তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন
ভূমিকা: দুর অতীতকে জীবন্ত করে বর্তমানকে ভুলিয়ে দিতে চায় স্মৃতি। ভালাে লাগে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে। স্মৃতিচারণে যে অধ্যায়টি আমার কাছে সবচাইতে আকর্ষণীয়, তা হল আমার বিদ্যালয়জীবন। বিদ্যালয়জীবন মানুষের সমগ্র জীবনের মধ্যে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির চড়াই উতরাই ভাঙতে ভাঙতে আজ দশম শ্রেণিতে এসে পৌঁছেছি l কিন্তু বিদ্যালয়জীবনের প্রথম দিন বললেই স্মৃতির মন্দিরে শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলি এমনইভাবে প্রতিভাত হয়ে ওঠে যেন কালকেরই ঘটনা; কত-না সুখস্মৃতি, কত-না বেদনাময় মুহূর্ত ধরা দেয় স্মৃতিতে।
বিদ্যালয়ের প্রথম দিন : বিদ্যালয়জীবনের প্রথম দিন শুরু হয়েছিল আমার টাকি সরকারি বিদ্যালয়ে। নিতান্ত ছােটো ছিলাম আমি। বাবার হাত ধরে চোখ ছলছল মুখে স্কুলের নতুন পােশাক পরে সকাল সকাল স্কুলে উপস্থিত হলাম। যতদূর মনে পড়ে স্কুল সাড়ে ছটায় শুরু হত। তখনও স্কুলের গেট পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করিনি। ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজতেই বাবা হাত ছেড়ে দিলেন। নিরুপায় হয়ে আর পাঁচজনের সঙ্গে আমিও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রার্থনা সংগীতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম। প্রার্থনা শেষে শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখর হয়ে উঠল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ক্রমশ অচেনা মুখগুলাে যেন নিজেদের মধ্যে পরিচয় করে নিতে চাইল। প্রথম দিনই আমার বেশ কয়েকজন নতুন বন্ধু হয়ে গেল। স্কুলে ভরতি হয়েছিলাম ক্লাস টু-তে। ইনফ্যান্ট ও ওয়ান স্কুলের বই নিয়েই বাড়িতে মায়ের কাছে পড়াশােনা শুরু। যাইহােক বিদ্যালয়ের সেই প্রথম দিনে শিক্ষক মহাশয়েরা কেবল আমাদের সঙ্গে পরিচয় করতে করতেই ক্লাস সমাপ্ত করে দিয়েছিলেন।
প্রথম দিনের উল্লেখযােগ্য ঘটনা : শ্রেণিকক্ষে আমিই হয়তাে একদম নতুন ছিলাম যে-কিনা ওই বিদ্যালয়ে ওয়ান না-পড়ে টু-তে এসে ভরতি হয়েছে। ফলত শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেই প্রতিযােগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল আমাকে, বসাকে কেন্দ্র করে। বসার জায়গা তাে পেয়েছিলাম, কিন্তু আমার লক্ষ ছিল আমার পাশে বসা ছেলেটি যেখানে জানলায় ব্যাগ রেখেছিল তার সামনে আমার স্কুলব্যাগটা রাখব। যেমনই ভাবা তেমনই কাজ। ছেলেটির অনুপস্থিতিতে তার বাগের ওপর চাপ দিয়ে আমি আমার উদ্দেশ্যপূরণ করতে গেলাম। কিন্তু ঘটল অন্য বিপদ। তার ব্যাগের ভিতরে রাখা স্লেটটি যে ভেঙেছে তার শব্দ আমি পেলেও ভয়ে চুপ করে ভালােমানুষ হয়ে বসে রইলাম। ক্লাস শুরু হলে কৃয় স্যার যে-যার স্লেট-পেনসিল বের করতে বললেন। স্লেট বের করতে গিয়ে ভাঙা স্লেট দেখে পাশে বসা ছেলেটি তাে রীতিমতাে হতভম্ব, আমিও ভয়ে কুঁকড়ে রইলাম। তদন্তে কেউ ধরা না-পড়তে সম্পূর্ণ দোষ গিয়ে পড়েছিল সেই ছেলেটির নিজের ওপরেই। যেন সে তার নিজের স্লেটটি নিজেই ভেঙে ফেলেছিল। বাড়িতে গিয়ে হয়তাে সে শাস্তিও পেয়েছিল। ভাবলে আজও মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
উপসংহার : এটিই ছিল আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন, জীবনের প্রথম কোনাে স্মরণীয় মুহূর্ত। ছুটি না-হওয়া পর্যন্ত বাবা গেটের বাইরে স্কুলসংলগ্ন একটি গাছের নীচে বসেই ছিলেন। ছুটি শেষে বাইরে বেরােলে আমাকে জড়িয়ে ধরেন, স্নেহের চুম্বন দেন। কিন্তু আমি প্রথম দিনেই ক্লাসে কি কাণ্ড ঘটিয়েছি ভয়ে বলতে পারলাম না, কিন্তু আমার চোখেমুখে যেন সেই অন্যায় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। বাবা আমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করতেই সব গড়গড় করে বলে ফেললাম। দেখলাম বাবা ধমক দেওয়ার জায়গায় আমার ভুলটা বুঝিয়ে পরের দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে পাশে বসা বন্ধুকে সকল সত্যিটা জানাতে বলেন এবং একটা নতুন স্লেটও দিয়ে দেন। আমার মন থেকে যেন অপরাধের বােঝাটা নেমে যায়।
আরো পড়ুন
ভূস্বর্গ ভূমিকম্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
একটি উৎসব স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
ছুটির দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।