পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর :
পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্যের গুরুত্ব :
আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করা এবং সমাজকল্যাণের জন্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা। শিক্ষার্থী যাতে নিজেকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সঠিকভাবে অভিযােজিত করতে পারে এবং ভাবী জীবনে বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা অর্জনে সক্ষম হয়, সেই দিকে দৃষ্টি দিয়েই পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়।
এখানে পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্যের গুরুত্ব বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল :
[1] শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশ : শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা। এর জন্য শিক্ষার পাঠক্রমে শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্য ও কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্যরক্ষার রীতিনীতি ইত্যাদি বিষয় পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[2] শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ : মানসিক বিকাশ বলতে বােঝায় সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তাধারা, মনন, কল্পনা ইত্যাদির বিকাশ। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটানাের জন্য পাঠক্রমে সাহিত্য, শিল্প, গণিত প্রভৃতি বিষয় ও অভিজ্ঞতাকে স্থান দেওয়া হয়।
[3] শিক্ষার্থীর প্লাক্ষোভিক বিকাশ : প্রকৃতির দিক থেকে প্রক্ষোভ হল অনুভুতিমূলক। প্রক্ষোভ শিক্ষার্থীর সকল কাজের বিষয়ে প্রেরণা বা শক্তি জোগায়। শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক বিকাশ যাতে সহজ ও স্বাভাবিক পথে অগ্রসর হতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে পাঠক্রমে বিভিন্ন বিষয় ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[4] শিক্ষার্থীর নৈতিক বিকাশ : নৈতিক বিকাশ ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবােধ ও উন্নতমানের জীবনাদর্শ গড়ে তুলতে সাহায্য করে, সেই কারণে পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে দৃষ্টি দিয়ে নানান ধরনের নীতিকথা ও মহাপুরুষদের জীবনদর্শন। ইত্যাদিকে সাহিত্য ও ইতিহাসের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[5] শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশ : আধুনিক শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর সামাজিক চেতনার বিকাশে সহায়তা করা। পাঠক্রম নির্ধারণের সময় এই ধারণাটি মাথায় রেখে সমাজসেবা, পরিবেশ পাঠ, ভূগােল প্রভৃতি বিষয়ের মধ্যে সামাজিক চেতনা ও মূল্যায়ন বিকাশের সহায়ক বিভিন্ন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[6] শিক্ষার্থীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যমূলক বিকাশ : সংস্কৃতি কথাটির মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির সামাজিক আচরণ, সৌন্দর্যবােধ, ব্যক্তিগত অনুভূতি ও বিশ্বাসকে বােঝানাে হয়। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পেয়ে থাকি। তাই পাঠক্রমে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যচর্চার জন্য নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, বিভিন্ন শিল্পকলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[7] বৃত্তিমূলক উদ্দেশ্য : জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছােনাের পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই কোনাে-না-কোনাে পেশা গ্রহণ করতে হয়। তাই পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষার্থীর পেশাগত বা বৃত্তিমূলক উদ্দেশ্যের প্রতি নজর দিয়ে পেশার সহায়ক উপাদান বা বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
[8] অভিযােজন ক্ষমতার বিকাশ : শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে অভিযােজনক্ষম করে তােলা। তাই পাঠক্রমের মধ্যে এমন সব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেগুলি শিক্ষার্থীকে আরও বেশি দক্ষ করে তােলে।
[9] সক্রিয়তামূলক কাজ : আধুনিক শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদেরকে সক্রিয় করে তােলা। এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দিয়ে পাঠক্রম রচনায় অগ্রসর হলে তত্ত্বগত বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কার্যাবলি, সৃজনাত্মক কার্যাবলি, উৎপাদনশীল কাজ, খেলাধুলাে, বিভিন্ন প্রকারের উৎসব, অনুষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[10] ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক বােধের বিকশ : শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ জীবনে যাতে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে যাতে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ত্বরান্বিত হয়, তার জন্য পাঠক্রমে ওইসকল বােধ বা চেতনার বিকাশে সহায়ক উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।