প্রবন্ধ রচনা – বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ
ভূমিকা:- সৃষ্টির আদিলগ্নে পৃথিবী ছিল একটি গ্যাসীয় পিণ্ড। ক্রমশ ধীরে ধীরে তাপ হারিয়ে কঠিন হয় এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য সৃষ্টি হয় অনুকূল পরিবেশ। পরিবেশের সমস্তপ্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মােকাবিলা করতে গিয়ে মানুষ তার মনের কৌতুহলবশতই একদিন পাথরে পাথরে ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুনের আবিষ্কার করল। এভাবেই বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ ঘটল। তখন থেকেই শুরু হল মানুষের হাত ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথচলা।
পৃথিবীর বক্ষজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল নানান বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা। মানুষ প্রকৃতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিক সূত্রের যেমন সন্ধান পেয়েছে, তেমনই প্রযুক্তির জগতেও বিচক্ষণতার দ্বারা অসাধ্যসাধন ঘটিয়েছে। গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখের মতাে অসামান্য প্রতিভাধর বৈজ্ঞানিকদের উদ্ভাবনী কৌশল এবং মৌলিকতার জোরে মানুষ মেধা ও মননের জয়ধ্বনি ঘােষণা করেছে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমূল । পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের দৌলতে সমগ্র দুনিয়াটা মানবজগতের হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছে। এভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা যেমন নিজেকে বিস্তারিত করেছে; তেমনভাবে কিছু ক্ষমতালােভী, স্বার্থপর মানুষের জন্য বিজ্ঞান পরিবেশ ও প্রকৃতিকে আজ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ ও বিপন্ন পরিবেশ:- অক্সিজেন গ্রহণ করেই প্রাণীজগৎ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে পৃথিবীর বুকে। মানুষের নানা কার্যকলাপের কারণে পরিবেশ আজ দূষিত। শিল্পবিপ্লবের ফলে অরণ্য ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানায় তেল, গ্যাসের ব্যবহার, কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে নানাভাবে দূষিত করে চলেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে ব্যবহৃত যানবাহনে কার্বন ডাইঅক্সাইড ,কার্বন মনােক্সাইডের মতাে ক্ষতিকারক গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে আজ খুব বেশি। এইসমস্ত বিষাক্ত গ্যাস ওজোন গ্যাসের আচ্ছাদনে গর্ত তৈরি করেছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিনের-পর-দিন বেড়েই চলেছে। মেরুর বরফ বেশিমাত্রায় গলে গিয়ে বাড়তি জল সমুদ্রে পড়ে সমুদ্রজলের উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুন্দরবনের ঘােড়ামারা দ্বীপের বেশকিছু অংশ এই কারণেই জলের নীচে চলে গেছে। পরিবেশদূষণের জন্য ঋতুবৈচিত্র্য ক্রমশ নষ্ট হয়ে। যাচ্ছে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না-হওয়া, অত্যধিক গরম, টাইফুন ও সাইক্লোনের মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগের একমাত্র কারণ এই পরিবেশদূষণ। এভাবে চলতে থাকলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীজুড়ে দূষণজনিত মড়ক দেখা দেবে।
পরিত্রাণের পথ:- পরিবেশের ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তিকে নতুনভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন। পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি স্থাপন করে ইকো-ফ্রেন্ডলি টেকনােলজি’-র মতাে – প্রযুক্তি স্থাপন করতে চাইছেন তাঁরা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে সূর্যের আলােক শক্তি এবং পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না এমন বিকল্প শক্তিরও খোঁজ চলছে।
উপসংহার:- বর্তমানে দেশে দেশে পরিবেশকে বাঁচানাের কঠের ৩ আইনকানুন প্রয়ােগ করা শুরু হলেও, সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত আমরা -এমন দাবি করা সম্পূর্ণ অসংগত। এই আক্ষেপ ও হতাশা থেকেই কবি জীবনানন্দ লিখেছিলেন, “আমাদের এই শতকের/বিজ্ঞান তাে সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু—বেড়ে যায় শুধু;” কখনােই ভুললে চলবে না যে পরিবেশ ও বিজ্ঞান উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করেই উন্নতির চুড়ােয় পৌছোনো সম্ভব। এ কাজে শুধু বিজ্ঞানীরা নয়, সাধারণ মানুষও যদি হাত বাড়িয়ে দেয় তবেই আগামী দিনে একটি সুন্দর পৃথিবীকে আমরা পাব।
আরো পড়ুন
বাংলা প্রবন্ধ রচনা – বিজ্ঞান ও কুসংস্কার
পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্ৰসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।