প্রথাবহির্ভূত বা বিধিমুক্ত শিক্ষা কাকে বলে | প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে

প্রথাবহির্ভূত বা বিধিমুক্ত শিক্ষা কাকে বলে | প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে
অথবা, নিয়মবহির্ভূত শিক্ষা বলতে কী বােঝ? নিয়মবহির্ভূত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। 

উত্তর : 

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা (Non-formal Education) :

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা হল নিয়ন্ত্রিত এবং অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাঝামাঝি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা যা নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের সময়সুচির বাইরে অনুষ্ঠিত হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জনের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করে।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে যে-কোনাে সংগঠিত বিধিবদ্ধ শিক্ষামূলক কাজকে প্রথাবহির্ভূত বা বিধিমুক্ত শিক্ষা বা নিয়মবহির্ভূত শিক্ষা বলে।

পিএইচ কুম্বস (P H Coombs)-এর মতে, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা বলতে বােঝায় নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাঠামাের বাইরে অনুষ্ঠিত একটি সুসংগঠিত শিক্ষাক্রম, যেখানে বিশেষ জনসমষ্টির বয়স্ক ও শিশুদের জন্য নির্বাচিত বিশেষ ধরনের শিক্ষার সুযােগ সৃষ্টি করা হয়। 

নিয়মবহির্ভূত বা প্রথাবহির্ভূত বা বিধিমুক্ত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য : 

প্রথাবহির্ভূত বা বিধিমুক্ত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি হল : 

[1] শিথিল নিয়ন্ত্রণ : এই শিক্ষাব্যবস্থায় সময়, স্থান, ব্যাপ্তি, হাজিরা, পাঠ্যসূচি, পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন প্রভৃতি দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রথাগত শিক্ষা অপেক্ষা কম, আবার তা অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মতাে শিথিলও নয়।

[2] প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যাবহারিক দিক : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার কার্যক্রম প্রয়ােজনভিত্তিক এবং যে-কোনাে বয়সের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। এই শিক্ষায় তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় ক্ষেত্রের ওপর পাঠদানের ব্যবস্থা থাকে। 

[3] জীবনব্যাপী শিক্ষা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা হল জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রক্রিয়া। এই শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি সারাজীবনই কোনাে-না-কোনাে বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। যে-কোনাে বয়সে বা যে-কোনাে মুহূর্তে এই শিক্ষার সুযােগ গ্রহণ করা যায়। 

[4] নির্দিষ্ট সময়সীমা না-থাকা : নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় যেমন ছাত্রছাত্রীকে স্বল্প সময়ের মধ্যে জ্ঞানের একটি বিশাল ক্ষেত্র অর্জন করতে হয়, এখানে তেমন কোনাে সুনির্দিষ্ট সময় নেই। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের অন্যান্য কাজের ফাকে যে-কোনাে সময়ে পড়াশােনা করতে পারে। 

[5] নির্দিষ্ট শিক্ষালয় না-থাকা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনাে বিদ্যালয় থাকে না, নির্দিষ্ট সময়সুচিও থাকে না। এমনকি সুনির্দিষ্ট শিক্ষকও থাকে না। প্রয়ােজন অনুযায়ী কোনাে শিক্ষক বা অন্য বৃত্তিতে নিযুক্ত ব্যক্তির সহায়তায় শিক্ষাদানের কাজ সম্পাদিত হয়। 

[6] আর্থিক ব্যয় কম : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় আর্থিক ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কারণ এক্ষেত্রে স্থায়ী শিক্ষক, সাজসরঞ্জাম, আসবাবপত্র ইত্যাদির প্রয়ােজন হয় না।

[7] নির্দেশভিত্তিক শিক্ষার আয়োজন : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় পাঠ্যবিষয়বস্তু (study material) বিশেষভাবে তৈরি করে, বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পাঠানাে হয়। 

[8] পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতাদান : প্রথাবহির্ভুত শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রম নির্বাচন করতে পারে।

[9] শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা : এই ধরনের শিক্ষায় নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মতাে নিয়মিত শ্রেণিশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে না, তবে অনেক ক্ষেত্রে খুব অল্প সময়ের জন্য কনট্যাক্ট প্রােগ্রামের ব্যবস্থা করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কনট্যাক্ট প্রােগ্রামে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়।

[10] সাহায্যকারী শিক্ষা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। সেসব ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন কারণে প্রথাগত শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, তারা প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সাহায্যে অতিসহজেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযােগ পায়। 

[11] মূল্যায়ন ব্যবস্থা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার তুলনায় অনেক শিথিল বা নমনীয়। এতে একসঙ্গে সব পত্রের পরীক্ষায় না-বসলেও চলে। 

[12] ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদার পরিতৃপ্তি : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাব্যবস্থা ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েরই চাহিদা পরিতৃপ্ত করে। ব্যক্তির চাহিদা হল উন্নত শিক্ষামূলক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং সমাজের চাহিদা হল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ব্যক্তি গড়ে তােলা। প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা শিক্ষার্থীকে ক্রমপর্যায়ে কোনাে বিষয়ে সর্বাধুনিক জ্ঞান সরবরাহের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব-সম্পন্ন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment