একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ঝড়ের রাত

ভূমিকা : ঝড়ের পূর্বাভাস : দিনটি ছিল অক্টোবরের এক মায়াবী সন্ধ্যা, পুজো আসন্ন। শরতের হাওয়ায় দূরাগত শীতের আমেজ। বাতাস ছিল শিউলির গন্ধে ভরা। এমনি এক সন্ধ্যায় টিভির পর্দায় ভেসে উঠল ‘বিশেষ সাইক্লোন সতর্কবার্তা’। আবহাওয়া দফতরের বিশেষজ্ঞ জানালেন, বঙ্গোপসাগরে বিদ্রোহী মেঘপুঞ্জের সম্মেলনবার্তা। সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে ধেয়ে আসছে সাইক্লোন। সঙ্গে নিয়ে আসছে বিপদের আশঙ্কা। ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় একশাে কিলােমিটারের বেশি। আমরা উদবিগ্ন বােধ করলাম। রাতের খাওয়া শেষ করে যখন বিছানায় ঘুমােতে গেলাম তখন নিকষ কালাে কষ্টিপাথরে মতাে আকাশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দেখতে পেলাম কিঞ্চিৎ বিদ্যুৎ ঝলক। 

ভৈরবের বজ্রনির্ঘোষ : চারিদিকে দমাদ্দম দরজা-জানলা পড়ছে। বাইরে গাছেদের মাথা নুয়ে ছুটে চলেছে যেন এক পাগলা হাতি। অন্ধকারে সব কিছু ভালাে দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আকাশ বিদীর্ণ করা বজ্রের শব্দ আর বিদ্যুতের ঝলকানি। সেইসঙ্গে দমকা বৃষ্টি। আকাশে-বাতাসে চারদিকে এক মত্ত-মাতালের দাপাদাপি। ঝােড়াে বাতাসের সঙ্গে অনাহুত বৃষ্টি ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে। বৃষ্টির জলের ঝাপটায় ভিজে যাচ্ছে বিছানা। ততক্ষণে উন্মাদ হাওয়ার সঙ্গী জলের কণারা আমায় ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। ঠান্ডায় শিরশির করে উঠল শরীর। শিকলে আটকানাে জানলাগুলাে তখন বাইরের ঝড়ের আগমনবার্তার সংকেত করে চলেছে খটখট শব্দ করে। হঠাৎই জানলার ফঁকফোকর দিয়ে বিদ্যুতের শতধাবিভক্ত জিভ বজ্রনির্ঘোষে জানিয়ে দিয়ে গেল খ্যাপা ভৈরবের তাণ্ডব বার্তা। সেই মন্দ্রিত ধ্বনিতে আতঙ্কিত হয়েই মনে হয় নিভে গেল ঘরের নৈশদীপ। অন্ধকারে শুয়ে শুনতে লাগলাম সহস্র নাগিনির দীর্ঘ হাহুতাশ।

রাতের রুদ্ররুপ : দরজার বাইরে ঝড়ের তাণ্ডবলীলা বুঝতে পারলাম। প্রবল বেগে বয়ে চলেছে ঝড়। অন্ধকারের বুক থেকে গুমরে উঠছে ঝড়ের গর্জন। যেন আদিম অদেখা কোনাে দানবের দাপাদাপি। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের অপার্থিব আলােয় ঝলসে উঠছে প্রলয়ের ক্ষণস্থায়ী চলচ্চিত্র। সেই মুহূর্তে প্রাচীন ঋষির অনুভূতি সারিত হয়ে উঠছে মনের মধ্যে, হে রুদ্র, তােমার দক্ষিণ ও বাম পদবিক্ষেপে জগতের জন্ম ও মৃত্যু প্রতিফলিত হয়ে ওঠে …। প্রলয়নৃত্যরত নটরাজের সেই রুদ্র, ভয়াল অথচ সুন্দর প্রকাশের সামনে আমি করজোড়ে নিজের অজান্তেই বলতে থাকলাম—‘রুদ্র যত্তে দক্ষিণম মুখম …।’

ভােরের অপেক্ষা : আমি অধীর আগ্রহে নিদ্রাহীন চোখে অপেক্ষা করতে থাকলাম ভােরের জন্য। মনে জেগে উঠল রবীন্দ্রনাথের বিশেষ একটি গান— 

“যেতে যেতে একলা পথে
নিভেছে মাের বাতি
ঝড় উঠেছে, ওরে এবার ঝড়কে পেলেম সাথী।” 

উপসংহার : সে রাত চলে গেল। পরের সকালে লন্ডভন্ড বিধ্বস্ত প্রকৃতির সঙ্গে আমরা আবিষ্কার করলাম এই প্রলয়লীলায় ধ্বংস হয়ে গেছে ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সে খবর, সেই দুর্বিপাক আজ ইতিহাস হয়ে গেছে, কিন্তু আজও সেই অন্ধকারের মধ্যে ঝড়ের স্মৃতি আমি কখনও ভুলতে পারিনি। জার্মান কবি রিলকে ঝড়ের গর্জনের মধ্যে শুনতে পেয়েছিলেন ঈশ্বরের বাণী। সে রাতে আমি অনুভব করেছিলাম আদিম প্রকৃতির রুদ্ররূপ। সেই ভয়াল সুন্দর উদ্দামতা, যা ছিল অন্ধকারের রহস্যমােড়কে আবৃত, সে যেন আজ বহু যুগের ওপার হতে অপরূপ এক ভয়ংকর বেশে দেখা দিল। আজও সে রাতের রূপ, ধ্বনি, ঘ্রাণ স্ফটিকের আকারে স্মৃতির গভীরে রয়ে গেছে।

আরো পড়ুন

বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি নির্জন দুপুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

2 thoughts on “একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l”

  1. I have a project related to this topic.I look for this paragraph.At last,I found this website.In addition to i read the entire paragraph.The language here used is lucid.Everyone can understand and enjoy to read.Thankyou to all of you..

    Reply
  2. I have a project related to this topic.I look for this paragraph.At last,I found this website.In addition to i read the entire paragraph.The language here used is lucid.Everyone can understand and enjoy to read.Thankyou to all of you..

    Reply

Leave a Comment