Bengali Bangla Prabandha Rachana ভূস্বর্গ ভূমিকম্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ভূস্বর্গ ভূমিকম্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ভূস্বর্গ ভূমিকম্প

ভূমিকা : 

“ভূস্বর্গ কাশ্মীরে ভূমিকম্প খেলা,
সহসা চমকে দিল প্রকৃতির লীলা।” 

সেদিনের তারিখটা ছিল ৯ অক্টোবর, ২০০৬, রবিবার। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে চলছে শারদীয়া পুজোর আয়ােজন। আকাশের রােদুরে সােনালি আমেজ। বাতাসে শিউলির গন্ধ। আসন্ন পুজো নিয়ে আমরা তখন স্বপ্ন-বিভাের। এমন একটি দিনে প্রভাতী সংবাদপত্র হঠাৎ বহন করে নিয়ে এল ভয়ংকর এক দুঃসংবাদ। কাশ্মীরের উরি’ অঞ্চলের সবটাই ভূমিকম্পের প্রকোপে তলিয়ে গেছে ভূগর্ভে। তাসের ঘরের মতাে ভেঙে পড়েছে বসতিগুলি। হাজার হাজার মানুষ হারিয়ে গেছে, সমাধিলাভ করেছে মাটির গভীরে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

অতীতের সঙ্গে তুলনা: ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ছিল এমনই এক ভয়ংকর ভূমিকম্পের দিন। কেঁপে উঠেছিল গুজরাটের মাটি। তাসের ঘরের মতাে ভেঙে পড়েছিল বহুতল বাড়িগুলি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের মতাে ২০০১-এ যেন তারই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। কাশ্মীরে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ তীব্রতা ছিল ৭.৫। 

ভূকম্পনের উৎস : খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এই ভূকম্পনের উৎস হল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৯৫ কিলােমিটার উত্তর-পশ্চিমে শিপাল মসজিদ এলাকাটি। ওই অঞ্চলটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফফরাবাদের খুবই কাছে। শােনা গেল, কম্পনের ধাক্কায় শহরের ‘মারগাল্লা টাওয়ার’ আবাসনের দুটি দশতলা ব্লক ধসে পড়েছে তাসের ঘরের মতাে এবং সেই স্কুপের তলায় চাপা পড়েছে কয়েকশাে লােক। জানা গেল, ইসলামাবাদে ভূমিকম্পের পর ১২টি আফটার শক হয়েছে। মানুষ এবং সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এককথায় অপূরণীয়। 

কেন এই ভূমিকম্প? : ভূমিকম্পে কত লােক যে মারা গেছে, তা বলা সম্ভব নয়। কাশ্মীর সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। খবরে প্রকাশ পেল অধিকৃত কাশ্মীরে ৯০ শতাংশ বাড়িই মাটিতে মিশে গেছে। মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে এক লক্ষ। গৃহহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। মাটির নীচ থেকে শােনা যাচ্ছে বেঁচে থাকা মানুষদের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর। ভূতত্ত্ববিদরা জানালেন, কাশ্মীর ২ ও সন্নিহিত এলাকায় ইন্ডিয়ান প্লেটটি ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের দিকে হঠাৎ বেশ খানিকটা সরে যাওয়াতেই ওই ভয়ংকর ভূমিকম্প সংঘঠিত হয়েছে।

খাদ্যের অভাব : অধিকৃত কাশ্মীরের বেশিরভাগ জায়গা হল শীতপ্রধান, দুর্গম, বরফে ঢাকা। বেশিরভাগ লােকই গরিব। এদের মাঝেই রয়েছে আবার আতঙ্কবাদীদের শিবির। প্রবল ভূকম্পনে এদের শিবিরগুলিতেও ধস নামল। খাদ্য, পথ্য, আশ্রয় এবং ওষুধের জন্য পড়ে গেল হাহাকার।

ত্রাণসামগ্রী : এই ভয়ংকর ভূমিকম্পে যাঁরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে গােটা বিশ্ব। এগিয়ে এসেছে আমেরিকা সহ ভারত, চিন, তুরস্ক, জাপান, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান, স্পেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া। এগিয়ে এল বড়াে-ছােটো আরও নানান দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জ বিভিন্ন দেশের কাছে সাহায্য চেয়ে বিশেষ তহবিল গঠনের জরুরি ডাক দিয়েছে।

উপসংহার : পাকিস্তানের জনগণের এই দুর্দিনে ভারতবর্ষ শিথিল করে দিয়েছে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা। এই রেখা অতিক্রম করে ভারতের সাহায্যের হাত পৌছে গেছে আর্ত মানুষদের সেবায়। ভারতীয় সৈনিকরা বন্দুক ফেলে ওপার কাশ্মীরে পৌছে দিয়েছে খাবার, ওষুধ, পানীয়, শীত থেকে বাঁচবার পােশাক এবং কয়েক হাজার তাঁবু। বিপদের দিনে বিপদগ্রস্ত প্রতিবেশীর সেবায় তার প্রতিবেশীই যে এগিয়ে আসে, তা দেখিয়ে দিল ভারত। এটাই তাে মানুষের পরিচয় যা ভারত চিরকাল দিয়ে এসেছে।

আরো পড়ুন

পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও তার প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি উৎসব স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ছুটির দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!