পরিবেশ কাকে বলে? পরিবেশের প্রকারভেদ লেখাে। পরিবেশের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে। 2 + 2 + 4
উত্তর :
পরিবেশ :
পরিবেশ কথাটি এসেছে ইংরেজি Environment’ শব্দ থেকে। Environ’ কথাটির অর্থ হল ঘিরে থাকা। তাই পরিবেশ কথার সাধারণ অর্থ হল—যা ‘পরিবেষ্টন করে থাকে’ বা ‘ঘিরে থাকে।
বিশিষ্ট অধ্যাপক জিসবাট-এর মতে, যেসকল উপাদান সাময়িকভাবে কোনাে বস্তুকে ঘিরে থাকে এবং তার ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে, তাই হল পরিবেশ।
শিক্ষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে, পরিবেশ হল ব্যক্তির চারপাশে অবস্থিত সেইসকল উপাদান, ঘটনা, প্রতিষ্ঠান, মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর সমাবেশ যা কোনাে-না-কোনাে ভাবে ব্যক্তিকে উদ্দীপিত ও প্রভাবিত করে এবং যার দ্বারা তার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ নির্ধারিত হয়।
পরিবেশের প্রকারভেদ :
শিক্ষাবিজ্ঞানে পরিবেশকে প্রধানত দুটি মূল বিভাগে বিভক্ত করা যায়। এগুলি হল—প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশ।
[1] প্রাকৃতিক পরিবেশ : প্রকৃতি আপন নিয়মে পৃথিবীতে প্রতিটি জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে উপাদানগুলি তৈরি করেছে, সেই উপাদানগুলির সমবায়কে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলা হয়। খাদ্য, পানীয়, আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ সব কিছুই প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত। প্রাকৃতিক পরিবেশে সজীব এবং নির্জীব দু-ধরনের উপাদান থাকে। সজীব উপাদানের মধ্যে মূল দু-ভাগ হল প্রাণী এবং উদ্ভিদ। নির্জীব উপাদানকেও দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—স্বাভাবিক জড় পরিবেশ এবং কৃত্রিম জড় পরিবেশ।
[2] সামাজিক পরিবেশ : পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রতিবেশী, কমিউনিটির অন্যান্য সদস্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক নিয়মকানুন, কৃষ্টি, ঐতিহ্য প্রভৃতি নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয়, তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।
সামাজিক পরিবেশের নানান উপাদান এবং শক্তিসমুহের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিশু ধীরে ধীরে বেড়ে। ওঠে। সামাজিক পরিবেশ সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
পরিবেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ :
[1] গতিশীলতা : পরিবেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল গতিশীলতা। পরিবেশ সদাপরিবর্তনশীল। ফলে এর মধ্যে একটি গতি লক্ষ করা যায়।
[2] ধারাবাহিকতা : পরিবেশ কোনাে তাৎক্ষণিক বিষয় নয়। এর মধ্যে ধারাবাহিকতা ও বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়।
[3] শক্তি সরকারী : পরিবেশ জীবের মধ্যে শক্তির সঞ্জার ঘটায়।
[4] ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী : পরিবেশের উপাদানগুলি একে অপরের ওপর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে।
[5] বহু উপাদানের সমন্বয় : পরিবেশে বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয় লক্ষ করা যায়। প্রতিটি উপাদান আলাদা হওয়া সত্ত্বেও এগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাশাপাশি রয়েছে।
[6] শৃঙ্খলা : পরিবেশের উপাদানগুলির মধ্যে যেসব কার্যাবলি ঘটে, সেগুলি সর্বদা সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়।
[7] আন্তঃসম্পর্ক : পরিবেশের কোনাে একটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটলে অন্য উপাদানও তার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিবর্তিত হয়।
[8] প্রাচীনতা : পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকেই পরিবেশের উৎপত্তি ঘটেছে। সকল পরিবেশের উৎপত্তি একসঙ্গে -ঘটলেও, এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে দ্বিমত নেই।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।