একটি উৎসব স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি উৎসব স্মৃতি

ভূমিকা : 

“উৎসব মানে এক মিলনের মেলা,
কিছু দেওয়া, কিছু নেওয়া, জীবনের খেলা।” 

উৎসবপ্রিয় বাঙালি জাতির উৎসবের শেষ নেই। আমাদের ‘বারাে মাসে তেরাে পার্বণ।’ এর কিছু সামাজিক উৎসব, কিছু ধর্মীয় উৎসব। নির্ভেজাল সামাজিক উৎসব বলতে জন্মদিন পালন, বিবাহ উৎসব, নববর্ষ উদ্যাপন ইত্যাদিকে বােঝায়। এরকম একটি সামাজিক উৎসবের স্মৃতি আমার হৃদয়-মন জুড়ে আছে। 

উৎসবের প্রয়ােজনীয়তা : উৎসব আনন্দের উৎস। মানুষের গতানুগতিক জীবনযাত্রায় উৎসব নিয়ে আসে নতুন প্রাণের গতি। উৎসব তাই সবদেশে সবকালেই সমান প্রাসঙ্গিক। যে-কোনাে উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণির আবালবৃদ্ধবনিতা একসঙ্গে মিলিত হয়। উৎসবের দিনে দূর হয়ে যায় সর্বপ্রকার ভেদাভেদ। উৎসব দূরকে নিকট করে, পরকে আপন। মানুষের জীবনের প্রয়ােজনভেদে উৎসব নানা ধরনের হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণের উৎসবেরই প্রাথমিক লক্ষ্য আনন্দ উপভােগ ও মিলন। আমার গতানুগতিক জীবনধারায় এমনই একটি উৎসবের মুহূর্তে কিছু স্মৃতিকথা আজও মনে পড়ে। 

বন্ধুর জন্মদিন : উৎসবটি ছিল আমাদের এক বন্ধু নিখিলেশের জন্মদিনকে ঘিরে। নিখিলেশ হল আমাদের ক্লাসের সেরা ছাত্র। লেখাপড়ায় সে যেমন দুর্দান্ত, খেলাধুলাতেও সে কিছু কম নয়। সবদিক থেকেই সে ছিল সেরা। সারা মুখজুড়ে সুন্দর একঝলক হাসি। বাইরের দিক থেকে দেখলে তাকে খুব সুখী বলেই মনে হত। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার ছিল বড়াে দুঃখ। সেই দুঃখের কথা কোনােদিন সে আমাদের বলেনি। যেদিন জানতে পারলাম, সেদিন তার জন্মদিনের উৎসব। সে পিতৃহীন। সময়টা ছিল শীতের শেষাশেষি। নিখিলেশ আমাদের জন্মদিনের উৎসবে নিমন্ত্রণ জানাল।

উৎসবের মাঝে : উপহার দেওয়া : আমাদের সেকশানের তিরিশ জন বন্ধু গেলাম ওদের বাড়ি, ছােট্ট বাড়ি। উৎসবে মাতােয়ারা। নিখিলেশের মা আমাদের খুব আদর করলেন। খুব খুশি তিনি। নিখিলেশের বােনটিও দাদার মতােই মিশুকে। দাদার জন্মদিনে সেও ভীষণ খুশি। এবারের জন্মদিনে নিখিলেশের মা তাকে উপহার দিয়েছেন নতুন একসেট বই। উমাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনি। উপহার পেয়ে নিখিলেশ খুবই খুশি। ছােট্ট বােনটি দাদাকে উপহার দিয়েছে বিভূতিভূষণের ‘চাদের পাহাড়। নিখিলেশকেও আমরা উপহার দিলাম গানের ক্যাসেট, দিলাম রাশি রাশি ফুল। সন্ধ্যাবেলাটি ভরে উঠল গানে গানে। বাতাস ভারি হল ফুলের গন্ধে। মাঝে মাঝে নানাধরনের খাবার আসতে থাকল। হাসিতে, গানে আমরা ভরিয়ে তুললাম নিখিলেশের জন্মদিনের উৎসব। শেষে ভুরিভােজ করে বাড়ি ফিরলাম।

ফেরার সময় নিখিলেশকে বিস্তর শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম, পরের বছর আবার ডাকিস। নিখিলেশ হাসতে হাসতে বলল, “আসছে বছর তােমাদের নিমন্ত্রণ করা যাবে না। নিমন্ত্রণ করব আবার চার বছর পরে। আমরা বললাম, চার বছর পরে?—কেন?’ সে হাসতে হাসতে বলল, কারণ একটাই, আমার জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি।হাসতে হাসতে কথাগুলি নিখিলেশ বলল বটে, কিন্তু তার অন্তরের গভীর থেকে বেরিয়ে এল একটি গভীর দীর্ঘশ্বাস, যা আমাদের কারও চোখ এড়াল না। আনন্দের মাঝে একটা করুণ উদাস সুর হৃদয়বীণার তারে ঝংকৃত হল।

উপসংহার : নিখিলেশ এখন চাকরির সূত্রে বাইরে থাকে মাকে নিয়ে। তার সঙ্গে এখনও আমার যােগাযােগ আছে। স্মৃতিতে আজও সেই উৎসবের কথাটি গােপনে বিদ্ধ হয়ে আছে—যা কখনােই ভােলবার নয়।

আরো পড়ুন

তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ছুটির দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment