Q: সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো
Q: সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসনের ব্যাখ্যা
Q: সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের ব্যাখ্যা
Q: হবসন এবং লেলিনের ব্যাখ্যার সমালােচনা
উত্তর:
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসনের ব্যাখ্যা :
• জন অ্যাটকিনসন হবসন ছিলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ, লেখক ও বক্তা। ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকার মুখপাত্র হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় বুয়াের যুদ্ধ থেকে তিনি অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
• 1902 সালে তিনি লেখেন তার বিখ্যাত বই ‘Imperialism Study’
• হবসন মনে করতেন সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক মূল শিকড় হল বিনিয়ােগের সন্ধানে অতিরিক্ত পুঁজি।
• হবসনের তত্ত্বের মূলে রয়েছে কম উপভােগ বা Under Consumption এর ধারণা।
• একচেটিয়া কারবার এবং অতিরিক্ত উৎপাদন পুঞ্জিভুত পুঁজির জন্ম দেয়। এই উদবৃত্ত পুঁজি লাভজনক বিনিয়ােগের ক্ষেত্র খুঁজতে থাকে।
• কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা না বাড়ায় শিল্পদ্রব্যের চাহিদা দেশের ভেতর খুব একটা বাড়ে না।
• ফলত এই উদ্বৃত্ত পুঁজির বিদেশে বিনিয়ােগের সম্ভবনা তৈরী হয়।
• বিদেশে এই পুঁজি বিনিয়ােগ করার ফলে পুঁজিকে সুরক্ষিত করার জন্য লগ্নিকারীরা | সাম্রাজ্য বিস্তার বা উপনিবেশে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
• নিরন্তন সরকারী ও বেসরকারি স্তরে প্রচার এবং সংবাদ মাধ্যমের কারসাজিতে ঔপনিবেশবিস্তার ও সাম্রাজ্যবাদের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তােলা হয়।
• হবসনের মতে উপনিবেশ বিস্তার ও সাম্রাজ্যবাদের ফলেই যুদ্ধ, প্রাণহানি এবং সম্পদের অপচয় হয়।
• হবসন বিশ্বাস করতেন আয়ের পুর্নবন্টন হলে অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে দেশে শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে ফলে উপনিবেশে পুঁজির বহিগমনের প্রয়ােজনীয়তা থাকবে না।
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের ব্যাখ্যা :
• রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের নেতা ম্লাদিমির-ইলিচ-লেলিনতার “Imperialism the Highest Stage of capitalism” aloe সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দেন l
• লেলিন পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে সাম্রাজ্যবাদকে দেখেছেন। অর্থাৎ এই স্তরে পুঁজিবাদের বিকল্প হিসেবে মাথা চাড়া দেয় সাম্রাজ্যবাদ ।
• বৃহদায়তন উদ্যোগের প্রসার, পুঁজির কেন্দ্রীভবন, অবাধ প্রতিযােগিতার অবসান
ঘটিয়ে একচেটিয়া কতৃত্বের প্রতিষ্ঠা পুঁজিবাদকে আগ্রাসী করে তােলে।
• শিল্প পুঁজির পাশাপাশি মূলধনী পুঁজির প্রসার ঘটতে থাকে। বৃহৎ ব্যাঙ্কগুলি লগ্নি পুঁজির আধার হয়ে ওঠে । শিল্প পুঁজি (Industrial capital) এবং লগ্নী পুঁজি (Financial capital) এর মেল বন্ধন ঘটে। শিল্পপতি ব্যাঙ্কের দারস্থ হয়। ব্যাংক শুধুমাত্র ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিদের মূলধন ও ঋণ সরবরাহ করে না তারা শিল্পের অংশীদারে পরিণত হয়।
• এইভাবে পুঁজিবাদের প্রসারের ফলে কয়েকটি শিল্পে উন্নত দেশ ক্রমশ সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে। ঐ উন্নত দেশগুলিতে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলেও অধিকাংশ জনগণ দরিদ্র হওয়ায় পুঁজি স্বদেশে মুনাফা করতে পারে না ফলে পুঁজির বহির্গমন ঘটে।
• উদবৃত্ত পুঁজি তাদের প্রভাবাধীন দেশ উপনিবেশগুলিতে বিনিয়ােগ করে বিপুল মুনাফা
লাভ করে।
• এই ভাবে অনুন্নত দেশগুলি ও উপনিবেশগুলি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামাল দেশগুলির শােষণ করে উদ্ধৃত পুঁজির মালিকরা এবং ঐ দেশগুলিতেই তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রির বাজার তৈরী করে।
• এইভাবে একচেটিয়া পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানগুলি পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ফলে নতুন কোন প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র সেই ভাগ বাঁটোয়ায় ভাগ বসাতে চাইলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই ভাবেই 1870 থেকে 1914 এর মধ্যবর্তী সময়ে পুঁজিবাদের প্রসার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দিয়েছিল।
হবসন এবং লেলিনের ব্যাখ্যার সমালােচনা
• হবসনের সমালােচকরা বলেছেন হবসন কেবলমাত্র ভােগ্যদ্রব্যের কথা বলেছেন কারখানার প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতির চাহিদা (Capital goods) এর কথা ভাবেননি।
• হবসনের তথ্যের বিরুদ্ধে অন্য সমালােচনা হল পুঁজি যদি জমেই যায় তাহলে চাহিদা জোগানের তত্ত্ব অনুযায়ী পুঁজি দাম কমে যাওয়ার । অর্থাৎ সুদের হার কমা উঠিত। অর্থাৎ ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখার পরিবর্তে সেই টাকা বাজারে আরাে ব্যবহার উপযােগী হওয়ার কথা।
• হবসনের তথ্যের বিরুদ্ধে অন্য সমালােচনা হল পুঁজি যদি জমেই যায় তাহলে চাহিদা জোগানের তত্ত্ব অনুযায়ী পুঁজি দাম কমে যাওয়ার । অর্থাৎ সুদের হার কমা উঠিত। অর্থাৎ ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখার পরিবর্তে সেই টাকা বাজারে আরাে ব্যবহার উপযােগী হওয়ার কথা।
• হবসন-লেলিন তত্ত্বের বিরুদ্ধে বলা যায় এই তত্ত্বে শিল্পবিপ্লবের পূর্বে কেন উপনিবেশের বিস্তার হয়েছিল তার ব্যাখ্যা ছিল না।
• সবচেয়ে বড় কথা ফ্রান্স ইংল্যান্ড তাদের মূলধনের বেশীরভাগটাই বিনিয়ােগ করেছিল।
রাশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায়।
• অন্যদিকে ফ্রান্স শিল্প প্রযুক্তি গঠনে ইংল্যান্ড এবং জার্মানির থেকে যথেষ্ট পিছিয়ে
থাকলেও প্রাথমিক স্তরে ফ্রান্সের উপনিবেশ বিস্তারের বৃদ্ধির হার ছিল বেশী ।
• অনেক ঐতিহাসিকেরাই তাই উপনিবেশবিস্তার সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের পশ্চাতে রাজনৈতিক কারণকে গুরুত্ব দেবার পক্ষপাতি। তারা সাম্রাজ্যবাদকে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রকাশ হিসেবে দেখার পক্ষপাতি অর্থাৎ জাতীয় গৌরবকে তুলে ধরার জন্য নতুন অঞ্চল জয়ের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।
• কেউ কেউ মিশনারীদের ধর্ম বিস্তারের প্রচেষ্টা ও জাতি গারিমা প্রচার ইত্যাদিকেও উপনিবেশ বিস্তার এর প্রেরণা হিসেবে দেখেছেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।