প্রত্যক্ষণের উপাদান ও পর্যায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে

প্রত্যক্ষণের উপাদান ও পর্যায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে

উত্তর :

প্রত্যক্ষণের উপাদান ও পর্যায়

প্রত্যক্ষণের উপাদান : যেসকল উপাদান প্রত্যক্ষণে। সহায়তা করে, তাদের প্রত্যক্ষণের উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল — (1) শিখন, (2) সামাজিক মনােভাব (3) পূর্বসংস্কার (4) প্রেষণা (5) মূল্যবােধ (6) প্রত্যাশা (7) কৃষ্টি ও সমাজ। নীচে ওই উপাদানগুলির সম্পর্কে। সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল— 

[1] শিখন : অতীত অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, সক্রিয়তা এবং চর্চার প্রভাব ব্যক্তিজীবনে আচরণ ধারা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হল শিখন। শিখন প্রত্যক্ষণের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিখনের চাহিদাই ব্যক্তির মধ্যে প্রত্যক্ষণ ঘটায়।

[2] সামাজিক মনােভাব : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। সামাজিক মনােভাব তাকে নানান বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী করে তােলে অর্থাৎ প্রত্যক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে। সেই কারণে সামাজিক মনােভাবকে প্রত্যক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

[3] পূর্বসংস্কার : প্রত্যক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পূর্বসংস্কার। ব্যক্তির মনােযােগ পূর্বসংস্কারের দিকে আকর্ষিত হয়। ফলে ব্যক্তি পুর্বসংস্কার সম্পর্কিত বিষয়গুলি প্রত্যক্ষণের জন্য সচেষ্ট হয়।

[4] প্রেষণা : ব্যক্তির নানান ধরনের চাহিদার পরিতৃপ্তির জন্য যে পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া তার আচরণধারাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই হল প্রেষণা। প্রেষণা প্রত্যক্ষণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। আকাঙ্ক্ষা, প্রয়ােজন, আগ্রহ প্রভৃতির দ্বারা। প্রেষিত হয়ে ব্যক্তি প্রত্যক্ষণের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে। 

[5] মূল্যবােধ : প্রত্যক্ষণের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হল মূল্যবােধ। সহযােগিতা, সহানুভূতি, দেশাত্মবােধ, আন্তর্জাতিকতাবােধ প্রভৃতির মূল্যবােধ ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রত্যক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে। 

[6] প্রত্যাশা : প্রত্যক্ষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রত্যাশা। এটি ব্যক্তির প্রত্যক্ষণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। 

[7] কৃষ্টি ও সমাজ : কোনাে ব্যক্তি বা শিশু যে সমাজে জন্মলাভ করে এবং বেড়ে ওঠে, সেই সমাজের রীতিনীতি, ধ্যান ধারণা, সংস্কৃতি তাকে এবং তার প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে।

প্রত্যক্ষণের স্তর বা পর্যায় : প্রত্যক্ষণকে বিশ্লেষণ করলে বেশ কয়েকটি স্তর বা পর্যায়ের সন্ধান পাওয়া যায়। এই স্তর বা পর্যায়গুলি হল— 

[1] পৃথককরণ : প্রত্যক্ষণের প্রথম পর্যায় বা স্তর হল পৃথক্‌করণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – চিনি মুখে দিলে মিষ্টি। স্বাদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ স্বাদ সম্পর্কিত সংবেদনটিকে দর্শন সংবেদন, ঘ্রাণ সংবেদন, শ্রবণ সংবেদন এবং স্পর্শ সংবেদন থেকে আলাদা করা যায়। 

[2] সদৃশকরণ : প্রত্যক্ষণের দ্বিতীয় স্তর বা পর্যায়টি হল সদৃশকরণ। অতীতে এধরনের যেসব স্বাদ সংবেদন পাওয়া গেছে সেগুলির সঙ্গে এই সংবেদনটির মিল বা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই মিষ্টি স্বাদ যে চিনি তা আবিষ্কার করা যায়। 

[3] অনুষঙ ও পুনরুৎপাদন : প্রত্যক্ষণের তৃতীয় স্তর বা পর্যায়টি হল অনুষঙ্গ ও পুনরুৎপাদন। এই স্তরে বা পর্যায়ে ব্যক্তির মনে নানান অভিজ্ঞতার পুনরুৎপাদন ঘটে। পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান অভিজ্ঞতার অনুষঙ্গ রচিত হয়। চিনির মিষ্টতা-র প্রত্যক্ষণের জন্য আগে চিনির স্বাদ উপলব্ধি করে যে ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার পুনরুৎপাদন ও অনুষঙ্গ স্থাপনের মধ্য দিয়ে চিনির মিষ্টতাকে সঠিকভাবে শনাক্ত করার দরকার হয়। 

[4] বস্তচেতনা ও থান-কাল নির্দেশ : প্রত্যক্ষণের চতুর্থ স্তর বা পর্যায়টি হল বস্তুচেতনা ও স্থান-কাল নির্দেশ। এই স্তরে বস্তুটিকে শনাক্ত করার বা চেনার কাজটি সম্পাদিত হয়। এবং সেটির অবস্থানও নির্দেশ করা যায়। যেমন—আমার বাড়ির নিকটবর্তী কোনাে একস্থান থেকে আমার পরিচিত একজন আমাকে ডাকছে। কে ডাকছে এবং কোথায় দাঁড়িয়ে ডাকছে সে-সম্পর্কে আমরা প্রত্যক্ষণ করতে পারি।

[5] বিশ্বাস : প্রত্যক্ষণের শেষ স্তরটি হল বিশ্বাস। প্রত্যক্ষণের দ্বারা যে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা লাভ করা হয়, সেই সম্পর্কে প্রত্যয়ই হল সঠিক অর্থে বিশ্বাস। সংবেদনকে প্রত্যক্ষণের স্তরে নিয়ে। যেতে গেলে এই বিশ্বাসের পর্যায়ে পৌঁছােনাের দরকার হয়। উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের প্রভাবে সৃষ্টি যে-কোনাে সংবেদনকে প্রত্যক্ষণের স্তরে উপনীত করতে গেলে তাকে পরপর পাঁচটি ধাপ বা পর্যায়ের মধ্য দিয়ে। যেতে হয়। এগুলি হল—পৃথকরণ, সদৃশকরণ, অনুষঙ্গ ও পুনরুৎপাদন, বস্তুচেতনা ও স্থানকাল নির্দেশ এবং বিশ্বাস।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment