বিকাশের সঙ্গে পরিণমনের সম্পর্ক কি | বিকাশের নীতিগুলি আলোচনা করো

বিকাশের সঙ্গে পরিণমনের সম্পর্ক কি | বিকাশের নীতিগুলি আলোচনা করো

উত্তর:

বিকাশের সঙ্গে পরিণমনের সম্পর্ক :

বিকাশের সঙ্গে পরিণমনের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সাধারণভাবে বলা যায়, পরিণমন হল পরিবর্তন। জৈবিক পরিবর্তনের শারীরিক বৃদ্ধির ফলই হল পরিণমন। প্রাথমিক বাল্যকালের চরম বিকাশমূলক দিকগুলি হল পরিণমনের ফলাফল। হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা ইত্যাদি পরিণমনের উদাহরণ। এই পরিণমনই হল বিকাশের প্রাথমিক ভিত্তি। সুতরাং পরিণমন ব্যতীত বিকাশ সম্ভব নয়। বলা যেতে পারে, পরিণমনই বিকাশকে কার্যকারী রূপ প্রদান করে।

বিকাশের নীতি :

বিকাশ প্রক্রিয়া যৌক্তিকভাবে এবং অ স্তরে বােধগম্যতা থেকে পরিণমনের দিকে অগ্রসর হয়। বিকাশ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপুর্ণ নীতিগুলি আলােচিত হল —

[1] জীবনের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ থেকে বিকাশের অবিচ্ছিন্ন নীতিকে গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। মাতৃক্রোড় থেকে । পর্যন্ত এই বিকাশ চলতে থাকে। এই অবিচ্ছিন্নতাকে অব রাখতে অভিজ্ঞতার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ প্রতিনিয়ত অবিরামভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করে চলেছে এবং ৯ অভিজ্ঞতাই বিভিন্ন বয়সে মানুষের বৃদ্ধি, শিখন ও পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে এবং বিকাশ প্রক্রিয়া এর মধ্য দিয়েই কার্যকারী
ও ফলপ্রসু হচ্ছে।

[2] ব্যক্তিগত পার্থক্যের নীতি বিকাশ প্রক্রিয়ার এক বিস্ময়কর নীতি। সকল ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে সাদৃশ্যতা থাকে না। যদিও সকল ব্যক্তিরই বিকাশ সংঘটিত হয় কিন্তু বিকাশের হারের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। প্রত্যেক শিশু তার বংশগতি এবং পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে বিকশিত হয়। দুজন শিশুর মধ্যে একই ধরনের দৈহিক, মানসিক এবং প্রাক্ষোভিক বিকাশ পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন বিকাশের হার তাদের মধ্যে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, লিঙ্গভেদে বিকাশের তারতম্য খুবই উল্লেখযােগ্য।

[3] বিকাশ প্রক্রিয়া হল ক্ৰমযৌগিক প্রক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট। সময়ে জীবনে যে পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তা অকস্মাৎ ঘটে । শিশুর জীবনের প্রত্যেকটা স্তর তার পূর্ববর্তী স্তর দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে প্রথমে শিশু অস্পষ্ট উচ্চারণ করে ও পরে অর্থপূর্ণ শব্দ ও বাক্য গঠন করতে শেখে।

[4] যদিও বিকাশ প্রক্রিয়া অবিচ্ছিন্ন তথাপি জীবন বিকাশের প্রত্যেক স্তরের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷

[5] প্রত্যেক ব্যক্তির পৃথক পৃথকভাবে বৃদ্ধি ও বিকাশ হয় কিন্তু এটি এক নির্দিষ্ট পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথমে শিশু হামাগুড়ি দেয়, তারপর দাঁড়াতে শেখে এবং তারপর হাঁটতে শেখে। Gesell পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রত্যেক প্রজাতির আচরণের গঠন-এর বহিঃপ্রকাশ এক নির্দিষ্ট পর্যায়ে ঘটে।

[6] বিকাশ প্রক্রিয়া সংশ্লেষণ থেকেবিশ্লেষণের দিকে অগ্রসর হয়।

[7] শিশুর দৈহিক, মানসিক অথবা সামাজিক বিকাশ অবিন্যস্ত বা আকস্মিক ঘটনা নয়। বিকাশের প্রত্যেক ক্ষেত্রে সংহতি লক্ষ করা যায় এবং শিশুর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিকে বিন্যাস পরিলক্ষিত হয়।

[8] বিকাশ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরগুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একজন সুস্থ শিশুর মানসিক এবং প্রাক্ষোভিক দিক থেকেও ভারসাম্যতা বজায় থাকে কিন্তু একজন দৈহিক প্রতিবন্ধী শিশুর ক্ষেত্রে প্রাক্ষোভিক অসংগতি লক্ষ করা যায়।

[9] Cephalocaudal নীতি অনুযায়ী বিকাশ মস্তিষ্ক থেকে শুরু হয় ও নীচের দিকে নামে অর্থাৎ পা-এর দিকে নামে। এর। কারণ হল শিশুর জীবন বিকাশের প্রথমদিকে মস্তিষ্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসে ও পরে তারা পা-এর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।

[10] বিকাশ কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে প্রসারিত হয়। এজন্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, শিশু প্রথমে তার হাত এবং কনুই ব্যবহার করতে শেখে ও পরে কবজি এবং আঙুলের ব্যবহার অর্জন করে

[11] বিকাশের স্পাইরাল নীতি অনুযায়ী, বিকাশ প্রক্রিয়া কখনােই সরলরৈখিক পথে অগ্রসর হয় না। যখন বিকাশ একটি নির্দিষ্ট স্তরে অগ্রসর হয় তখন বাহ্যিকভাবে বিকাশের উন্নতি বােধগম্য হয় না। পরবর্তীকালে প্রথমে পশ্চাৎদিকে বিকাশ অগ্রসর হয় আবার সম্মুখ দিকে অগ্রসর হয়, এইভাবে স্পাইরাল পদ্ধতিতে বিকাশ সংঘটিত হয়।

[12] শিশুর প্রাথমিক শৈশবকালীন বিকাশ পর্যবেক্ষণ করে। বাল্যকালের বিকাশ সম্পর্কে অনুমান করা যায়। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট স্তরের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী স্তরের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে অনুধাবন করা যায়।

[13] বিকাশ প্রক্রিয়া অবিচ্ছিন্ন হলেও বাল্যকালের বিভিন্ন ব্যাধি এবং প্রাক্ষোভিক অপসংগতি ও প্রক্ষোভগত আঘাত বিছিন্নতা সৃষ্টি করে। উপসংহারস্বরূপ উল্লেখ্য যে, শিশু সুস্থভাবে যাতে পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধান করতে পারে এবং সুসংহত অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হয়, সে-বিষয়ে পিতামাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে যাতে বিকাশ প্রক্রিয়া সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শিশুর সমগ্র জীবনব্যাপী ক্রিয়াশীল থাকে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment