একটি গাছ একটি প্রাণ
ভূমিকা:
“একটি গাছ, একটি প্রাণ—কথার কথা নয়,
তরু বিনে হয় যে মরু, জীবন সংশয়।”
বৃক্ষলতা পৃথিবীর আদি সন্তান। বৃক্ষতলে মানুষের প্রথম আবির্ভাব। আবার দাবানলের আগুনে মানুষ দীক্ষা নিয়েছে বিজ্ঞানের। কিন্তু সভ্য মানুষের বর্বর লােভ বৃক্ষ ও তরুলতার জগৎকে ধ্বংস করতে উদ্যত। বৃক্ষ নাশ করে সভ্য মানুষ শহর নামক ইট-পাথরের জঙ্গল তৈরি করেছে। বৃক্ষ নিয়েছে বিদায়। যন্ত্রসভ্যতার দূষণে মানুষ-প্রাণীর সঙ্গে তরুলতার জগতেও নেমে এসেছে বিপদের অশনি সংকেত। আজ তাই নতুনভাবে ভাবার সময় এসেছে, নগরায়ণ, শিল্পায়নের জন্য অরণ্য ধ্বংস করা কি উচিত কাজ হচ্ছে?
গাছ ও প্রাণ : প্রাণধারণের পক্ষে বৃক্ষ অপরিহার্য। যদি কোনাে কারণে আমাদের এই সবুজ পৃথিবী গাছ-শূন্য হয়ে পড়ে, তা হলে এই পৃথিবী থেকে আমাদের সকলের বাস উঠে যাবে। কারণ, তরুই আমাদের প্রাণ-প্রদীপটিকে জ্বালিয়ে রেখেছে বলা যায়।
বেঁচে থাকা এবং গাছ : বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রতি মুহূর্তে অক্সিজেন গ্যাস গ্রহণ করছি এবং নিশ্বাস ছাড়ার সময় ত্যাগ করছি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস। এক হেক্টর আয়তনের ঘন অরণ্য বছরে প্রায় চার টন ওজনের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস শুষে নেয় ও প্রায় দু-টন বিশুদ্ধ অক্সিজেন। বায়ুমণ্ডলে সরবরাহ করে। এ ছাড়া বায়ুতে উপাদান হিসেবে ৭৮.০৩% নাইট্রোজেন গ্যাস গাছ নিজের প্রয়ােজনে কাজে লাগায়। সুতরাং বােঝা যাচ্ছে, জীবজগতের পরিবেশরক্ষায় গাছ কতখানি প্রয়ােজনীয়। অক্সিজেন গ্যাস না-পেলে আমাদের হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে।
বৃক্ষহনন নয়: আমাদের এই ভারতভূমি একসময় বৃক্ষরাজিতে ছিল সমৃদ্ধ। লােকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই অরণ্যভূমি কেটে তৈরি করে চলেছি বসতি। জ্বালানি সংগ্রহের জন্য এবং অনেক সময় শৌখিন আসবাব ও দরজা-জানালার জন্য গাছের পর গাছ কেটে চলেছি।
পরিবেশরক্ষায় গাছ : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে গাছ। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য তৈরি হয়েছে বনসৃজন প্রকল্প। নির্বিচারে গাছ কাটা নয়, নির্বিচারে গাছ লাগিয়ে যাওয়াই হবে এখন আমাদের প্রধান কাজ।
জনবসতির অনুপাতে গাছের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়া দরকার। গাছ না থাকলে বর্ষা হওয়া কঠিন। গাছই টেনে আনে জলভরা মেঘ, আনে মৌসুমি বাতাসের শীতলতা। মৌসুমি বৃষ্টির কল্যাণেই আমাদের দেশে চাষবাস হয়।
আরও গাছ চাই : আমাদের ভারতে অরণ্যের পরিমাণ হল মােট স্থলভাগের ২২.৭%। কিন্তু পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জনসংখ্যার অনুপাতে এই অরণ্য যথেষ্ট নয়। তাই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং পরিবেশকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য দরকার অরণ্য সৃষ্টির। কেবল মানুষ নয়, জীবকুলকে বাঁচাতে হলেও এই গাছের প্রয়ােজন।
উপসংহার : এই পৃথিবীতে সুস্থভাবে, সুখে-শান্তিতে বাঁচতে হলে আমাদেরকে সবুজায়নের দীক্ষা নিতে হবে। গাছপালার প্রতি গভীর অনুরাগ সৃষ্টি করতে হবে। অসুস্থ পৃথিবীকে সুস্থ করার সংকল্প দিকে দিকে প্রচার করতে হবে “গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান।” গাছই আমাদের প্রাণ, আমাদের বাঁচার মন্ত্র। তাই সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে—
“একটি গাছ, একটি প্রাণ—এই মন্ত্র শিখে নিন।
গাছ লাগিয়ে শােধ করে যাও গাছের প্রতি জীবন-ঋণ।”
আরো পড়ুন
বিশ্ব উষ্ণায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
নগরায়ণ বনাম সবুজায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
আমাকে এই প্রবন্ধটি খুব ভালো লেগেছে