প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম
ভূমিকা : এ মানবজীবন নশ্বর! কিন্তু মানবজীবনের মূল্য তার আয়ুর পরিধিতে বিচার্য নয়। মানুষের কাজ ও কৃতিত্বের নিরিখেই তার চিরজীবিতা নির্ভর করে। তার ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের অনন্যতাই সেই ব্যক্তিমানুষটিকে অবিস্মরণীয় এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় করে তােলে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম এমনই একজন মানুষ। তিনি সদ্য প্রয়াত হলেও তার উজ্জ্বল জীবন এবং আশ্চর্য প্রতিভা, তাকে ভারতবাসীর কাছে চির আল্মান ও মৃত্যুঞ্জয়ী করে তুলেছে l
জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা : তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর এক সাধারণ মৎস্যজীবী পরিবারে কালামের জন্ম হয়। সম্পূর্ণ নাম আবুল পাকির জৈনুল আবেদিন আব্দুল কালাম। পিতা জৈনুল আবেদিন ও মাতা আসিয়াম্মা। ম্যাট্রিকুলেশনের রেজাল্টেই সকলকে চমকে দিলেন, কালাম যে ব্যতিক্রমী তা তখনই বােঝা গিয়েছিল। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হয়ে তিনি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে চেন্নাই আসেন এয়ারােস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান চালক হবেন। কিন্তু বিমানচালক না-হয়ে কালক্রমে বিশ্বসেরা পরমাণু বিজ্ঞানীদের সমাসনে এসে দাঁড়ালেন।
প্রথম জীবনেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগকে। সেখানে তিনি বৈজ্ঞানিক হিসেবে যােগদান করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে যােগ দেন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন-এ। তবে মাঝে কিছুদিন প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাও ছিলেন। কিন্তু তাঁর কর্মজীবনের সর্বোচ্চ খ্যাতি অগ্নি ও পৃথ্বী মিসাইল প্রকল্পে অংশগ্রহণ ও সফলতা লাভ। মহাকাশযান ও স্যাটেলাইট বহনকারী PSLV এবং SLV-III রকেট তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য ‘পােখরান টু’ প্রকল্পের প্রধান প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত হন। এরপর মেধাবী ও বিজ্ঞানমনস্ক এই কাজপাগল মানুষটি ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতির গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সমগ্র দেশবাসীর শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন।
সৃষ্টিসম্ভার : আব্দুল কালামকে কখনােই একটি বিশেষ গণ্ডিতে আটকে রাখা যায়নি। তাই সারাজীবন বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এভাবেই বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর আত্মজীবনী ‘উইংস অফ ফায়ার’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর উল্লেখযােগ্য অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল ‘ইন্ডিয়া টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি’ (১৯৯৮), ‘ইগনাইটেট মাইন্ডস’ (২০০২), ‘মিশন ইন্ডিয়া’ (২০০৫), ইনস্পায়ারিং থটস’ (২০০৭) ইত্যাদি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মান : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম জীবদ্দশায় দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারত ও ভারতের বাইরে চল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেছে। এ ছাড়াও পেয়েছেন ‘পদ্মভূষণ’(১৯৮১), ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৯০) এবং ভারতরত্ন’ (১৯৯৭)। এর বাইরেও আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মান তিনি পেয়েছিলেন।
উপসংহার : ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই শিলং-এর এক বক্তৃতা মঞ্চে বক্তব্যরত অবস্থায় আচমকাই জ্ঞান হারিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আব্দুল কালাম। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। দেশ তার কাছে ছিল মাতৃময়ী সাক্ষাৎ গর্ভধারিণী। কর্মযােগী ও মানবধর্মের এই পূজারি দেশের মানুষের জন্য যে স্বপ্ন, কাজ ও চিন্তা রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়িত করতে পারলে ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে।
আরো পড়ুন
কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিশ্বাখেতাব – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
মঙ্গল অভিযানে ভারত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও তার প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
ভূস্বর্গ ভূমিকম্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।