বাঙালির উৎসব/বাংলার উৎসব – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাঙালির উৎসব/বাংলার উৎসব

ভূমিকা : সুজলা-সুফলা যে বাংলাদেশের ছবি বঙ্কিমচন্দ্র এঁকেছেন তার বিপরীত প্রান্তের অন্য এক ছবি এঁকেছেন মুকুন্দ চক্রবর্তীও—“শিশু কাদে ওদনের তরে। আসলে বাঙালি সুখ-সম্পদশালী বােধহয় কোনাে দিনই ছিল না। তাই বাঙালি পরিবার মানেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে হরিহর-সর্বজয়ার (পথের পাঁচালী) পরিবার। এ জীবনে অভাব আছে, দারিদ্র্য আছে। মহামারি, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তাকে বারবার বিপন্ন করেছে। তবু বাঙালি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে প্রাণের স্পন্দনে, উৎসবে। বাঙালি এই উৎসবের রঙিন দিনগুলি থেকেই সঞ্জয় করে নিয়েছে তার বাঁচার উপাদান।

উৎসবের নানা রূপ : বাঙালির জীবনে উৎসব নানা রং নিয়ে আসে। ধর্মীয় উৎসবের রং আর ঋতু উৎসবের রং এক নয়। তেমনি সামাজিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব বা জাতীয় উৎসবে—প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা রং, স্বাদ বা মেজাজ নিয়ে আসে বাঙালির মনের দরজায়। আর এই উৎসবের মধ্য দিয়েই বাঙালি অভাব-অনটনের মধ্যেও খুঁজে নেয় প্রাণের রসদ।

ধর্মীয় উৎসব : ধর্মপ্রাণ বাঙালি জীবনযাপনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মীয় অনুশাসন আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলে। তাই ধর্মকেন্দ্রিক উৎসবগুলিই বাঙালি জীবনকে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করে। উৎসবগুলি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সমস্ত স্তরের সমস্ত ধর্মের মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়। এ জাতীয় উৎসবগুলির মধ্যে আছে দুর্গাপুজো, সরস্বতীপুজো, কালীপুজো প্রভৃতি। এই পুজোগুলিকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়াও রয়েছে চণ্ডী, মনসা, শীতলা, দক্ষিণ রায়, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, রাস পূর্ণিমা, রাখি পূর্ণিমা, চড়ক-গাজন প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক উৎসব। এর সঙ্গে রয়েছে বাঙালি মুসলমানদেরও নানা ধর্মীয় উৎসব। যেমন ইদলফেতর, ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত প্রভৃতি। এই উৎসবের দিনগুলিতে অন্য ধর্মের মানুষেরাও আনন্দ ভাগ করে নেন। খ্রিস্টানরা পালন করেন বড়ােদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে। বড়ােদিনের উৎসব এখন সমস্ত বাঙালির সাধারণ উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে নানকজয়ন্তী, বুদ্ধজয়ন্তী, পরেশনাথের উৎসব। 

সামাজিক ও ঋতু উৎসব : বাঙালি শুধু ধর্মীয় আবেগপ্রবণ জাতি নয়, সেই ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে তার নানা পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠান। যেমন অন্নপ্রাশন, বিবাহ, জামাইষষ্ঠী, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়ােজনের সঙ্গে জড়িত এই উৎসবগুলিতে সমগ্রভাবে গােটা বাঙালি সমাজ যুক্ত না-হলেও বহু মানুষই এগুলিকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠে। নানা ঋতুকে ঘিরেও উৎসবে মেতে ওঠে বাঙালি। বর্ষামঙ্গল, পৌষমেলা, নবান্ন, নববর্ষের মতাে নানা ঋতুকেন্দ্রিক উৎসবের মধ্য দিয়ে দুঃখ, দারিদ্র্য, অভাবপীড়িত বাঙালি নতুন করে নব আনন্দে জেগে ওঠে।

উপসংহার : বাঙালি মাত্রই উৎসবপ্রিয়। তাই যে-কোনাে বিষয়কেই তারা উৎসবে রূপায়িত করে। একালে ঐতিহ্যবাহিত উৎসবগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যকে মনে রেখে কিছু নাগরিক উৎসবের সূচনা ঘটেছে। যেমন—পিঠেপুলি উৎসব, ইলিশ উৎসব, মাটি উৎসব ইত্যাদি। আবার এরইসঙ্গে কিছু জাতীয় দিবসকেও উৎসবের চেহারা দেয় বাঙালি মন। যেমন—১৫ আগস্ট, ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি, ২৫ বৈশাখ-এর মতাে দিনগুলিতে বাঙালি মাত্রই সকাল হলেই উৎসবের মেজাজে জেগে ওঠে। নানা সাংস্কৃতিক উৎসবকেও বাঙালি তার জীবনযাত্রার অঙ্গা করে তুলেছে। এর মধ্যে চলচ্চিত্র উৎসব, নাট্যোৎসব, কবিতা উৎসব, বইমেলা উৎসব উল্লেখযােগ্য।

আরো পড়ুন

জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার সংস্কৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় উপন্যাস – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় কবি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় লেখক – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment