শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি সংক্ষেপে আলােচনা করাে

শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি সংক্ষেপে আলােচনা করাে

উত্তর :

শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি :

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য থাকে অপরিণত অবস্থায়। তারপর সে যত বড়াে হতে থাকে, ততই সে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্যের অধিকারী হয়ে ওঠে। বৃদ্ধি ও বিকাশের স্বাভাবিক। ফলস্বরূপ শিশু এইসব সামর্থ্যের অধিকারী হয়। এর জন্য তার কোনাে ধরনের প্রশিক্ষণের দরকার হয় না। যেমন 15 মাস বয়স হলেই শিশু সাধারণত হাঁটতে শেখে। এ হল তার বৃদ্ধির স্বাভাবিক পরিণতি। আবার এমন কতকগুলি আচরণ আছে যেগুলি বিশেষ প্রচেষ্টা বা অনুশীলনের দ্বারা আয়ত্ত করতে হয়। বিশেষ প্রচেষ্টা বা চর্চার দ্বারা কোনাে কিছু আয়ত্ত করাকে শিখন বলা হয়। যেমন লেখাপড়া করতে শেখা, সাইকেল চালানাে, সাঁতার কাটা ইত্যাদি আচরণগুলিকে চর্চা বা অনুশীলনের দ্বারা আয়ত্ত করতে হয়। নীচে শিখনের স্বরূপ বা প্রকৃতি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল

[1] প্রচেষ্টা বা অনুশীলননির্ভর : শিখন এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রচেষ্টা বা অনুশীলনের দ্বারা আয়ত্ত করতে হয়। শিশু তার বৃদ্ধি বা জীবন বিকাশের স্বাভাবিক ফল হিসেবে লেখাপড়া শিখতে পারে না। লেখাপড়া শেখার জন্য তাকে বিশেষ প্রচেষ্টা বা অনুশীলন করতে হয়।

[2] পরিবেশের তাগিদ : পরিবেশের তাগিদেই ব্যক্তির শিখনের দরকার হয়। ব্যক্তি জন্মগতভাবে লন্ধ কোনাে আচরণ। পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে যখন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে অসমর্থ হয়, তখন সে বিশেষ প্রচেষ্টা বা অনুশীলনের দ্বারা ফলপ্রসূ আচরণ পদ্ধতি আয়ত্ত করার চেষ্টা করে এবং এইভাবে শিখন প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

[3] আত্নপ্রচেষ্টা ও আসক্রিয়তা : শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির আত্মপ্রচেষ্টা ছাড়া কোনােরূপ শিখন সম্ভবপর নয়। কোনাে কিছু শেখার জন্য ব্যক্তির অন্তরের তাগিদ এবং আত্মসক্রিয়তার দরকার হয়।

[4] উদবােধক ও প্রেষণার ফল : প্রেষণা হল ব্যক্তির মনের এমন একটি তাগিদ যা তাকে কোনাে লক্ষ্যপূরণের জন্য একটি বিশেষ ধরনের আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কোনাে উদবােধকের দ্বারা প্রেষণা জাগ্রত হলে ব্যক্তি যে নতুন আচরণ, ধারা আয়ত্ত করে, তাকেই শিখন বলা হয়। 

[5] ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া : শিখন একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। চর্চা বা অনুশীলনের বিভিন্ন পর্যায়ে ধাপে ধাপে ব্যক্তির শিখন বা আচরণের পরিবর্তন ঘটে।

[6] ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা পূরণ : শিখন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে, আবার কখনাে-কখনাে সমাজের চাহিদা পূরণ করে। আবার কখনও-বা একই সাথে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েরই চাহিদা পূরণ করে। এইভাবে শিখন ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদার মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করে। 

[7] পরিণমনের গুৱত্ব : শিখন পরিণমনের ওপর নির্ভরশীল। অনেক সময় পরিণমনের অভাবে শিখন সম্ভবপর হয় না।

[8] মানসিক প্রক্রিয়া : শিখন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী জ্ঞান, দক্ষতা ইত্যাদি অর্জন করে। অতএব জ্ঞান, দক্ষতা ইত্যাদিকে শিখনের ফল বলা যেতে পারে। 

[9] উদ্দেশ্যমুখিতা ও সলিনযােগ্য : শিখন একটি উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া। এটি আবার সঞ্চালনযােগ্যও। একটি ক্ষেত্রের শিখন অন্য ক্ষেত্রে সঞ্চালিত হয়।

[10] নতুনত্ব : ব্যক্তি কোনাে কিছু শিখলে বা তার শিখন ঘটলে, সে যেসকল আচরণ করে, তা বিশ্লেষণ করলে কিছু-না-কিছু নতুনত্ব দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, শিশু পূর্বে জ্বলন্ত মােমবাতিতে হাত দিয়েছিল, অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে বা শিখনের ফলে সে আর তাতে হাত দেবে না। এক্ষেত্রে তার আচরণের মধ্যে নতুনত্ব এসেছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment