঠেছে।
৫.৩ ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। – গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করো।
উত্তর:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে দেখে যায় এক মুরসেনাপতি দিক ভুল করে শত্রুপক্ষ আরব শিবিরে উপস্থিত হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। মুরসেনাপতিকে আশ্রয় দেওয়া হয় সেখানে তিনি খাদ্য ও পানীয় সহযোগে বিশ্রাম করেন। এরপর মুরসেনাপতি ও আরবসেনাপতির কথোপকথনের সময় স্পষ্ট হয় মুরসেনাপতি আরবসেনাপতির পিতার হত্যাকারী। একথা জেনেও আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কোনো ক্ষতি করেন না। কারণ মুরসেনাপতি তখন ছিলেন তাঁর প্রধান অতিথি। আর আরবজাতির নীতি অনুসারে প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হলেও তাঁরা অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করেননা। তাই মনে মনে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করলেও আরবসেনাপতি প্রতিশোধ না নিয়ে অতিথি সেবায় জোর দেন। পিতার হত্যাকারী জেনেও অতিথি সেবায় কোনো ত্রুটি রাখেননি। এখানেই মন্তব্যটির যথার্থতা।
৫.৪ ‘বন্ধুভাবে উভয় সেনাপতির কথোপকথন হইতে লাগিল।’ — কোন দুই সেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে? তাঁদের কীভাবে সাক্ষাৎ ঘটেছিল? উভয়ের কথোপকথনের সারমর্ম নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর:-
কোন দুই সেনাপতি? :- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
কীভাবে সাক্ষাৎ ঘটে? :- আরবসেনা মুরসেনাপতির পিছু নিলে তিনি দিক ভুল করে আরব শিবিরে এসে হাজির হন। তিনি আরবসেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আরবসেনাপতি তাকে আশ্রয় দেন। এভাবেই দুজনের সাক্ষাৎ ঘটে।
কথোপকথনের সারমর্ম:- আরবসেনাপতির শিবিরে খাদ্য, পানীয় গ্রহণের ফলে মুরসেনাপতির ক্লান্তি অনেকখানি দূর হলে দুই সেনাপতি বন্ধুর মতো গল্প করতে থাকেন। নিজেদের ও পূর্বপুরুষদের সাহস ও লড়াইয়ের গল্প করতে করতে আরবসেনাপত জানতে পারেন যে মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। একথা জানার পরে আরবসেনাপতি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে অতিথি ধর্ম পালন করেন।
৫.৫ ‘তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন।’— কার কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে নির্বিঘ্নে পৌঁছলেন? তাঁর জীবনের এই ঘটনার পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর:-
কার কথা বলা হয়েছে ? :- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
কীভাবে সপক্ষ শিবিরে পৌঁছলেন? :- আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে যে ঘোড়াটি দিয়েছিলেন সেটি আরবসেনাপতির ঘোড়ার মতোই সবল এবং দ্রুতগামী। যেহেতু মুরসেনাপতি কয়েক মুহূর্ত আগে রওনা দিয়েছিলেন, তাই আরবসেনাপতি পিছু নিয়েও তাঁকে ধরতে পারেনি। ফলে তিনি নির্বিঘ্নে নিজের শিবিরে পৌঁছেছিলেন।
পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতা:- মুরসেনাপতি দিকভ্রান্ত হয়ে আরব সেনাপতির শিবিরে আশ্রয় নিলেন। সেখানে অতিথিবৎসল আরবসেনাপতি তাঁকে যথোপযুক্ত বিশ্রাম আহারাদির ব্যবস্থা করে দেন। এরপর উভয় সেনাপতি নিজ নিজ ও পূর্বপুরুষদের বীরত্ব নিয়ে গল্প করতে থাকেন। এইসময় আরবসেনাপতি বুঝতে পারেন মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু তবুও নিজ জাতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে আক্রমণ না করে তাঁর সাথে অতিথিবৎসল আচরণ করেন ও অতিথি সেবার কোনো ত্রুটি রাখেন না। আরবসেনাপতি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন সূর্যোদয়ের পর অতিথিভাব অপসারিত হলে তিনি মুরসেনাপতিকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবেন।
৫.৬ ‘তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন….’ –কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী? শত্রুকে কাছে পেয়েও তিনি ‘বৈরসাধন সংকল্প’ সাধন করেননি কেন ?
উত্তর:-
কার কথা বলা হয়েছে? :- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
কাকে অনুসরণ করছিলেন? :- আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন।
অনুসরণের কারণ:- আরবসেনাপতি তাঁর পিতার হত্যাকারী মুরসেনাপতিকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে অনুসরণ করছিলেন।
কাছে পেয়েও প্রতিশোধ না নেওয়ার কারণ:- শত্রু মুরসেনাপতিকে হাতের মুঠোয় পেয়েও আরবসেনাপতি তাঁকে আক্রমণ করেননি কারণ, তিনি ছিলেন তাঁর অতিথি। আর আরবদের নীতি অনুযায়ী তাঁরা প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হলেও অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করেন না।
৬. নীচের শব্দগুলির দলবিশ্লেষণ করে মুক্তদল ও রুদ্ধদল চিহ্নিত করো :
সংগ্রাম, অশ্বপৃষ্ঠ, দণ্ডায়মান, করমর্দন, তৎক্ষণাৎ
সংগ্রাম – সং (রুদ্ধদল) – গ্রাম্ (রুদ্ধদল)
অশ্বপৃষ্ঠ – অশ্ (রুদ্ধদল) – শো (মুক্তদল) – পৃষ্ (রুদ্ধদল) – ঠো (মুক্তদল)
দন্ডায়মান – দন্ (রুদ্ধদল) – ডায় (রুদ্ধদল) – মান্ (রুদ্ধদল)
করমর্দন – কর্ (রুদ্ধদল) – মর্ (রুদ্ধদল) – দন্ (রুদ্ধদল)
তৎক্ষণাৎ – তৎ (রুদ্ধদল) – খ (মুক্তদল) – ণাৎ (রুদ্ধদল)
৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :
৭.১ আরবেরা তাঁহার অনুসরণে বিরত হইলে, তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরের উদ্দেশে গমন করিতে লাগিলেন। (জটিল বাক্যে)
উত্তর:- যখন আরবেরা তাঁহার অনুসরণে বিরত হইল, তখন তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরের উদ্দেশ্যে গমন করিলেন।
৭.২ আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আবরদিগের তুল্য নহে। (ইতিবাচক বাক্যে)
উত্তর:- আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর সব জাতি অপেক্ষা আরবজাতি অতুলনীয়।
৭.৩ দ্বারদেশে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তিনি সজ্জিত অশ্বের মুখরশ্মি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান আছেন। (যৌগিক বাক্য)
উত্তর:- দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন এবং দেখিলেন তিনি সজ্জিত অশ্বের মুখরশ্মি ধারণ করিয়া দন্ডায়মান আছেন।
৭.৪ এই বিপক্ষশিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ আর নাই। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর:- এই বিপক্ষশিবির – মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ কি আর কেহ আছে?
৭.৫ তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশস্থানে উপস্থিত হইলেন। (না-সূচক বাক্যে )
উত্তর:- স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশস্থানে উপস্থিত হইতে তিনি কোনোপ্রকার বিঘ্নের সম্মুখীন হইলেন না।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।