প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দাঁড়াও কবিতা রয়েছে। কবিতার শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
দাঁড়াও
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
হাতে কলমে
১.১)শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর:- শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহড়ুগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১.২ তাঁর লেখা একটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর:- শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাস হল কুয়োতলা’ |
২ নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
২.১ ‘মতো’ শব্দ ব্যবহার করা হয় কখন? তোমার যুক্তির পক্ষে দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:- কোনো কিছুর সঙ্গে সাদৃশ্য কল্পনা করতে বা তুলনা বোঝাতে ‘মতো’ শব্দটির ব্যবহার করা হয়। যেমন তুলনা করে বলা হয় ‘ফুলের মতো শিশু’ অর্থাৎ ফুলের সৌন্দর্য ও সতেজতার সঙ্গে শিশুর তুলনা করা। কবিতায় বা গানে এই ধরনের তুলনা বেশি দেখা যায়—”কেমন করে এ রানার সবেগে হরিণের মতো যায়।”
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতায় এই লাইনটি আমরা পেয়েছি। এখানে কবি রানার আর হরিণের ছোটার তুলনা করেছেন।
২.২ কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলছেন কেন?
উত্তর:- একটা স্বাধীন সত্তার ইঙ্গিত আমরা লক্ষ্য করি পাখির উড়ে চলা ও তার আচরণের মধ্যে। আর ঠিক, সেই স্বাধীনতারই প্রয়োজন আর্ত, নিপীড়িত,দুঃখিত মানুষের। তাই দুঃসময় থেকে মুক্তির আশ্বাস নিয়ে ‘পাখির মতো’ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
২.৩)“মানুষই ফাঁদ পাতছে”– কবি এ কথা কেন বলেছেন? ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ই’ ধবনি যোগ করেছেন কেন—তোমার কী মনে হয়?
উত্তর— মানুষের নিজের দুর্দশার কারণ মানুষ নিজেই। প্রকৃতির বিরূপতাকে মানুষ এড়িয়ে যেতে পারে,কিন্তু কিছু মানুষের অর্থ ও ক্ষমতার প্রতি আসক্তি শেষ করে দেয় প্রায় সমগ্র মানবসমাজকেই | মানুষের তৈরি হিংসা-দ্বেষ-লোভ-লালসার হাত থেকে মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষ আজ নিজেই অন্য মানুষকে মারছে। অত্যাচারিত হচ্ছে এক মানুষ অন্য মানুষের কাছে ,যা কখনোই কোন কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয় এবং কাম্যও নয়। তাই “মানুষই ফাঁদ পাতছে” অংশে মানুষের প্রতি মানুষেরই বর্বরতার কথা জোর দিয়ে বোঝানোর জন্যই ই’ ধ্বনিটি যোগ করা হয়েছে।
২.৪ “তোমার মতো মনে পড়ছে”– এই পঙ্ক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
উত্তর:— কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘দাঁড়াও’ কবিতায় যে ‘তুমি’র প্রসঙ্গ এনেছেন, তা কোনো নির্দিষ্ট বা বিশেষ ব্যক্তি নন, বলা যেতে পারে এই ‘তুমি’ হল মানবতাবোধ বা মানবিকতা, সমগ্র পৃথিবীর মানুষের শুভবোধ। কবিকে পীড়িত করছে বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিদিন মানুষের প্রতি মানুষের হিংস্র আচরণ, মনুষ্যত্বের বিকৃতি। তাই মনে মনে কবির চিরন্তন মানবতাবোধ বা মানবিকতা ও মনুষ্যত্ববোধকে কাম্য। এবং মানবিক গুণগুলির যাতে পুনর্জাগরণ হয়, ঠিক তাই কবি চেয়েছেন।
২.৫ “এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও”— এই পঙ্ক্তিটির বিশেষত্ব কোথায়? এই ধরনের দুটি বাক্য তুমি তৈরি করো।
উত্তর:— কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘দাঁড়াও’ কবিতা থেকে গৃহীত পঙ্ক্তিটিতে ‘সে’ ধ্বনিটির বারংবার ব্যবহার অনুপ্রাস অলংকারের সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়াও পঙ্ক্তিটিকে কাব্যগুণে সমৃদ্ধ করে তুলেছে — সমাপিকা ক্রিয়া ‘দাঁড়াও’ শব্দটির তিনবার ব্যবহার ।
এইরকম দুটি বাক্য হল,
১) ভালোকে চাই, মন্দকে চাই এবং তোমাকে চাই ৷
২)এদেশে ভালোবেসে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলে এসে মেশে
৩)“মানুষ বড়ো কাঁদছে”—কী কারণে কবি এই কথা বলেছেন?
উত্তর:- শক্তি চট্টোপাধ্যায় যে সময়ে ‘দাঁড়াও’ কবিতাটি লিখেছেন সে সময় গোটা পৃথিবীতে ছিল অশান্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপ ও এশিয়া জাতিদ্বন্দ্বে, অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত ছিল।আর সেই ঠান্ডা লড়াইয়ে মনুষ্যত্বের চরম হানী প্রতিমুহূর্তে ঘটে চলেছিল। কবিকে পীড়িত করছিল প্রতিদিন মানুষের প্রতি মানুষের হিংস্র আচরণ, মনুষ্যত্বের বিকৃতি। তাই মানুষের হাতে মানুষের অত্যাচার, নিপীড়ন, মৃত্যু দেখে কবি মানুষের জীবনের চরম হতাশার ছবি তুলে ধরার জন্য বলে উঠেছেন, উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি – মানুষ বড়ো কাঁদছে”।
৪) “মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও” – এই পঙ্ক্তিটিকে তিনবার ব্যবহার করার কারণ কী হতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর:- কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘দাঁড়াও’ কবিতাটি থেকে গৃহীত উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে স্পষ্টত দুটি অংশ রয়েছে। এক দিকে প্রকাশিত হয়েছে মানুষের চরম দুর্দশার ছবি | সারা পৃথিবীজুড়ে স্বার্থপরতা ও মনুষ্যত্বহীনতার ফলে মানুষ ক্রমশ একলা হয়ে যাওয়ার কথা ছবি তুলে ধরেছেন। সমগ্র কবিতায় “মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও”— এই পঙক্তিটির উপর কবি বেশি আলোকপাত করেছেন, তাই পঙক্তিটি তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক যুগে আবারও যেন মানুষের অসহায়তা, নিঃসঙ্গতা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, সে আজ একলা। তার পাশে দাঁড়ানো মানুষের কর্তব্য।এইভাবে মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়ালে তবেই তার দুঃখ কষ্ট দূর হবে।
৫) কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ কতটা সাৰ্থক? কবিতাটির নাম ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ হতে পারে কি – তোমার উত্তরের ক্ষেত্রে যুক্তি দাও |
উত্তর:- আমাদের আলোচ্য কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ নামকরণ হিসেবে সার্থক। কবিতাটি পাঠ করলে দুটি বক্তব্য আমাদের সামনে প্রকাশ পায়। কার বিংশ শতাব্দী জুড়েই দেখেছেন মানবতার অবক্ষয় এবং মনুষ্যত্বের বিকৃতি মানুষের প্রতি মানুষের হিংস্র আচরণ। মানুষের হাতেই মানুষের অপমান, অত্যাচার, হনন। কিন্তু কবি নিরাশায় মাধ্যমে কবিতাটি সম্পূর্ণ করেননি। তিনি মানুষের পাশে মানুষকে এসে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন। কবি বলেছেন মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম, তাই কবি অনুরোধ করেছেন মানবতাকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে নিপীড়িত মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করতে। তাই এই নামকরণটি প্রযোজ্য বা সার্থক ।
৬) কবি কাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছেন বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর:- শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘দাঁড়াও’ কবিতায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে কবি অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি কাকে এই অনুরোধ করেছেন তা এখানে স্পষ্ট নয়, কারণ ‘তুমি’ শব্দের আড়ালে কী আছে তা কবিতায় বলা নেই। তবে কবিতাটি কয়েকবার পাঠ করলে বোঝা যায় যে, কবি এখানে মানুষের শুভবোধ, মানবিকতা, হারিয়ে যাওয়া মনুষ্যত্বকেই যেন তিনি ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করেছেন। মানুষ যে ক্রমশ হিংস্র, স্বার্থপর, অমানবিক এবং পাশবিক হয়ে উঠছে তার বিপরীতেই এই ‘তুমি’কে কবি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
৭) কবিতাটি চলিত বাংলায় লেখা, শুধু একটা শব্দ সাধু ভাষার। শব্দটি খুঁজে বার করো এবং শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করেছেন কেন কবি?
উত্তর:- কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের রচিত ‘দাঁড়াও’ কবিতার মধ্যে শুধু একটিই সাধুভাষার শব্দ আছে, সেই শব্দটি হল ‘তাহার’ | প্রতিদিনের চলতি ভাষার নিত্যনৈমিত্তিক শব্দ ব্যবহারের পাশে সাধু ভাষার ব্যবহার হওয়ার কারণে বক্তব্যকে আরও গভীর করে তোলে | এই তাহার’ শব্দের মধ্যে দিয়ে কবি সারা পৃথিবীর অসহায় মানুষের কথা তুলে ধরেছে, তাই ‘তার’-এর বদলে এখানে ‘তাহার’ শব্দের ব্যবহার করেছেন কবি। ‘তার’ এর বদলে ‘তাহার’ শব্দের ব্যবহারে ছন্দের সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে l
৮) প্রথম স্তবকের তিনটি পক্তির প্রত্যেকটির দলসংখ্যা কত? প্রতিটি পঙ্ক্তি ক-টি রুদ্ধদল ও মুক্তদল নিয়ে তৈরি?
উত্তর:- প্রথম স্তবকের তিনটি পঙ্ক্তির প্রত্যেকটির দলসংখ্যা ১৬।
প্রতিটি পঙ্ক্তিতেই ১৩টি মুক্তদল ও ৩টি রুদ্ধদল আছে।
৯) কী ঘটেছে লেখো:
সন্ধ্যা > সন্ধে,
ফাদ > ফাঁদ
উত্তর:-
সন্ধ্যা > সন্ধে
এখানে স্বরসংগতির ফলে শব্দের শেষে ‘আ’ ধ্বনি ‘এ’ ধ্বনিতে পরিণত হয়।
ফাদ > ফাঁদ
এখানে স্বতোনাসিক্যীভবন ঘটেছে।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।