প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা কী | এই শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুসৃত পদ্ধতিগুলি লেখাে।

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা কী? এই শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুসৃত পদ্ধতিগুলি লেখাে।  5 + 3 

উত্তর : 

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা : 

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রথাবদ্ধ (নিয়ন্ত্রিত) শিক্ষা এবং অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা—এই দুটি পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে দেখা গেল যে, এই দু-ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সব ধরনের মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না ।

দিনের-পর-দিন বিদ্যালয়ছুট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। নিরক্ষর মানুষের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। তাই বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রচলন ঘটে। নীচে এই শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তার দিকগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল।

[1] সবার জন্য শিক্ষা : দেশের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে গেলে প্রয়ােজন উপযুক্ত শিক্ষা। প্রবল জনসংখ্যার চাপে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সব মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাই হল বিকল্প পদ্ধতি। এতে যে-কোনাে বয়সের মানুষ। শিক্ষার সুযােগ পায়।

[2] সার্বিক সাক্ষরতার প্রসার : সার্বিক সাক্ষরতার প্রসারে এবং নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশকে এবং দেশের জনগণকে বাঁচানাের ক্ষেত্রে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে।

[3] অবসরকালীন শিক্ষা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা হল একধরনের অবসরকালীন শিক্ষা। যে-কোনাে বয়সের মানুষ অবসরকালীন সময়ে এই শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। 

[4] মানবসম্পদ উন্নয়ন : এই শিক্ষার মাধ্যমে সব ধরনের মানুষ শিক্ষার সুযােগ গ্রহণ করতে পারে। নিজেকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় দক্ষ করে তুলতে পারে। সেই দিক থেকে প্রথাবহির্ভুত শিক্ষা মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

[5] কর্মকালীন দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আরও বেশি করে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযােগ পায়। তাই কর্মকালীন দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। 

[6] স্বল্প ব্যয়-এ শিক্ষালাভ করা যায় : নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার তুলনায় অনেক অল্প পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এই শিক্ষালাভ করা যায়। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের কাছে তাই এই শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়।

[7] সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে সহায়ক : সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। 

[8] ইচ্ছামতাে প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণের সুবিধা : নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার তুলনায় প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা অধিক নমনীয় হওয়ার শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে মতাে এই শিক্ষায় প্রবেশ করতে পারে। আবার ইচ্ছে না-হলে সহজে এই শিক্ষা থেকে বের হয়ে যেতেও পারে।  

[9] অন্যান্য প্রয়ােজনীয়তা : দুর্গম অঞ্চলের যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে সেই সকল স্থানের জনসাধারণ প্রথাবহির্ভুত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে বিধিবদ্ধ শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তারাও এই শিক্ষার দ্বারা উপকৃত হতে পারে। 

[10] গবেষণার সুযােগ সৃষ্টিতে সহায়ক : জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন ও সম্প্রসারণের জন্য গবেষণার সুযােগ সৃষ্টিতে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা সাহায্য করে। সেদিক থেকেও এই শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়। 

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় অনুসৃত পদ্ধতি : 

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় যেসকল পদ্ধতি অনুসৃত হয়, সেগুলি হল : 

[1] পত্রপাঠ মাধ্যমে শিক্ষা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠক্রম অনুসারে ছােটো ছােটো মডিউল (Module) তৈরি করে। এগুলি ডাকযােগে শিক্ষার্থীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে এগুলি পড়াশােনা করে। কোনাে অংশে অসুবিধা দেখা দিলে কনট্যাক্ট প্রােগ্রামের ক্লাসে গিয়ে সেগুলি জেনে নেয়। 

[2] বৈদ্যুতিন মাধ্যমে শিক্ষা : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার পাঠ পরিচালনা করে। বেতার এবং দূরদর্শনে নির্দিষ্ট মডিউল-এর ওপর আলােচনা করা হয়। এ ছাড়া ইনটারনেটের মাধ্যমে স্টাডি মেটিরিয়েল শিক্ষার্থীর কাছে পাঠানাে হয়। শিক্ষার্থী কম্পিউটার বা উন্নত মানের মােবাইল ফোনের সাহায্যে ইনটারনেট থেকে তথ্যসংগ্রহ করে পড়াশােনা করে। 

[3] অন্যান্য পদ্ধতি : বর্তমানে বিভিন্ন মুক্ত বিদ্যালয়, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুর শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বড়াে বড়াে শহরে কনট্যাক্ট প্রােগ্রাম-এর ব্যবস্থা করে। সেখানে কিছু বিশেষজ্ঞ শিক্ষক উপস্থিত হন। প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা স্বল্পকালীন শ্রেণিশিখনের সুযােগ পায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment