প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর স্বাধীনতা ল্যাংস্টন হিউজ প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে ল্যাংস্টন হিউজের লেখা স্বাধীনতা কবিতার প্রশ্ন উত্তর রয়েছে। কবিতার শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
স্বাধীনতা
ল্যাংস্টন হিউজ
হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
১.১ ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?
উত্তর:- ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘The Weavy Blues’।
১.২ তিনি কোন দেশের রেনেসাঁর অন্যতম নেতা হিসাবে পরিচিত?
উত্তর:- ল্যাংস্টন হিউজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ স্বাধীনতা বলতে কী বোঝো? কী কী বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়োজন বলে তুমি মনে করো?
উত্তর:-
স্বাধীনতা কী? :- ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে স্বাধীনতা শব্দের অর্থ নিজের অধীনতা। অর্থাৎ স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছামত আচার-আচরণের সুযোগ-সুবিধা কে বোঝায়। অধ্যাপক লাস্কির মতে, স্বাধীনতা বলতে এমন একটি পরিবেশ কে বোঝায় যেখানে মানুষ তার ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। দেশের স্বাধীনতা বলতে অন্য জাতির অধীনে না থাকা এবং নিজের মতো করে কাজ ও বেঁচে থাকাকে বোঝানো হয় ৷
কী বিষয়ে স্বাধীনতা প্রয়োজন? :- নিজস্ব মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষা গ্রহণের স্বাধীনতা, যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বাধীনতা, সৎ পথে উপার্জনের স্বাধীনতা। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়োজন ৷
২.২ মানুষ পরাধীন হয় কখন ?
উত্তর:- মানুষ যখন অন্য কোনো মানুষ বা রাষ্ট্রশক্তির অধীনতা স্বীকারে বাধ্য হয়, অর্থাৎ তাকে অপরের বশ্যতা স্বীকার করতে হয়, তখনই সে পরাধীন হয়ে পড়ে। বলা যায়, অন্যের অধীনে নিজের জীবনযাত্রা নির্বাহ করাই হল, পরাধীনতা।
২.৩ পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার পথগুলি কী কী?
উত্তর:- কবি ল্যাংস্টন হিউজ তাঁর ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় বোঝাতে চেয়েছেন পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার প্রথম পথ হল, ভয় না পাওয়া। দ্বিতীয় পথ হল, অন্যায়ের সাথে তথা পরাধীনতার সাথে সমঝোতা না করা। কবির মতে সকলের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। স্বাধীনতা হল একটি শক্তিশালী বীজপ্রবাহের মতো। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন। তাই হারানো মানসিক শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে স্বাধীনতার মূল্য বুঝতে হবে এবং নির্ভয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হবে। তবেই পরাধীন মানুষ স্বাধীনতা পাবে।
২.৪ ‘স্বাধীনতা” কবিতাটির মধ্যে দুটি ‘পক্ষ’ আছে— ‘আমি-পক্ষ’ আর ‘তুমি-পক্ষ’। এই ‘আমি পক্ষ’ আর ‘তুমি-পক্ষ’ – এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। এই ক্ষেত্রে ‘সে পক্ষ’ নেই কেন ?
উত্তর:-
‘আমি পক্ষ’ ও ‘তুমি পক্ষ’ এর স্বরূপ:- কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় ‘আমি পক্ষ’ ও ‘তুমি পক্ষ’ দুটি পক্ষ আছে। এই ‘আমি পক্ষ’ নির্যাতিত, শোষিত পরাধীন মানুষের প্রতিনিধি। অপরদিকে ‘তুমি পক্ষ’ হল অত্যাচারী, শোষক, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিনিধি। যারা অন্যের স্বাধীনতা হরণ করেছে। কবি ‘আমি পক্ষে’র পরাধীন মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সরাসরি আক্রমণ করেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ‘তুমি পক্ষ’কে। কবির মতে সকলের মতো তাদেরও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে।
‘সে পক্ষ’ না থাকার কারণ:- আলোচ্য কবিতায় কবি ‘আমি পক্ষ’ তথা পরাধীন মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন ‘তুমি পক্ষ’ তথা সাম্রাজ্যবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি। এ অভিযোগ যেন স্বাধীনতাকামী মানুষের সরাসরি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি। স্বাধীনতা আনতে গেলে পরাধীন মানুষকেই তাই স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে, অন্য কেউ এসে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে পরাধীন মানুষকে দেবে না। তাই আলোচ্য কবিতায় ‘সে পক্ষ’ এর উল্লেখ নেই।
২.৫ ‘সময়ে/সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন’— কবিতার মধ্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি কার/কাদের কথা বলে তোমার মনে হয়? তারা এ ধরনের কথা বলেন কেন?
উত্তর:- আমার মনে হয় কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উদ্ধৃতিটি ভাগ্যে বিশ্বাসী প্রাচীনপন্থী পরাধীন মানুষদের। প্রাচীনপন্থী পরাধীন মানুষেরা ভাগ্যে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে আজ তারা পরাধীন এটা তাদের ভাগ্যের ফল। আর ভাগ্যের জোরে ভবিষ্যতে এমনিই তারা স্বাধীনতা পাবে। তার জন্য কোনো সংগ্রাম করতে হবে না। আসলে এই প্রাচীনপন্থী মানুষগুলো পরাধীনতাকে মন থেকে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা ভাবে এভাবেই তাদের সারাজীবন কেটে যাবে। একারণে তারা এমন কথা বলে। আসলে তারা যেন স্বাধীনতার মূল্য বুঝতে চায় না। তারা প্রাচীনকালের ধ্যানধারণা আঁকড়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চায়।
২.৬ ‘আগামীকালের রুটি/ দিয়ে কি আজ বাঁচা যায়’— এখানে ‘আগামীকাল’ আর ‘আজ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর:- ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উদ্ধৃতিতে ‘আগামীকাল’ বলতে ভবিষ্যতে দেশ স্বাধীনের স্বপ্নকে বোঝানো হয়েছে। আর ‘আজ’ বলতে বর্তমানে দেশের পরাধীনতাকে বোঝানো হয়েছে। আলোচ্য উদ্ধৃতির মাধ্যমে লেখক যেন পাঠককূলকে বোঝাতে চেয়েছেন কেবলমাত্র ভবিষ্যতে দেশ স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখে বর্তমানের পরাধীনতাকে ঘোচানো যায় না।মানুষের জীবনটা খুবই অল্প সময়ের। মানুষ চায় স্বাধীনভাবে নিজের মতো বাঁচতে। সেটা পরাধীন অবস্থায় সম্ভব নয়৷ তাই কবি বলেছেন আগামীকালের রুটি দিয়ে যেমন বর্তমানের খিদে মেটে না ৷ তেমনি ভবিষ্যতে স্বাধীনতার স্বপ্ন দিয়ে বর্তমানের পরাধীনতার অন্ধকার কাটে না ।
৩. নিম্নলিখিত পক্তিগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো :
৩.১ মৃত্যুর পরে তো আমার ….. প্রয়োজন হবে না।
উত্তর:-
উৎস:- আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতিটি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য:- মৃত্যুতে আমাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে।তাই মৃত্যুর পর জীবনের চাওয়া – পাওয়ার কোনো মূল্য থাকেনা। তাইতো কবি জীবিত অবস্থাতেই অন্যদের মতো স্বাধীনতা পেতে চেয়েছেন। নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন। রক্তমাংস দিয়ে গড়া জীবিত মানুষের চেতনায় স্বাধীনতা বোধ থাকা স্বাভাবিক। মৃতের কোনো সংবেদন, অনুভূতি, চাহিদা নেই। মৃত্যুতে যেন সমস্ত পার্থিব বিষয়ের থেকে মানুষের মুক্তি ঘটে। তাই মৃত্যুর পর স্বাধীনতার কোনো প্রয়োজন হয়না ।
৩.২ স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ।
উত্তর:-
উৎস:- ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে ।
তাৎপর্য:- কবি স্বাধীনতাকে শক্তিশালী বীজপ্রবাহ বলেছেন। বীজের মধ্যেই থাকে বড়ো হওয়ার সম্ভাবনা। আলো, বাতাস ও উত্তাপের সংস্পর্শে বৃক্ষশিশু জন্ম নেয়। ক্রমে তা শাখাপ্রশাখা ও ফুলে ফলে বিকশিত হয়। তেমনি স্বাধীনতার মধ্যেও যেন ভবিষ্যত প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করার, তাকে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ উপহার দেওয়ার সম্ভবনা লুকিয়ে থাকে। কবি যেন বলতে চেয়েছেন এই স্বাধীনতার মানসিকতাই মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে সংগ্রামের প্রবাহের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার তীরে পৌঁছে দেবে।
৩.৩ আমাদেরও তো অন্য সকলের….. জমির মালিকানার।
উত্তর:-
উৎস:- আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উক্তিটি ল্যাংস্টন হিউজের লেখা ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য:- আলোচ্য অংশে ‘আমাদের’ বলতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে নত স্বীকার করা পরাধীন জাতির কথা বলা হয়েছে। কবির মতে বিজয়ী ও ক্ষমতাশালী জাতির মতো পরাধীন মানুষেরও অধিকার রয়েছে নিজের দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচার। যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। প্রয়োজনীয় জমির মালিকানার। এ পৃথিবী কারও নিজের নয়। এখানে সকলের সমান অধিকার। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যকে পদানত করে রাখতে পারে না। এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে কবি যেন সেই বার্তা’ই দিতে চেয়েছেন।
৩.৪ স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন / তোমার যেমন।
উত্তর:-
উৎস:- আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উক্তিটি ল্যাংস্টন হিউজ-এর ‘স্বাধীনতা” কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য:- এই পঙক্তির মধ্য দিয়ে কবি বলতে চেয়েছেন, পৃথিবীতে সকলেরই সমস্ত কিছুতে সমান অধিকার রয়েছে। বিশেষ এক শ্রেণির মানুষ সুখভোগ করবে, অন্যের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করবে, তা হতে পারে না। সেজন্য সেইসব মানুষের সব কিছুতে স্বাধীনতা বা অধিকারের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে কবি নিজেদের স্বাধীনতার প্রয়োজনকে সমানভাবে তাৎপর্যমন্ডিত করে তুলেছে। কবি মনে করেছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যেমন স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে ঠিক তেমনি অন্য সকলের স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে। এই উক্তির মধ্য দিয়ে যেন স্বাধীনতাকামী পরাধীন মানুষের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৪. নীচের প্রতিটি শব্দের ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় করো :
স্বাধীনতা, দুকাঠা, আগামীকাল, বীজপ্রবাহ
উত্তর:-
স্বাধীনতা = স্ব-এর অধীনতা — সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস ।
দু-কাঠা = দুই কাঠার সমাহার — দ্বিগু সমাস ।
আগামীকাল = আগামী যে কাল — সাধারণ কর্মধারয় সমাস ।
বীজপ্রবাহ = বীজ রূপ প্রবাহ — রূপক কর্মধারয় সমাস।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse
চিঠি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Chithi Class 8 Question Answer | Wbbse
গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর | জগদীশচন্দ্র বসু | Class 8 Bengali Gacher Kotha Question Answer | WBBSE
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।