গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম কাকে বলে | ওই পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটি গুলি লেখ l 2+3+3
উত্তর :
গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম :
শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য যে পাঠক্রমের মাধ্যমে কতকগুলি বিষয়ে পুথিগত জ্ঞানদানের ব্যবস্থা করা হয়, তাকে বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম বা গতানুগতিক পাঠক্রম বলা হয়। এই জাতীয় পাঠক্রম পুরােপুরিভাবে ভাষামূলক এবং পুথিগত বিদ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। বই পড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকার বক্তৃতা শােনা, লেখা প্রভৃতি কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এতে শিশুর সক্রিয়তার কোনাে স্থান নেই। এই পাঠক্রম অভিভাবক-অভিভাবিকা, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা রাষ্ট্রের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই গঠন করা হয়। শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও সামর্থ্যের প্রতি একেবারেই দৃষ্টি দেওয়া হয় না।
গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যসমূহ :
[1] বৌদ্ধিক বিকাশ : গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটলে, সে যে-কোনাে বিষয় সহজে চিন্তা করতে বা বিচারবিশ্লেষণ করতে পারবে এবং তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের সামর্থ্য সৃষ্টি হবে।
[2] বিষয় বা তথ্যের সমন্বয়সাধন : গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রমে কতকগুলি বিষয় বা তথ্যকে সমন্বিত করে, শিক্ষার্থীর কাছে উপস্থিত করা হয়। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিষয়গুলি পাঠ করে এবং তথ্যগুলির সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে।
[3] ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা : এই জাতীয় পাঠক্রম অধ্যয়ন করার পর শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয় এবং সকল শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
[4] অপরিবর্তনীয় :এই ধরনের পাঠক্রম অনমনীয়, স্থির এবং অপরিবর্তনীয়। কেবলমাত্র শ্রেণিকক্ষের মধ্যে অনুশীলনের জন্যই এই ধরনের পাঠক্রম প্রণয়ন।
[5] জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন : গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম প্রকৃতপক্ষে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, বরং এটি অনাবশ্যক তথ্যে ভারাক্রান্ত।
[6] নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক : গতানুগতিক বা বিষয়ভিত্তিক পাঠক্রম নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই প্রণয়ন করা হয়। ফলে ছাত্রছাত্রীরা ওই পাঠক্রমের বিষয়গুলিকে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী অধ্যয়ন করে।
গতানুগতিক বা বিষয়ভিত্তিক পাঠক্রমের ত্রুটিসমূহ :
[1] ভাষাগত ও গ্রন্থনির্ভর : গতানুগতিক বা বিষয়ভিত্তিক পাঠক্রম ভাষাগত ও গ্রন্থনির্ভর। এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীকে বাস্তবের উপযােগী করে গড়ে তুলতে পারে না।
[2] সক্রিয়তা বর্জিত : এই ধরনের পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার কোনাে স্থান নেই। শিক্ষার্থীর ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মনের বিকাশের সঙ্গে যে অন্যান্য বিকাশগুলির (যেমন—দৈহিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক, নৈতিক ইত্যাদি) প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে—সে-কথা একেবারেই স্বীকৃত হয়নি।
[3] শিক্ষার্থীর চাহিদা, আগ্রহ উপেক্ষিত : গতানুগতিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর অভিভাবক, শিক্ষক বা রাষ্ট্রের চাহিদার কথা মাথা রেখেই গঠিত হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা, আগ্রহ ইত্যাদির প্রতি কোনাে প্রকার নজর দেওয়া হয় না।
[4] কৃত্রিম বিষয়-বিভাজন নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত : গতানুগতিক পাঠক্রমে বিষয়-বিভাজন নীতিটি চরমভাবে অনুসৃত হয়। যেমন—বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগােল, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি ভাষাগুলি তর্কবিদ্যাসম্মত হলেও মনােবিজ্ঞানসম্মত নয়। এর ফলে শিক্ষা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃত্রিম হয়ে ওঠে।
[5] পরীক্ষানির্ভর : গতানুগতিক পাঠক্রমের মূল বিষয় হল পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া। তাই এটি পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
[6] তত্ত্বনির্ভর শিক্ষা, বৃত্তিশিক্ষা অবহেলিত : গতানুগতিক বা বিষয়ভিত্তিক পাঠক্রম সম্পূর্ণভাবে তত্ত্বনির্ভর এবং পাঠক্রমে জীবনের ব্যাবহারিক দিকগুলি সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত হয়। ফলে তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলি অবাস্তব ও অসম্পূর্ণ হিসেবেই বিবেচিত হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।