মনোবিদ পিকুনাসের মতে জীবন বিকাশের স্তর
অথবা, মনােবিদ পিকুনাস জীবনবিকাশের স্তরকে কীভাবে ভাগ করেছেন তা লেখাে।
উত্তর:
মনোবিদ পিকুনাসের মতে জীবন বিকাশের স্তর
মনােবিজ্ঞানী পিকুনাসের বয়স অনুযায়ী মানবজীবন বিকাশের স্তরসমূহ নিম্নে উল্লিখিত হল—
1 | প্রাক্-জন্মস্তর | গর্ভসঞ্জার থেকে শুরু করে জন্মাবারপূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। |
2 | সদ্যোজাত স্তর | জন্মের সময় থেকে চার সপ্তাহ |
3 | প্রারম্ভিক শৈশব স্তর | এক মাস থেকে দেড় বছর বয়স পর্যন্ত। |
4 | প্রান্তীয় শৈশব স্তর | দেড় বছর থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত। |
5 | প্রারম্ভিক বাল্যকাল | আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। |
6 | মধ্য বাল্যস্তর | পাঁচ বছর থেকে নয় বছর বয়স পর্যন্ত। |
7 | প্রান্তীয় বাল্যস্তর | নয় বছর থেকে বারাে বছর বয়স পর্যন্ত |
8 | যৌবনাগম স্তর | বারাে বছর থেকে একুশ বছর বয়স পর্যন্ত। |
9 | প্রাপ্তবয়স্ক স্তর | একুশ বছর থেকে সত্তর বছর বয়সপর্যন্ত। |
10 | বার্ধক্য স্তর | সত্তর বছর বয়সের পরবর্তী সময়কাল |
বাল্যকালের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য :
বাল্যকাল জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন পিতামাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্বারা উপযুক্ত নির্দেশদান ও পরামর্শদানের বিশেষ প্রয়ােজন। এই সময়কাল হল স্থিতিস্থাপকতার সময় (6—-12 বছর)। এই বয়সে বালক-বালিকাদের মধ্যে সহ্যশক্তি ও সজীবতা বৃদ্ধি পায়। এই সময়কে বিকাশের সুপ্ত সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিম্নে বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচিত হল—
[1] দৈহিক বিকাশ : এই সময়ে ওজন ও মস্তিষ্কের বিকাশ প্রাপ্তবয়স্কদের সদৃশ হয়। পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তার ফলে এই বয়সের বালক-বালিকারা। অন্যান্যদের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ আচরণ করতে সক্ষম হয়। এই বয়সে শারীরিক ও সালনমূলক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শিশুরা সহজে ক্লান্ত হয় না।
[2] মানসিক বিকাশ : এই বয়সে জ্ঞানতৃয়া বালক-বালিকাদের মধ্যে জাগরিত হয়। বিদ্যালয়ে মুখস্থবিদ্যা ও শিখনে সক্ষমতা অর্জন করে। চিন্তন ক্ষমতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে পরিলক্ষিত হয়। যৌক্তিক চিন্তন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিচারবিবেচনার সঙ্গে। সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিজ্ঞান ও গণিত সম্বন্ধীয়। তথ্যের ক্ষেত্রে আগ্রহের সঞ্চার হয়। অনুকরণ প্রবণতার থেকে আবিষ্কারের প্রবণতা এই বয়সে বেশি দেখা যায়। টিকিট, পাথরের টুকরাে, বিভিন্ন প্রকারের কার্ড সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রবণতা দেখা যায়। 7–8 বছর বয়সে জীবজন্তুর গল্পপাঠের প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এই বয়সে কোনাে বালক-বালিকাই অন্যান্যদের যান্ত্রিকভাবে অনুকরণ করে না। সর্বোপরি, দক্ষতার সঙ্গে স্বাধীনভাবে পরিবেশের সম্মুখীন হয়।
[3] প্রক্ষোভিক বিকাশ; এই বয়সে প্রথম দিকে শৈশবের | মতাে প্রক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। বয়ঃস্তরের শেষের দিকে প্রক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। এই সময়ে ভালােবাসা, আনন্দ, সন্তুষ্টি ইত্যাদি প্রক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যায়।
[4] সামাজিক বিকাশ : এই বয়সস্তরে উচ্চমানের সামাজিকতা অর্জন করে। এই সময়ে সামাজিক সচেতনতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দলগঠনের মানসিকতা খুব প্রবলভাবে দেখা যায়। যে-কোনাে কঠিন পরিস্থিতিতেও দলের কাছে আস্থাবান থাকতে চায়। বালকদের দল বালিকাদের দলের থেকে অনেক বেশি সংগঠিত। এইসময় বালকরা বালকদের সঙ্গে এবং বালিকারা বালিকাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। দলগত সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। আত্মকেন্দ্রিকতার থেকে সহযােগিতাপূর্ণ আচরণ বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
[5] যৌনতার বিকাশ; এই স্তরে ভালােবাসার অভিব্যক্তি নিজের পরিসীমা অতিক্রম করে অন্যদের প্রতি সঞ্চালিত হয়। বালক-বালিকারা পৃথক পৃথকভাবে দল গঠন করে।। উপরে আলােচিত বাল্যকালের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি খুবই প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও বাল্যকালের বিকাশ খুব সুপ্তভাবে হয় তথাপি খুবই গঠনমূলক ও প্রাপ্তবয়স্কের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বাল্যকাল হল সুপ্ত যৌবনাগমের কাল। ব্যক্তিত্ব। ও চরিত্রগঠনের ক্ষেত্রে বাল্যকালের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় বরং চরিত্রগঠনকে সুস্থভাবে সুষ্ঠুপথে পরিচালিত করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।