প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর জেলখানার চিঠি প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে সুভাষচন্দ্র বসুর লেখা জেলখানার চিঠি রয়েছে। পাঠ্যাংশের শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
জেলখানার চিঠি
সুভাষচন্দ্র বসু
হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
১.১ সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন?
উত্তর: ভারত বিদ্বেষী ইংরেজ অধ্যাপক ওটেনকে প্রহারের অভিযোগে সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।
১.২ রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
২. অনধিক তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
২.১ তোমার পাঠ্য পত্রখানি কে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন?
উত্তর: আমার পাঠ্যপত্রখানি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকে লিখেছিলেন।
২.২ কোন ব্যাপারটিকে পত্রলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন?
উত্তর: পাঠ্যপত্রটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বন্ধু দিলীপকে লিখেছেন। নেতাজি এবং অন্যান্য বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বিভিন্ন কারণে বা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে যে দীর্ঘদিন জেলে রয়েছে, এই বিষয়টি দিলীপকে আঘাত করেছে। তাই নেতাজি বিষয়টিকে শুধুমাত্র কষ্ট হিসেবে না দেখে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভেবে দেখতে বলেছেন। নেতাজির মতে, জেলের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হলেও এই পরিবেশ কখনো মানুষকে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগাতেও সাহায্য করে।
২.৩ বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে?
উত্তর: বন্ধু দিলীপকে লেখা পত্রে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন, সাধারণত একটা দার্শনিক ভাব বন্দী দশায় মানুষের মনে শক্তির সংচার করে। সুভাষচন্দ্রের মতে, মানুষ যদি তার নিজের অন্তরে ভেবে দেখবার যথেষ্ট বিষয় খুঁজে পায় তবে বন্দী হলেও তার কষ্ট নেই।
২.৪ মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মান্দালয় জেল বার্মা, বর্তমান মায়ানমারে অবস্থিত।
২.৫ ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন?
উত্তর: মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র বসু জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের অভিজ্ঞতা ও তা থেকে আসা চিন্তাগুলি নিয়ে একখানা বই লেখা যায়। কিন্তু উদ্যম শক্তি ও চেষ্টার সামর্থ্যের অভাবে সুভাষচন্দ্রবই লিখে উঠতে পারেননি।
২.৬ সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায়ের প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি?
উত্তর: মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকে লেখা পত্রে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে সে যে সব বই পাঠিয়েছিল সুভাষচন্দ্র তার সবগুলোই পেয়েছেন। কিন্তু তিনি বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি কারণ, বইগুলির অনেক পাঠক জুটে গেছে। বন্ধু দিলীপের পছন্দের প্রশংসা করে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন, আরও বই দিলে তাও সাদরে গৃহীত হবে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো :
৩.১ নেতাজি ভবিষ্যতের কোন্ কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন? কারা শাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?
উত্তর:
কোন কর্তব্য? :- মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র দেশের কারা-শাসন প্রণালীর সংস্কারের কর্তব্যের কথা বলেছেন।
কারণ :- স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে নেতাজীকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই নেতাজির মনে হয়েছে জেলখানার আবহাওয়া নেতাজিকে বিকৃত অমানুষ করে তোলে। বন্দীদের নৈতিক অবনতি ঘটে। একারণে নেতাজি দেশের কারা-শাসন প্রণালীর সংস্কারকে কর্তব্য মনে করেছেন। যার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।
কোন শাসনপ্রণালী অনুসরণযোগ্য? :- নেতাজীর মতে, ভারতে ব্রিটিশ কারা-শাসন প্রণালীর আদর্শের পরিবর্তে আমেরিকার ‘ইউনাইটেড স্টেট্স’ এর মতো উন্নত দেশগুলির কারা-শাসন প্রণালী অনুসরণযোগ্য।
৩.২ ‘সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।’ — বক্তা কে? তিনি কীজন্য খুশি হয়েছেন?
উত্তর:
বক্তা কে? :- প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তির বক্তা মান্দালয় জেলে বন্দিরত নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।
কী জন্য খুশি? :- বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র জানান দিলীপ যেমনটা আশঙ্কা করেছিল যে, রাজনৈতিক বন্দি সুভাষচন্দ্রের কাছে জেলে চিঠি পাঠালে সেটি ‘double distillation’ এর মধ্য দিয়ে গিয়ে তারপর সুভাষচন্দ্রের হাতে পৌঁছবে। কিন্তু ২৪শে মার্চ ১৯২৫ সালে নেতাজিকে পাঠানো দিলীপকুমারের চিঠিটির ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। একারনে নেতাজি খুবই খুশি হয়েছেন।
৩.৩ ‘আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।’ – কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেবার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর:
কে কাকে বলেছেন? :- মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকুমারকে লেখা চিঠিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বন্ধু দিলীপকুমার রায়ের উদ্দেশ্যে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
কীসের উত্তর? :- বন্ধু দিলীপকুমার ২৪শে মার্চ ১৯২৫ সালে নেতাজিকে মান্দালয় জেলে যে চিঠি পাঠিয়েছিল সেই চিঠি নেতাজীর হৃদয়তন্ত্রীকে কোমলভাবে স্পর্শ করেছে। এমনকি নেতাজীর চিন্তা ও অনুভূতিতে এমনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে যে, তার উত্তর দেওয়া নেতাজীর পক্ষে সুকঠিন। আরও একটি কারণে মন খুলে নেতাজী চিঠির উত্তর দিতে পারবেনা কারণ, তার লেখা চিঠিটি ‘Censor’ এর হাত অতিক্রম করে তারপর যাবে। তাই নেতাজী যা ভাবছেন ও অনুভব করছেন তার অনেকখানিই চিঠিতে লিখতে পারবেন না।
৩.৪ ‘পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যেজন ভুক্তভোগী।’— উদ্ধৃতির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন মানসিকতার পরিচয় পাও?
উত্তর:
উদ্ধৃতির সমার্থক বাক্য :- মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপ কুমারকে লেখা সুভাষচন্দ্রের চিঠিতে প্রশ্নে উল্লিখিত উদ্ধৃতির যে সমার্থক বাক্য পাওয়া যায় তা হল =
“আমার মনে হয় না, আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম।”
লেখকের মানসিকতা :- প্রশ্নোদ্ধৃত বাক্যটির মাধ্যমে জ্ঞাত অজ্ঞাত কারণে কারাবন্দী মানুষদের প্রতি লেখক এর সহানুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি কারাবাসকালে বন্দীদের উন্নতির জন্য নেতাজি কারা-শাসন প্রণালী সংস্কারের সংকল্পও করেন।
প্রত্যেকটি ব্যক্তি মাধ্যমে জ্ঞাত অজাত কারণে কারাবাসী মানুষের প্রতি লেখকের সহানুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এমনকি কারাবাসকালে বন্দীদের উন্নতির জন্য নেতাজী কারা-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও মন্তব্য করেন।
৩.৫ ‘আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে, অনেকখানি লাভবান হতে পারব। কোন প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি? জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে লাভবান হবার কথা বলেছেন?
উত্তর:
প্রসঙ্গ :- মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকুমারকে লেখা নেতাজির চিঠি থেকে আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে। নেতাজির মতে অনেক ক্ষেত্রে জেলের মধ্যে মানুষ আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বেশি লাভবান হয়। জেলের মধ্যে যে নির্জনতায় মানুষকে বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হয় সেই নির্জনতাই তাকে জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে বুঝবার সুযোগ করে দেয়।
কেমন লাভবান :- ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের অনেক জটিল প্রশ্নের সমাধান নেতাজী জেলে থাকা কালীন অবস্থাতেই করতে পেরেছেন। তাই নেতাজী মনে করেছেন তাঁর জেলের মেয়াদ থাকাকালীন তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অনেকখানি লাভবান হবেন।
৩.৬ ‘Martyrdom’ শব্দটির অর্থ কী? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?
উত্তর:
‘Martyrdom’ -এর অর্থ:- ‘জেলখানার চিঠি পাঠ্যাংশে উল্লিখিত ‘Martyrdom’ শব্দের অর্থ শহিদের যন্ত্রণা বা শহিদত্ব। মহৎ কর্মের জন্য আত্মবলিদান। | বক্তার বক্তব্য:- বন্ধু দিলীপ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কারাবাস বিষয়টিকে Martyrdom বলে অভিহিত করেছিলেন। সুভাষচন্দ্র এই বিষয়টিকে বন্ধুর গভীর অনুভূতি ও প্রাণের মহত্ত্ব বলে মনে করেছেন। নেতাজি এও বলেছেন, তাঁর যতটুকু ‘humour’, ‘proportion’ জ্ঞান আছে তাতে নিজেকে Martyr বলে মনে করার স্পর্ধা তাঁর নেই। স্পর্ধা বা আত্মরম্ভিতা জিনিসটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন নেতাজি। অবশ্য সে বিষয়ে তিনি কতখানি সফল হয়েছেন তা শুধু তাঁর বন্ধুরাই বলতে পারেন বলে তিনি মনে করেছেন। তাই Martyrdom জিনিসটা নেতাজির কাছে বড়জোর একটা আদর্শ।
৩.৭ ‘যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায় ?” কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? ‘তাদের মূল্য বিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলোচনা করো।
উত্তর:
প্রসঙ্গ:- মান্দালয় জেল থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে বন্ধু দিলীপকে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র বসু নানা আলোচনার পাশাপাশি কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি থাকার কুফল আলোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
লেখকের বক্তব্য:- নেতাজির মতে দীর্ঘদিন কারাবাসের ফলে মানুষ ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে। খারাপ খাবার, ব্যায়াম বা স্ফূর্তির অভাব, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা প্রভৃতি কারণও এর জন্য দায়ী। পিকনিক, সংগীত চর্চা, সাধারণ বক্তৃতা, খোলা জায়গায় খেলাধূলা ইত্যাদি বিষয় আমাদের জীবনকে কতখানি সরস ও সমৃদ্ধ করে তোলে তা আমরা সচরাচর বুঝতে পারিনা। এই প্রসঙ্গেই নেতাজি বলেছেন যখন আমাদের জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায়। নেতাজির মতে যতদিন জেলের মধ্যে বেশ স্বাস্থ্যকর ও সামাজিক বিধিব্যবস্থার বন্দোবস্ত না হয়। ততদিন কয়েদীর সংস্কার হওয়া অসম্ভব এবং ততদিন জেলগুলি আজকালকার মতো নৈতিক উন্নতির পথে অগ্রসর না হয়ে অবনতির কেন্দ্র হয়েই থাকবে।
৩.৮. ‘মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়। যে ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলব্ধি ঘটে তার পরিচয় দাও।
উত্তর: মান্দালয় জেল থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে বন্ধু দিলীপকে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্ৰ বসু জানিয়েছেন, জেলের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে তিনি মনে করেন। যেখানে অত্যাচার ও অপমানে আঘাত যথাসম্ভব কমে আসে, সেই বন্দী-জীবনটা ততটা যন্ত্রণাদায়ক হয় না। এই সমস্ত সূক্ষ্ম ধরনের আঘাত উপর থেকেই আসে। জেলের কর্তাদের এ বিষয়ে কিছু হাত থাকে না। তবে কারাবাসকালে একাকিত্বের মধ্যে কয়েদীরা যেহেতু নিজেদের বিচার বিশ্লেষণের সুযোগ পায়, তাই তাদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি ঘটলে জেলের জীবন আর অসহা মনে হয়না। কিন্তু পাছে বন্দিরা নিজের পার্থিব অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে নিজেদের অন্তরের মধ্যে একটা আনন্দধাম গড়ে তোলে একারণে তাদের আঘাত বর্ষণ করে, তাদের উপর অত্যাচার করে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় চারপাশের অবস্থা খুব কঠোর নিরানন্দময়।
৩.৯ এই চিঠিতে কারাবন্দি অবস্থাতেও দুঃখকাতর, হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং আত্মাবিশ্বাসী ও আশাবাদী নেতাজির পরিচয়ই ফুটে উঠেছে। – পত্রটি অবলম্বনে নিজের ভাষায় মন্তব্যটির যাথার্থ্য পরিস্ফুট করো।
উত্তর: উত্তর:- মান্দালয় জেল থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে বন্ধু দিলীপকে লেখা সুভাষচন্দ্র বসুর চিঠিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, –
ক) নেতাজি চিঠিতে ব্রিটিশ প্রশাসনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। এরই সাথে কারা-সংস্কারকে তাঁর ভবিষ্যতের কর্মসূচি হিসেবে মনস্থির করেছেন।
খ) কারা-বাসকালে নেতাজির উপলব্ধি হয়েছে, যদি নিজে কারাবাস করা যায় তবেই একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে সঠিকভাবে সহানুভূতির চোখে দেখা যায়।
গ) নেতাজির মনে হয়েছে সাধারণত একটা দার্শনিক ভাব বন্দি দশায় মানুষের অন্তরে শক্তি সঞ্চার করে এ প্রসঙ্গে তিনি লোকমান্য তিলকের কারা-বাসকালে গীতার আলোচনা লেখার কথা তুলে ধরেছেন।
ঘ) নেতাজির মতে, জেলের মধ্যের নির্জনতা জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে বুঝবার সুযোগ করে দেয়। তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত জীবনের অনেক জটিল প্রশ্নের সমাধান তিনি জেনে বসেই পাচ্ছেন।
ঙ) এমনকি চিঠিতে জানা যায়, বন্ধু দিলীপের দেওয়া বইও তিনি জেলে বসে পড়েছেন এবং সেই বইগুলোর আলাদা পাঠকও জুটিয়েছেন।
– মহান মানুষেরা জীবন থেকে শিক্ষা নেয় মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁরা নিজেদের চিন্তাভাবনাকে আরও শাণিত করে। তেমনি আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদের ধ্বনি শোনা যায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখা নেতাজির চিঠিতে। যেখানে নেই কোনো দুঃখকাতর বা হতাশাগ্রস্তের দ্যোতনা।
৩.১০ কারাগারে বসে নেতাজির যে ভাবনা, যে অনুভব, তার অনেকখানি কেন অকথিত রাখতে হবে?
উত্তর: মান্দালয় জেল থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে বন্ধু দিলীপকে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন কারাগারের পাথরের প্রাচীর ও লৌহদ্বারের অন্তরালে বসে তিনি যা ভাবছেন, ও যা অনুভব করছেন তার অনেকখানি অকথিত রাখতে হবে। কারণ,-
প্রথমত:- বন্ধু দিলীপের চিঠি তাঁর হৃদয়তন্ত্রীকে এমনই কোমল ভাবে স্পর্শ করে চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছে যে, নেতাজির পক্ষে তার উত্তর দেওয়া সুকঠিন।
দ্বিতীয়ত:- নেতাজি যেহেতু জেলবন্দি অবস্থাতে ছিলেন তাই তার চিঠি খানিকে আবার ‘censor’ – এর হাত অতিক্রম করে যেতে হতো। তাই নেতাজি চাননি তাঁর অন্তরের গভীরতম প্রবাহগুলি দিনের উন্মুক্ত আলোতে প্রকাশ হয়ে পড়ুক।
৪. নীচের বাক্যগুলির তথ্যগত অশুদ্ধি সংশোধন করো :
৪.১ নেতাজি মনে করতেন না যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।
উত্তর: নেতাজি মনে করতেন যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।
৪.২ কারাগারে বন্দি অবস্থায় নেতাজি সুভাষ গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।
উত্তর: কারাগারে বন্দি অবস্থায় লোকমান্য তিলব গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।
৪.৩ জেল জীবনের কষ্ট মানসিক অপেক্ষা দৈহিক বলে নেতাজি মনে করতেন।
উত্তর: জেল জীবনের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে নেতাজি মনে করতেন।
৫. নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো :
৫.১ তোমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে কোমলভাবে স্পর্শ করেছে।
উত্তর: হৃদয়তন্ত্রী – হৃদয় রূপ তন্ত্রী। (রূপক কর্মধারয় সমাস)
৫.২ সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে জেলে আছি।
উত্তর: অজ্ঞাত – নয় জ্ঞান। ( না – তৎপুরুষ সমাস)
৫.৩ তখন আমার নিঃসংশয় ধারণা জন্মে।
উত্তর: নিঃসংশয় – নির্ (নাই) সংশয় যার। (না বহুব্রীহি সমাস)
৫.৪ নূতন দণ্ডবিধির জন্যে পথ ছেড়ে দিতে হবে।
উত্তর: দণ্ডবিধি – দণ্ডের নিমিত্ত বিধি। (নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস)
৫.৫ লোকমান্য তিলক কারাবাস কালে গীতার আলোচনা লেখেন।
উত্তর: লোকমান্য – লোক দ্বারা মান্য। (করণ তৎপুরুষ সমাস)
৬. শব্দগুলির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করো :
পাঠক, দর্শন, দৈহিক, আধ্যাত্মিক, ভণ্ডামি, সমৃদ্ধ, মহত্ত্ব, অভিজ্ঞতা।
উত্তর: পাঠক = √ পট্ + অক
দর্শন = √ দৃশ্ + অন
দৈহিক = দেহ + ষ্ণিক
আধ্যাত্মিক = অধ্যাত্ম + ইক
ভণ্ডামি = ভণ্ড + আমি
সমৃদ্ধ = সম্ – √ ঋর্ + ক্ত
মহত্ত্ব = মহৎ + ত্ব
৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :
৭.১ আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন। (না-সূচক বাক্যে )
উত্তর: আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া খুব সহজ নয়।
৭.২ সেই জন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায় (প্রশ্নবোধক বাক্যে)।
উত্তর: সেই জন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায় না কি?
৭.৩ লজ্জায় তারা বাড়িতে কোন সংবাদ দেয়নি। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: তারা লজ্জা পেয়েছে তাই বাড়িতে কোনো সংবাদ দেয়নি।
৭.৪ কতকগুলি অভাব আছে যা মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। (সরল বাক্যে)
উত্তর: কতকগুলি অভাবকে মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে।
৭.৫ বিনা দুঃখ কষ্টে যা লাভ করা যায় তার কোন মূল্য আছে? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: দুঃখ কষ্টে যা লাভ করা যায় তারই শুধু মূল্য আছে।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse
চিঠি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Chithi Class 8 Question Answer | Wbbse
গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর | জগদীশচন্দ্র বসু | Class 8 Bengali Gacher Kotha Question Answer | WBBSE
সুভা গল্পের প্রশ্ন উত্তর | Subha Class 8 Bengali Question Answer | Wbbse
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।