ভ্রমণের মুল্য | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভ্রমণের মুল্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভ্রমণের মুল্য

উত্তর:

ভ্রমণের মুল্য

চেনাজানার সীমানা থেকে বেরােনাের নামই ভ্রমণ। ভ্রমণ মানে ইচ্ছেডানায় মন লাগিয়ে “হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনােখানে।” প্রথমত মনের পথ ধরে, তারপরে ভূগােল ইতিহাসকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘুরে আসা।

ভ্রমণ মানে অজানা অচেনার পথ ধরে অভিজ্ঞতার বিচিত্র সঞ্চয়। সম্প্রদায়, ভাষা-নির্বিশেষে নানা মানুষের জীবনধারা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের সুযােগ করে দেয় ভ্রমণ। তাদের বিচিত্র পােশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ধর্মাচরণের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’-ই যে মানবসভ্যতার মূলমন্ত্র তার ধারণা সম্ভব হয় ভ্রমণের মাধ্যমেই। এর ফলে মানবমনের আত্মপ্রসারণ ঘটে, গড়ে ওঠে জাতীয়তাবােধ ও সমষ্টিগত ঐক্যের ধারণা, যা ব্যক্তিকে তার আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্তি দেয়।

শুধু তাে মানুষ নয়, পাহাড়-জঙ্গলসমুদ্র-মরুভূমি দিয়ে সাজানাে যে বিশ্বপ্রকৃতি, ভ্রমণের মাধ্যমে তার সঙ্গেও পরিচয় ঘটে। এই পৃথিবীর বাঁকে বাঁকে সুন্দর নিজেকে সাজিয়ে রেখেছে। তার সান্নিধ্যে মানুষই সুন্দর হয়ে ওঠে, তার কল্পনা সঞ্জীবিত হয়।

ভ্রমণ মানুষকে তার চেনা পরিসর ছেড়ে এক বৃহত্তর জগতে নিয়ে যায়। বাইরের জগতের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস-ভূগােলের সত্যকে নিজের মন দিয়ে উপলদ্ধি করা যায় ভ্রমণের মাধ্যমে। শিক্ষা হয়ে ওঠে আনন্দের।

ধরাবাঁধা জীবনের ক্লান্তি আর একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয় ভ্রমণ। দ্রুতগতির জীবনে নতুনভাবে প্রাণশক্তি আহরণ করতে ভ্রমণের কোনাে বিকল্প নেই। ধ্যানমগ্ন পাহাড়ের নিঃসীম নির্জনতা, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ, জঙ্গলের রহস্যময় জীবনে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। ক্লান্ত দৈনন্দিনতায় জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। তথাকথিত নাগরিক সভ্যতার কৃত্রিম অহংকার চুর্ণ করে জীবন তার পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয় ভ্রমণের মাধ্যমেই। লাদাখের কর্মা, লালচকের ইরফান আর দার্জিলিং-এর সাইমনের সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরি করে দেয় এই ভ্রমণ। চেনার একসুতােয় গাঁথা পড়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা। হজরতবালের মসজিদে, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে কিংবা হেমিসের গুম্ফায় বুকের কাছে হাত নিয়ে মানুষ যখন প্রার্থনা করে—সে প্রার্থনা ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে নিবেদিত হয় দেবতার কাছেই।

পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে এভাবেই জীবন বহমান থাকে দশটা-পাঁচটার প্রাত্যহিকতার পরে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়ার জন্য। তখন আমরা কেউ কলম্বাস, কেউ লিভিংস্টোন। অচেনার কাছে আঁচল বিছিয়ে কুড়িয়ে নিই অজানার নুড়ি-পাথর।

আরো পড়ুন

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং এবং ছাত্র সমাজ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

এ জীবন চলতে চলতে | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment