কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম কাকে বলে | কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি লেখাে

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম কাকে বলে? কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি লেখাে। 2+(3 + 3)

উত্তর : 

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম : 

শিক্ষায় সক্রিয়তা নীতি এবং কর্ম অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে যে পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়, তাকে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলে। এই পাঠক্রমের মূলকথা হল কাজের মাধ্যমে শিক্ষা। রুশাে, ফ্রয়েবেল, মন্তেসরি, ডিউই, গান্ধিজি প্রমুখ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের জন্য কর্মভিত্তিক শিক্ষার কথা বলেছেন। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম কেবলমাত্র ব্যক্তির মানবিক বিকাশসাধনই করে না, বরং সামাজিক বিকাশেও সাহায্য করে। কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কও ভালাে হয়। শিক্ষার্থীরা দলগত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয় এবং সহযােগিতা, সহিমর্মিতা, সমানুভূতি প্রভৃতি সামাজিক গুণগুলি বিকশিত হয়।

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য :

কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রমের মধ্যে যেসকল বৈশিষ্ট্যাবলি দেখা যায়, তাদের কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল : 

[1] শারীরিক ও মানসিক বিকশি : কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদের দেহ ও মনের বিকাশসাধন হয়।

[2] বৌদ্ধিক বিকাশ : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর দেহ ও মনের বিকাশের পাশাপাশি বৌদ্ধিক বিকাশেও সহায়তা করে। 

[3] জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক : কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার পাঠক্রমে যেসকল কর্ম বা সক্রিয়তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেগুলির প্রত্যেকটি জীবনের সঙ্গে এবং বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 

[4] বৈচিত্র্য : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে বিভিন্ন ধরনের কর্ম বা কাজকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কর্মগুলির তত্ত্বগত ও ব্যাবহারিক উভয় দিকের প্রতি গুরুত্ব আরােপ করা হয়। 

[5] সৃজনশীলতার বিকাশ : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশেও সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা আপন চাহিদা, স্পৃহা, প্রবণতা অনুযায়ী কর্ম বেছে নেয় এবং সেই মতাে কর্মসম্পাদন করে। 

[6] স্বনির্ভর নাগরিকত্বের প্রশিক্ষণ : কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেয়।

[7] শ্রমের প্রতি মর্যাদা : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে অংশগ্রহণ করলে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রমের প্রতি মর্যাদাবােধ জাগরিত হয়।

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ত্রুটি :

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বেশ কিছু উপযােগিতা থাকলেও এটি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। এখানে কয়েকটি ত্রুটি উল্লেখ করা হল : 

[1] শিক্ষার প্রতি আকর্ষণের অভাব : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রীরা কর্মের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেকে পুরােপুরি কর্মের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলে। ফলে শিক্ষার তত্ত্বগত দিকে তাদের আর ঝোঁক থাকে না। ফলে জ্ঞানার্জন কাজটি সফল হয় না।

[2] অতীত অভিজ্ঞতাকে অবহেলা : এই জাতীয় পাঠক্রমে শিক্ষাকে শুধুমাত্র বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবনের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কোনাে মূল্য দেওয়া হয় না। ফলে অতীত অভিজ্ঞতা না-থাকায় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সাফল্যও ব্যাহত হয়।

[3] শিক্ষক ও শিক্ষালয়ের অভাব : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমকে যথাযথভাবে সম্পাদন করতে গেলে অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়ােজন হয়। তা ছাড়া কর্মসম্পাদনের জন্য বিশেষ ধরনের বীক্ষণাগার বা কর্মশালার প্রয়ােজন হয়। সব ধরনের শিক্ষালয়ে কর্মকেন্দ্রিক পাঠ পরিচালনা সম্ভব নয়।

[4] বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের অভাব : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে সব ধরনের বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া যায় না। কারণ অধিকাংশ বিদ্যালয় যে-কোনাে একটি কাজ বা কর্ম নির্বাচন করে তার জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তােলে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট কাজটি ছাড়া অন্যান্য কাজের অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়। 

[5] সময়ের অভাব : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণ করতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। ছােটো ক্লাসগুলিতে উপযুক্ত সময় পাওয়া গেলেও বড়াে ক্লাসের ক্ষেত্রে সময়ের অভাবে এই পাঠক্রম অনুসরণ করা যায় না। 

[6] আর্থিক দুরবস্থা : কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বাস্তবায়নের জন্য কর্মশালাতে প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন হয়। অর্থের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। 

[7] বিমূর্ত চিন্তনের সুযােগ কম : এই ধরনের পাঠক্রমে বিমূর্ত চিন্তনের সুযােগ কম। তাই উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে এই জাতীয় পাঠক্রম খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment