তােমার প্রিয় কবি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় কবি

ভূমিকা: মানুষের ভালােলাগা, মন্দলাগা তার ব্যক্তিগত অনুভূতির ব্যাপার। আমার প্রিয় কবি শুধু নগরসভ্যতার নাগরিক কবি নন, আবার নিরাভরণ গ্রামবাংলার শুধু প্রকৃতিপ্রেমিক কবিও নন, তাঁর কবিতায় যেমন প্রেম আছে তেমনি অপ্রেমের কথাও তিনি বলেন, ভালােবাসার পাশাপাশি রণরক্ত সফলতা তার কবিতাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ আমার প্রিয় কবি। 

ছাত্রজীবন: জীবনানন্দের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালে। বাবার নাম সর্বানন্দ দাশ, মা লেখিকা কবি কুসুমকুমারী দাশ। ১৯০৮-এ ব্রজমােহন স্কুলে ভরতি হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ১৯১৯-এ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাশ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। ১৯২১-এ এখান থেকেই ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাশ করেন।

কর্মজীবন: কর্মজীবন শুরু করেন ১৯২২-এ। সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন ১৯২৮ পর্যন্ত। বিভিন্ন সময়ে খুলনা জেলার বাগেরহাট কলেজে, দিল্লির রামযশ কলেজে, খড়গপুর কলেজে, বড়িশা কলেজে পড়ান। অবশেষে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে হাওড়া গার্লস কলেজে আমৃত্যু অধ্যাপনা করেন।

জীবনানন্দের কাব্যচর্চা জীবনানন্দ দাশের মুদ্রিত কবিতা ‘বর্ষ আবাহন’ সত্যানন্দ সম্পাদিত “ব্ৰত্মবাদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নিয়মিত লেখা শুরু করেন ১৯২৪-২৫ থেকে। কল্লোল, কালিকলম, প্রগতি, পরিচয়, কবিতা, চতুরঙ্গ, পূর্বাশা প্রভৃতি নানা পত্রপত্রিকায় লিখতেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়েছে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), ‘বনলতা সেন (১৯৪২), রূপসী বাংলা (১৯৫৭), ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১) ইত্যাদি।

জীবনানন্দের স্বাতন্ত্র্য : রবীন্দ্র-সমসাময়িক কালে বাংলা কবিতা মুক্তির পথ খুঁজছিল। খানিকটা অসচেতনভাবে নজরুল ইসলাম, মােহিতলাল মজুমদার এবং যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রবীন্দ্র কাব্যকলাকে পাশে সরিয়ে রেখে যে কবিতা লেখা যায় তার একটা মেঠো রাস্তা দেখিয়েছিলেন। এক ব্যতিক্রমী কাব্যসাধনা শুরু করলেন এঁরা। এঁদের এই ব্যতিক্রমী কাব্যসাধনা পরিণতি পেল সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে এবং জীবনানন্দ দাশের মধ্যে। এঁদের মধ্যে জীবনানন্দ একেবারেই পঞ্চম কবি। জীবনানন্দের কাব্যে যেমন রূপ-রস-গন্ধকে অনুভব করা যায়, তেমনি লক্ষ করা যায় তার ইতিহাস সচেতনতা, সমাজ সচেতনতা। আর আছে মৃত্যুচেতনাজাত এক ধরনের নাগরিক বিচ্ছিন্নতাজনিত যন্ত্রণা, ফলে এক ধরনের আত্মিক সংকট তাঁর মধ্যে আমরা লক্ষ করি। বাস্তবতা ছাড়িয়ে পরাবাস্তবতার হাত ধরে জীবনানন্দ নতুন আধুনিকতার জন্ম দিলেন।

কেন প্রিয়: জীবনানন্দের কবিতায় আন্তর্জাতিক চেতনা, ইতিহাসবােধ, পৌরাণিক অনুভূতি থাকলেও তিনি ভুলে যাননি তাঁর দেশ-মাটি-মানুষের কথা। এই সুজলা-সুফলা বাংলা, শ্যামল বনছায়া, বাংলার লখিন্দর-বেহুলার গল্প, গাঙুড়ের নীল জল, কিশােরীর চাল ধােয়া হাতের গন্ধ, লাল ফুল, দোয়েল-ফিঙের নাচ—সবই উঠে আসে তার কবিতায়। এখানেই জীবনানন্দ হয়ে ওঠেন বাঙালির কবি। একারণেই জীবনানন্দ আমার এত প্রিয় কবি।

উপসংহার : শতাব্দীর ব্যবধানে দাঁড়িয়ে আজ নজরুল ইসলামকে (১৮৯৯) মনে হয় পুরােনাে দিনের কবি, সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে-কে মনে হয় শিক্ষিতজনের কবি। কিন্তু জীবনানন্দ আপামর বাঙালির কবি। জীবনানন্দকে তাই আমাদের বহন করতে হয় না, তিনিই আমাদের বহন করে নিয়ে চলেন দুঃখ থেকে সুখে, সুখ থেকে আনন্দে, আনন্দ থেকে সাহিত্যরসের অমৃতলােকে।

আরো পড়ুন

তোমার প্রিয় উপন্যাস – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় লেখক – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবাংলার হস্তশিল্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইমেলা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

4 thoughts on “তােমার প্রিয় কবি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা”

  1. “আমার দেখা একটি মেলা” রচনা চাই। ২৪/১১/২০২২ তারিখের মধ্যে। আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষায় ম্যাম আমাদের এই রচনা লিখতে বলছেন। অন্যান্য website এ দেখলেও, আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। আপনি যদি লিখে দেন তাহলে খুব ভালো হয়।

    Reply

Leave a Comment