শিখনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্তর গুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

শিখনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্তর গুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

উত্তর :

শিখনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্তর :

শিখন এমন একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীকে তার পুরােনাে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আচরণধারার পরিবর্তন ও উৎকর্ষসাধনের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে। মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াটি অনেকগুলি স্তর বা পর্যায় অনুযায়ী সংঘটিত হয়। শিখনের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সম্পর্কটি ছকের মাধ্যমে দেখানাে হল—

শিখনের স্তর

শিখনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তরগুলি হল—(1) ধারণ বা সংরক্ষণ, (2) পুনরুদ্রেক এবং (3) প্রত্যভিজ্ঞা। এখানে শিখনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রধান তিনটি স্তরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল

[1] ধারণ বা সংরক্ষণ : শিখনের দ্বারা অর্জিত বা লব্ধ জ্ঞান বা অভিজ্ঞতাগুলিকে মনের মধ্যে ধরে রাখাকে ধারণ বা সংরক্ষণ বলে। শিক্ষার্থী শিখনের দ্বারা যেসকল অভিজ্ঞতা। অর্জন করে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সেগুলির অনেক অংশই স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। কিছু কিছু অংশ স্মৃতিতে থেকে যায়। যে কৌশলে অর্জিত জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির মধ্যে সংরক্ষিত হয়, তাকেই ধারণ ক্রিয়া বা সংরক্ষণ ক্রিয়া বলে। সংরক্ষণ বা ধারণের জন্য যে বিষয়গুলি অত্যন্ত। প্রয়ােজনীয়, তা হল

(i) স্মৃতিতে কোনাে বিষয় ধারণ করতে হলে বিষয়বস্তুকে ভালােভাবে বুঝে নিতে হবে এবং সেগুলিকে বারবার চর্চা করতে হবে। 

(ii) কোনাে বিষয়বস্তুকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে হলে বিষয়টির প্রতি অনুরাগ বা আগ্রহ থাকা দরকার। বিষয়টি শেখার সময় মনােযােগ সহকারে শিখতে হবে।

(iii) দেখা গেছে বিষয়বস্তু যত বেশি সাম্প্রতিক হবে, ধারণ বা সংরক্ষণও তত ভালাে হবে। 

(iv) উত্তম সংরক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যও প্রয়ােজনীয় বিষয়। 

[2] পুনরুদ্রেক : স্মৃতি থেকে শিখন লব্ধ অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে সক্রিয় চেতন মনে পুনরুত্থাপিত করার প্রক্রিয়াকে পুনরুদ্রেক বলে। সংরক্ষিত অভিজ্ঞতাকে যদি প্রয়ােজন মতাে পুনরুদ্রেক করা না-যায়, তাহলে বলা হয় শিখন অসম্পূর্ণ। পুনরুদ্রেক প্রধানত দু-প্রকারের হয়। যথা—(1) প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক এবং (2) পরােক্ষ পুনরুদ্রেক। যখন কোনাে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির কেবল সাহায্য গ্রহণ করা হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। অন্যদিকে যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার জন্য তার সঙ্গে পরােক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতার সাহায্য গ্রহণ করা হয়, তখন তাকে পরােক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। আধুনিক কালের মনােবিজ্ঞানীরা পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে তিনটি সূত্রের কথা বলেছেন। এগুলি হল— 

(i) সান্নিধ্যের সূত্র : এক্ষেত্রে একটি ঘটনা, আর একটি ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়।  

(ii) সাদৃশ্যের সূত্র : এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে মিল থাকলে, একটি কথা মনে এলে অন্যটিও মনে আসে।

(iii) বৈসাদৃশ্যের সূত্র : এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা সহজে মনে আসে। 

[3] প্রত্যভিজ্ঞা: প্রত্যভিজ্ঞা কথাটির প্রকৃত অর্থ হল ‘চিনে নেওয়া। অতীত অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে বর্তমানে চিনে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রত্যভিজ্ঞা। মনােবিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বােধ বা চেতনা, যার অভাব ঘটলে স্মরণক্রিয়া সুনির্দিষ্ট হয় না।।

[4] উদবােধক ও প্রেষণার ফল : প্রেষণা হল  ব্যক্তির মনের এমন একটি তাগিদ যা তাকে কোনাে লক্ষ্যপূরণের জন একটি বিশেষ ধরনের আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কোনাে উদবােধকের দ্বারা প্রেষণা জাগ্রত হলে ব্যক্তি যে নতুন আচরণ, ধারা আয়ত্ত করে, তাকেই শিখন বলা হয়। 

[5] ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া : শিখন একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। চর্চা বা অনুশীলনের বিভিন্ন পর্যায়ে ধাপে ধাপে ব্যক্তির শিখন বা আচরণের পরিবর্তন ঘটে।

[6] ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা পুরণ : শিখন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে, আবার কখনাে-কখনাে। সমাজের চাহিদা পূরণ করে। আবার কখনও-বা একই সাথে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েরই চাহিদা পূরণ করে। এইভাবে শিখন ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদার মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করে। 

[7] পরিণয়নের গুরত্ব : শিখন পরিণমনের ওপর নির্ভরশীল। অনেক সময় পরিণমনের অভাবে শিখন সম্ভবপর হয় না। 

[8] মানসিক প্রক্রিয়া : শিখন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী জ্ঞান, দক্ষতা ইত্যাদি অর্জন করে। অতএব জ্ঞান, দক্ষতা ইত্যাদিকে শিখনের ফল বলা যেতে পারে। 

[9] উদ্দেশ্যমুখিতা ও সলিনযােগ্য : শিখন একটি উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া। এটি আবার সালনযােগ্যও। একটি ক্ষেত্রের শিখন অন্য ক্ষেত্রে সঞ্চালিত হয়। 

[10] নতুনত্ব : ব্যক্তি কোনাে কিছু শিখলে বা তার শিখন ঘটলে, সে যেসকল আচরণ করে, তা বিশ্লেষণ করলে কিছু-না-কিছু নতুনত্ব দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, শিশু পুর্বে জ্বলন্ত মােমবাতিতে হাত দিয়েছিল, অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে বা শিখনের ফলে সে আর তাতে হাত দেবে না। এক্ষেত্রে তার আচরণের মধ্যে নতুনত্ব এসেছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment