চার্লস উইলকিনস ও পানন কর্মকার বিখ্যাত কেন? স্কুল বুক সােসাইটির উদ্যোগে শিক্ষারবিস্তারকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?

প্রশ্ন – চার্লস উইলকিনস ও পানন কর্মকার বিখ্যাত কেন? স্কুল বুক সােসাইটির উদ্যোগে শিক্ষারবিস্তারকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে? ৩+৫ Marks | Class 10

উত্তর – প্রথম অংশ : চার্লস উইলকিনস্ ও পঞ্চানন কর্মকার : প্রাচ্যবাদী পণ্ডিত চার্লস উইলকিনস্ পঞ্চানন কর্মকারের সহযােগিতায় বাংলা মুদ্রাক্ষর খােদাই এবং অক্ষর ঢালাইয়ের কাজ করেন। তার তৈরি বাংলা মুদ্রাক্ষরের সাহায্যেই হ্যালহেড তার বাংলা গ্রামার বইটিতে উদাহরণরুপে বাংলা মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন। তাই তিনি বাংলার গুটেনবার্গ’ নামে পরিচিত।

বাংলা মুদ্রাক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে উইলকিনসের সহযােগী ছিলেন। হুগলি নিবাসী শিল্পী পানন কর্মকার। তাঁর তৈরি মুদ্রাক্ষর হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীকালে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘কর্নওয়ালিস কোড’-এর বাংলা সংস্করণেও তার তৈরি উন্নত বাংলা মুদ্রাক্ষর ব্যবহার করা হয়। তার প্রচেষ্টাতেই বাংলা হরফ নির্মাণ একটি স্থায়ী শিল্পে পরিণত হয়।

দ্বিতীয় অংশ : স্কুল বুক সােসাইটির উদ্যোগে শিক্ষার বিস্তার : উনিশ শতকে খ্রিস্টান মিশনারি ও ব্যক্তিগত এবং সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি ছাপাখানা থেকে উৎপাদিত গ্রন্থসমূহের মাধ্যমেও শিক্ষার বিস্তার ঘটে। ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘স্কুল বুক সােসাইটি’র (১৮১৭ খ্রি.) উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষায় স্কুল-পাঠ্য পুস্তক ছাপানাে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে তা সরবরাহ করা। এর 

বিভিন্ন দিকগুলি হল— 

১। নিজস্ব ছাপাখানা : স্কুল বুক সােসাইটি শিক্ষার বিস্তারের উদ্দেশ্যে কলকাতার সার্কুলার রােডে নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ছাড়া ও শ্রীরামপুর মিশন প্রেস সহ অন্যান্য প্রেসেও বই ছাপানাের ব্যবস্থা করেছিল। 

২। বাংলা ভাষার প্রাধান্য : এই সােসাইটি অন্যান্য ভাষার পুস্তকের পাশাপাশি বাংলা ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে। এই সােসাইটি প্রথম চার বছরে (১৮১৭-২১ খ্রি.) বাংলা ভাষাতে ১৯টি বইয়ের ৭৯,৭৫০ টি কপি মুদ্রণ ও বিপননের ব্যবস্থা করে।। 

৩। মুদ্রণের মানােন্নয়ন : বাংলা ভাষার উন্নতিসাধন এবং বাংলা মুদ্রণের মানােন্নয়নের ক্ষেত্রে এই সােসাইটির উদ্যোগ ছিল প্রশ্নাতীত। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে ইংরেজি প্রথানুযায়ী যতিচিহ্নের ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলা গ্রন্থের মুদ্রণে ছবি, মানচিত্র, নকশার ব্যবহার শুরু করে।

৪। জ্ঞানচর্চার প্রসার : বাংলার ছাপাখানার ইতিহাসে স্কুল বুক সােসাইটির উদ্যোগে বাংলায় ইতিহাস, ভূগােল, জ্যোতির্বিদ্যা পদার্থবিদ্যা, অভিধান, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা শুরু হয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তনের ফলে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের কাছে পাশ্চাত্যের জ্ঞানজগতের দরজা উন্মােচিত হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment