একটি নির্জন দুপুর
ভূমিকা :
“নীরব মধ্যাহ্ন বেলা,—শব্দহীন নিঃসাড় ভুবন,—
কেহ কোথা নাই—
অকস্মাৎ মর্মরিল তরুশাখে মন্থর পবন
চমকিয়া চাই।”
—হুমায়ুন কবির
নির্জন কোনাে দুপুরের কথা ভাবতে গেলে, এই ছবিটাই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কবি যখন এই কবিতা লিখেছিলেন, তখনও শহরে ও গ্রামে ছিল দীর্ঘ দুপুরের নিস্তব্ধতা, ছিল নির্জনতা, ছিল পাখির ডাক। কালের ব্যবধানে আজ ওই দুপুর থাকলেও, তার নির্জনতা নিঃশব্দে হয়ে গেছে অদৃশ্য। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে দ্বিপ্রহরের নিস্তব্ধতা, কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে স্তব্ধ দুপুরের মুহূর্তগুলি।
নির্জনতা নেই: গ্রামে-গঞ্জে শহরে-নগরে এখন হই-হট্টগােল খুবই বেড়ে গেছে। শহর কলকাতা কোনাে সময়ের জন্যই এখানে নিস্তব্ধ থাকে না। ভারী ভারী ট্রাক বিকট শব্দ করে ছুটে চলেছে শহরের পথে পথে। কোলাহল উঠছে পদাতিক জনস্রোতের ভিতর থেকেও | শান্ত, নীরব, নির্জনতা শহর কলকাতায় আজ আর দেখা যায় না। তা কেবল কলকাতাই-বা কেন, মফসসল শহরেরও একই হাল।
নির্জনতার স্বরুপ : নির্জন একটি দুপুরের খোঁজে যদি আমরা গ্রামে গিয়ে হাজির হই, সেখানেও তেমনি নির্জন দুপুর আমরা পাই না। ধু-ধু মাঠ, খাঁ-খাঁ দুপুর, চিলের ডাক, শাঁ-শাঁ বাতাস ইত্যাদিও ইদানীং দুর্লভ হয়ে গেছে পল্লি-পরিবেশে। যে নিবিড় সবুজ ছােটো ছােটো গ্রামে কোকিলের কুহুরব, ঘুঘুর ডাক কিংবা টিয়াপাখির ট্যা টা শােনা যেত, এখন তা নেই। শােনা যায় না উদাস বাঁশির সুর।
দুপুরের নির্জনতা : গ্রীষ্মের দুপুর একরকম, শীতের দুপুর অন্য রকম। শরতের দুপুরে সাদা মেঘের ভেলা দেখতে দেখতে মনের ভিতর যে আনন্দ ও আবেগের লহর ওঠে, বসন্তকালের দুপুরে ঠিক তেমনটি হয় না । বসন্তের দুপুরে শােনা যায় ভ্রমরের গুঞ্জন, নানারকম ফুলের সৌরভ এবং বসন্তসখা কোকিলের কুহুতান, মুখরিত বাতাসের ছোঁয়ায় দেহ-মনে রোমাঞ্চ জাগে। বর্ষা ঋতুর দুপুর দেখা দেয় বৃষ্টির চাদর গায়ে দিয়ে। শােনা যায়, মৃদু মৃদু মেঘ গর্জন। বর্ষার দুপুর বেশ নির্জন, রিমঝিম বৃষ্টির সংগীতে যে-সময় মন হয়ে যায় উদাস।
নির্জনতার কাব্যিক অনুভব : দুপুর যে ঋতুরই হােক-না-কেন, তার ভিতর কেমন যেন এক মন কেমন-করা নির্জনতা আছে। আছে বেশ একটি আলগা অবকাশ। নিজের শৈশবের স্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথও এইরকমই এক ছবি এঁকেছেন, যখন তিনি দুপুরের নির্জনতায় ছাদে উঠে একান্ত নির্জনে শহর কলকাতার ভিন্নতর এক ছবি দেখতেন। মাথার ওপর আকাশব্যাপী খরদীপ্তি, তারই দুরতম প্রান্ত হতে চিলের সূক্ষ্ম তীক্ষ ডাক পৌঁছােত কিশাের রবীন্দ্রনাথের কানে। গলির ভিতর শােনা যেত ফেরিওয়ালার ডাক। সেই নিস্তব্ধ নির্জন দুপুরে কিশাের কবির মন কেমন যেন উদাস হয়ে যেত।
উপসংহার : সেই পুরােনাে পরিবেশ এখন নেই। সেই পরিবেশ না-থাকুক, প্রতিটি ঋতুর হাত ধরেই আমাদের কাছে এসে আজও হাজির হয়, মন কেমন-করা উদাস নির্জন দুপুরগুলি। ডাকঘরের অমল যে ঘণ্টাধ্বনি শুনেছিল, তা আজও বেজে চলেছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, সময় বসে নেই, সময় চলে যাচ্ছে। ছুটির দিনে নিঃসঙ্গ দ্বিপ্রহর আজও হাতছানি দেয়। দুপুরের মুহূর্তগুলি তখন অন্তরঙ্গ হয়ে ধরা দেয়। সেই স্মৃতিমেদুর দুপুরগুলির মতাে মধুর আর কী-ই বা আছে!
আরো পড়ুন
একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
শীতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।