বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা:- 

“সভ্যতা ধরেছে আগেই বিজ্ঞানের হাত।
রাত তাই দিন হল, দিন হল রাত।” 

‘বিজ্ঞানমুচ্ছিষ্টম ইদম জগৎ’ অর্থাৎ বিজ্ঞানের দ্বারা এ জগৎ উচ্ছিষ্ট। সভ্যতা যদি হয় যন্ত্র, তবে বিজ্ঞান সেখানে যন্ত্রী। কিন্তু, বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও সভ্যতার কপালে দুশ্চিন্তার কলঙ্করেখা। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মাঝে একদিকে সৃজন, অন্যদিকে ধ্বংস। বিজ্ঞানের মারণ যজ্ঞে ত্রস্ত মানুষ তাই প্রশ্ন তুলেছে—‘বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?’ 

বিজ্ঞান : কাল থেকে কালান্তরে:- মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখল, প্রকৃত অর্থে সেদিনই সভ্যতার প্রদীপ জ্বলল। সভ্যতার ক্রমবিকাশে দেখা দিল নব নব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে নিজের প্রয়ােজনে কাজে লাগিয়ে, নিজ উদ্দেশ্যসাধন করছে মানুষ। বিজ্ঞান এই অর্থে মূলত মানবকল্যাণমুখী। বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ আজ পৃথিবীর সমস্ত অজ্ঞাত কুসংস্কার ও জড়তা কাটিয়ে উঠেছে। জীবনে এসেছে তাদের অফুরন্ত কর্মশক্তি, অপর্যাপ্ত গতিছন্দ। বিজ্ঞান আজ ঊষর মরুকে করেছে জলসিক্ত উর্বর, পৃথিবীকে করেছে শস্যশালিনী। নবীন জগৎ সন্ধানে’ আজ মানুষ চলছে ‘মেরু-অভিযানে। 

বিজ্ঞান বনাম মানুষ:- জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধি অতিযান্ত্রিকতার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। অতিরিক্ত বিজ্ঞান-নির্ভরতা মানুষকে পঙ্গু করেছে। সে হয়ে উঠেছে আরামপ্রিয়, বিলাসী ও কর্মবিমুখ। যন্ত্রসভ্যতার যান্ত্রিকতায় মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারাতে বসেছে।

বিজ্ঞানের অশুভ প্রয়ােগ:- বাঘ বাঘকে খায় না, কিন্তু বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতায় পাশবিকতা রয়েছে, যে-বিজ্ঞান নিয়ত মানুষের কল্যাণকর্মে রত, সেই বিজ্ঞানকেই মানুষ কাজে লাগিয়েছে এই সুন্দর সৃষ্টিকে ধ্বংসের কাজে। খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল, মারণাস্ত্রের আবিষ্কার, নিত্যনতুন অশুভ আণবিক শক্তির উদ্ভাবনে মানুষ এখন এত পরিপক্ক যে, একটি ছােট্ট বােতাম টিপলেই মুহূর্তে পৃথিবীর একটি বৃহত্তম অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। হিরােসিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বােমার যে বিষময় পরিণতি, তা আজও বিশ্ববাসী ভুলতে পারেনি। 

বিজ্ঞান ও ধ্বংস:- যে-বিজ্ঞান জীবনদায়ী ওষুধ ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে মানুষকে নবজীবন দান করেছে, সেই বিজ্ঞানই আবার মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে জীবনকে ধ্বংসের কাজে ব্যাপৃত থাকছে। রাসায়নিক নানা রকমের দ্রব্যের বিষক্রিয়ার প্রভাবে পৃথিবীর বায়ু, জল, মৃত্তিকা আজ দূষিত। | 

মঙ্গল ও শুভবুদ্ধি:- বিজ্ঞানের ধ্বংসলীলার জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়, দায়ী মানুষ। বিজ্ঞান যদি মানুষের শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে বিজ্ঞান কেবলমাত্র মানবকল্যাণী রূপে মানুষের ভৃত্য হয়েই থাকবে। আইনস্টাইন বলেছেন, ‘Religion without science is lame, science without religion is dead.’ তাই, শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত বিজ্ঞান মানবকল্যাণে ব্রতী হয়ে আশীর্বাদ রূপে দেখা দেবে। বর্তমান সভ্যতার যে-অগ্রগতি তা তাে বিজ্ঞানেরই দান। সুতরাং, শুভবুদ্ধি দ্বারা চালিত বিজ্ঞান মানুষের সমাজ-সভ্যতার ক্ষেত্রে কল্যাণের বার্তাই বয়ে আনে, সে-কথা আজ প্রমাণিত সত্য।

উপসংহার:- মানুষ যদি মানুষ হয়, বিজ্ঞানকে যদি মানবকল্যাণে প্রয়ােগ করতে পারে, তাহলে বিজ্ঞান হবে আশীর্বাদ। আর যদি অমানুষ হয়ে বিজ্ঞানকে ধ্বংসের কাজে প্রয়ােগ করে, তাহলে বিজ্ঞান হয়ে উঠবে অভিশাপ। এজন্য জনৈক কবি বিজ্ঞানের হয়ে দুঃখ করে বলেছেন 

“বিজ্ঞান বলে দোষ কি আমার 
কেন মিছে দাও গালি। 
প্রয়ােগের গুণে সুন্দর মুখে 
তােমরা মাখাও কালি।”

আরো পড়ুন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্ৰসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

17 thoughts on “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা”

Leave a Comment