Bengali Bangla Prabandha Rachana আধুনিক ভারতবর্ষে শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আধুনিক ভারতবর্ষে শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভারতবর্ষে আধুনিক ভারতবর্ষে শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগর 

ভূমিকা : 

“বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর বীর।
উদ্বেলিত দয়ার সাগর বীর্যে সুগম্ভীর।”
—-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত 

উনিশ শতকের বঙ্গে যিনি আত্মতেজের মহান অগ্নি প্রজ্বলিত করে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, তিনি প্রাতঃস্মরণীয় মহামানব, বীরসিংহের সিংহশিশু, দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“আমাদের এই মানুষের সমাজে দেবতার চেয়ে অনেক বেশি দুর্লভ মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর”। সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করে নবজীবনের স্রোতধারায় চালিত করার গুরুভার তিনি মাথায় নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কর্তব্যে বজ্রের চেয়েও কঠোর, আবার স্নেহ-মমতায় কুসুমের চেয়ে কোমল—“বাদপি। কঠোরানি মৃদুনি কুসুমাদপি।”

জন্মপরিচয় : বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা ভগবতী দেবী।

অজেয় পৌরুষ ও মানবধর্ম : বিদ্যাসাগরের ঈশ্বর ছিল মানুষ এবং স্বদেশ। তিনি এক সর্ববন্ধনমুক্ত সমাজ ও দেশ দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি অনুভব করেছিলেন যুগ যুগ ধরে হাজারটা সংস্কার, রীতিনীতি দেশের সমাজের ওপর চেপে বসে আছে। তাঁর থেকে মুক্তির জন্য সর্বস্ব পণ করেছিলেন তিনি। শিক্ষাসংস্কারের মাধ্যমে সমাজগঠনই ছিল তার জীবনের প্রাথমিক লক্ষ্য। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সমাজের শিক্ষার অভাব অনগ্রসরতার মূল কারণ। এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন জড়তাগ্রস্ত সমাজের জাগরণের জন্য চাই কার্যকারী প্রগতিশীল পাশ্চাত্য শিক্ষা। তাই শিক্ষার আলােক বিকীর্ণ করে অজ্ঞতাজনিত কুসংস্কার দূর করাই ছিল বিদ্যাসাগরের সমাজসংস্কারের প্রধান লক্ষ্য। তাই শিশুশিক্ষা ও নারীশিক্ষার জন্য তিনি সচেষ্ট হন এবং প্রকৃত লােকশিক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করেন। যুগােপযােগী শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি একক প্রচেষ্টায় মেট্রোপলিটন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু বিদ্যালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। বহু  নারীশিক্ষা কেন্দ্র ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি নারীসমাজের মুক্তি ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি নারীদের দুর্দশার কারণ যে অশিক্ষা ও শিক্ষাহীনতা তা বুঝেছিলেন। তাই তাে তিনি নারীশিক্ষা বিস্তারে তার অর্জিত অর্থের বহুলাংশ ব্যয় করেছিলেন। নারীমন থেকে কুসংস্কার দূর করার জন্য তাদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারও ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

শিক্ষার প্রসার ও গ্রন্থরচনা : শিক্ষার মধ্যেই আছে সমাজের মুক্তির চাবিকাঠি, এই কথা বিদ্যাসাগর বিশ্বাস করতেন। শিশুদের শিক্ষার জন্য তিনি রচনা করলেন ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘আখ্যানমঞ্জরী’, ‘চরিতাবলি’, ‘বােধােদয়’ প্রভৃতি গ্রন্থ। আরও পরে লিখলেন ‘সীতার বনবাস’, শকুন্তলা প্রভৃতি গ্রন্থ। শিক্ষা বিভাগের পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করার সময় তিনি বাংলার দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার দুরবস্থা সরকারের নজরে আনেন। কখনও সরকারের সহযােগিতায়, কখনও-বা একক প্রচেষ্টায় তিনি বহু প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিধবাবিবাহ প্রতিষ্ঠা ও সমাজসংস্কার : বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে শিক্ষাব্রতী ও সমাজসংস্কারক। বিধবাবিবাহ প্রচলন ও বাল্যবিবাহ রােধ ছিল তাঁর বিশেষ কীর্তি। এ ছাড়া কৌলীন্য প্রথা ও বহুবিবাহের তিনি ছিলেন ঘােরতর বিরােধী। 

বাংলা গদ্যের উন্নতি: শ্রী ছাঁদহীন বাংলা ভাষাকে সংযত ও সুবিন্যস্ত করে বিদ্যাসাগরই শিল্পরূপ দান করেছিলেন। তাই তিনি বাংলা গদ্যের জনক নামে আখ্যাত। বিদ্যাসাগর ছিলেন প্রকৃত হিউম্যানিস্ট, ফিলানথ্রোপিস্ট (Philanthropist —মানবহিতৈষী)। তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি ছিল মানবকল্যাণমুখী। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“তাঁর শিক্ষাবিস্তারে কেন্দ্রীয় মূল্যমান ছিল মনুষ্যত্ববােধ।” এটাই আধুনিক শিক্ষাচিন্তারও মূলকথা। 

উপসংহার: ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে এই মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণ ঘটে। শিক্ষাসংস্কার, আধুনিক শিক্ষার প্রচলন, নারী ও শিশু শিক্ষার বিস্তার ও ১ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের সক্রিয় ভূমিকাটি আজও দেদীপ্যমান।

আরো পড়ুন

বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাঙালির উৎসব/বাংলার উৎসব – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার সংস্কৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment