নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ভূমিকা: শহর কলকাতায় থাকি। ইট, কাঠ, বাড়ি আর গাড়ির ধোঁয়া আমাদের ঘিরে রাখে। নৌকাবিহার বলতে সল্টলেকের কাছে নৌকা ভাড়া করে দু-একবার ছােট্ট ঝিল ঘুরেছি। আউট্রাম ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখলে, মনে মনে বলেছি, নদীর ঘাটের কাছে/নৌকা বাঁধা আছে’—কিন্তু ইচ্ছেমতাে পাল তুলে দিয়ে নদীবক্ষে পাড়ি দেব, এমনটা কখনও হয়ে ওঠেনি। একবার সত্যি সত্যিই সুযোেগ এল নৌকাভ্রমণের, যা আজও ভাবলে আমাকে উতলা করে তােলে।
অভিজ্ঞতা: সেবার দিন কয়েকের জন্য গিয়েছিলাম মুরশিদাবাদে। হাজারদুয়ারি, পলাশির প্রান্তর দেখতে দেখতে একদিন জলঙ্গিতে নৌকায় ঘুরব বলে ঠিক হল। আমরা সকাল সাতটায় পৌছে গেলাম নদীর ঘাটে, নৌকা ছাড়ল। নৌকার সঙ্গে দুলে উঠলাম আমরাও | মাঝি ভাইরা পাল তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন ভেসে গেলাম। উপরে নীলাকাশ। পাখিরা ডানা মেলে চলেছে আর মেঘও চলেছে আমাদের সঙ্গে। সূর্যের তেজ তখনও প্রখর হয়নি। তীর ছেড়ে আমাদের পানসি চলল সুনীল জলধির মাঝে। নৌকায় আমরা যাত্রী ছিলাম মাত্র পাঁচ জন—মা, বাবা, দিদি, মাঝিভাই ও আমি। মাঝিভাই ওই অঞ্চলের নানা কাহিনির বর্ণনা করতে করতে চললেন। দূরের এক-একটি গ্রামের নাম বলতে থাকেন, আর তাদের টুকরাে টুকরাে ইতিহাস। নদীর এক পাড়ে কিছু ভাঙা মন্দির ও মসজিদও দেখলাম। এভাবেই ছােটো ছােটো ঢেউ ডিঙিয়ে নৌকা ভেসে চলে, আমরাও ভেসে যাই। ওপারের সবুজ গাছপালারা যেন আমায় ডাকে। চলতে গিয়ে দেখি কোথাও নদীর পাড়ভাঙা, কোথাও-বা নদীর ঘাটে ঘাটে অসংখ্য মানুষ স্নান করছে। কেউ-বা জপ করছে আধ কোমর জলে দাঁড়িয়ে, কেউবা পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করছে। হঠাৎ নৌকার গতি ধীর হয়। দেখি সামনে জাল পাতা হয়েছে মাছ ধরার জন্য, তাই একটু ঘুরে যেতে হবে। মাইল খানেক উজানে যেতে হবে আমাদের, যেতে যেতে নদীর বাঁকে বজরা বাঁধা দেখলাম। মাঝিভাই এই বজরাগুলাে দেখিয়ে বলল, এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন যাঁরা, তাঁদের এই বজরা। তাদের জমিদারির অস্তিত্ব নেই। তবুও পারিবারিক কোনাে এক উৎসবে বছরে একবার করে জলে নামায়। বেশি দূর যেতে পারে না, সময়ের সঙ্গে আজ আর তাল মেলাতে পারে না! মনে পড়ে যায় বঙ্কিমচন্দ্রের দেবী চৌধুরাণীর কথা। তিনি বজরায় চড়ে ইংরেজদের সঙ্গে কী যুদ্ধই-না করেছিলেন, কিন্তু হায়! এই মুরশিদাবাদেই আমরা পরাধীন হয়েছিলাম ইংরেজদের হাতে।
উপসংহার: এভাবেই আমরা বড়াে নদীতে ফিরে আসি। জলঙ্গির জলের রং কী অপরূপ। নদী যেন সুর্যের আলােয় কত রঙে সাজে। কখনও সে ছােটো ছােটো ঢেউ-এর মালায় নিজেকে সাজিয়ে তােলে, কখনও আবার বড়াে ঢেউ। হঠাৎ দূরের আকাশে দেখা দিল কালাে মেঘ। মাঝিমাল্লারা সতর্ক হল। বাতাসের শনশন শব্দ শােনা গেল। মনে হল মুহূর্তে দৃশ্যপট বদলে, কোনাে এক দৈত্য ছুটে আসছে। নৌকা যেন পাক খেয়ে উঠল। তবে ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। শুরু হল বৃষ্টি। আমরা এগিয়ে চললাম তীরের দিকে। আজও চোখ বন্ধ করলে কালাে জলের ওই আহ্বান ধ্বনি যেন আমায় ডাকে।
আরো পড়ুন
তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
শীতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
তোমার প্রিয় ঋতু – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।