প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর হাওয়ার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে বুদ্ধদেব বসুর লেখা হাওয়ার গান কবিতা রয়েছে। কবিতার শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
হাওয়ার গান
বুদ্ধদেব বসু
হাতে কলমে
১.১ বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উওরঃ বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল ‘বন্দীর বন্দনা’ ও ‘দ্রৌপদীর শাড়ি’।
১.২ তিনি কোন পত্রিকা সম্পাদনা করতেন?
উওরঃ কবি বুদ্ধদেব বসু ‘কবিতা’ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি/দুটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া কী কী ছুঁয়ে গেছে?
উওরঃ কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়ার ‘দুর্বার ইচ্ছাটি হল বাসস্থান পাওয়ার ইচ্ছা’। এই দুর্বার ইচ্ছায় তারা বারবার পৃথিবীর সব জলভাগ এবং তীর ছুঁয়ে গেছে।
২.২ তার কথা হাওয়া কোথায় সুধায়?
উওরঃ হাওয়া তার বাসস্থানের কথা পৃথিবীর সব জলভাগে, সব তীরে, পাহাড়ে, বন্দরে, নগরে, অরণ্যে, প্রান্তরে, পার্কের বেঞ্চে ঝরাপাতায়, শার্সিতে, দেয়ালে, চিমনির শব্দে, বনের কান্নায় জিজ্ঞাসা করেছে।
২.৩ মাস্তুলে দীপ জ্বলে কেন?
উওরঃ ‘মাস্তুল’ শব্দের অর্থ হল পাল তুলে দেওয়ার জন্য স্টিমার বা জাহাজে আটকানো কাঠের স্তম্ভ। অকূল অন্ধকারে জাহাজ চলার সময় তার উপস্থিতি বা অবস্থান বোঝানোর জন্যই মাস্তুলে দীপ জ্বলে।
২.৪ পার্কের বেঞ্চিতে আর শার্সিতে কাদের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে?
উওরঃ পার্কের বেঞ্চিতে ঝরাপাতার মধ্যে কিংবা শার্সি অর্থাৎ কাচের জানালায় দেয়ালের পাঁজর কেঁপে ওঠার মধ্যে হাওয়ারই উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে।
২.৫ নিশ্বাস কেমন করে বয়ে গেছে?
উওরঃ ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়ার নিশ্বাস সারা দিন-রাত্রি ধরে বুক- চাপা কান্নায় উত্তাল ও অস্থিরভাবে বয়ে গেছে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো।
৩.১ হাওয়ার চোখে ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, তা কবিতা অনুসরণে লেখো।
উওরঃ বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়ার দৃষ্টিতে দেখা ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় দোলনায় একটি সুন্দর শিশু নিরাপদে, নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে রয়েছে। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে কার্পেটের উপরে শুয়ে রয়েছে একটি তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুর। আর সেই শান্ত, নিস্তব্ধ ঘরে স্বপ্নের মতো মায়াবী আলো ছড়িয়ে দিয়ে মৃদুভাবে একটি মোমবাতি জ্বলছে । এমন সুখী গৃহকোণের সুখের ছবিটি দেখেও হাওয়ার শান্তি বা স্থিরতা নেই, কেননা সে নিজের ঘরটিকেই এখনও খুঁজে পায়নি, যেখানে সে দু- দণ্ড বিশ্রাম নিতে পারে।
৩.২ সমুদ্রের জাহাজের চলার বর্ণনা দাও।
উওরঃ কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় কূল-কিনারাহীন গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া জাহাজের কাছেও শতসহস্র তরঙ্গে হাওয়া প্রশ্নই রেখেছে যে তার বাড়ি কোথায়! যাত্রীবাহী বিরাট, বিপুল জাহাজের যাত্রীরা নানান অবসরমূলক বিনোদনে মেতেছেন। কেউ চলচ্চিত্রে মশ কেউ নাচে, কেউ-বা গানের সুরে আপ্লুত। অন্ধকার গভীর রাতেও মাস্কুলে আলো জ্বেলে অবিরাম পথ চলেছে জাহাজ। জাহাজের যাত্রীদের এ স্বাচ্ছন্দ্য ও বিনোদন, হাওয়াদের আশ্রয় পাওয়ার ইচ্ছাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
৩.৩ পৃথিবীর কোন্ কোন্ অংশে হাওয়া ঘুরে বেড়ায় লেখো।
উওরঃ কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় সর্বত্রগামী হওয়া সত্ত্বেও হাওয়ার কোনো ‘বাড়ি’ বা আশ্রয় না থাকার বেদনা মর্মরিত হয়ে উঠেছে। বিরামহীন পথচলায় হাওয়া পৃথিবীর সমস্ত স্থলভূমি, জলভূমি, নদী- সমুদ্রতীর, পাহাড়-পর্বত, বন্দর, নগর, অরণ্য, প্রান্তর, তেপান্তর সর্বত্রই তার বাসস্থানের সন্ধান করে চলেছে। কিন্তু পরিণামে সে সফল হয়নি।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর বিশদে লেখো।
৪.১ হাওয়াদের কী নেই? হাওয়ারা কোথায় কীভাবে তার খোঁজ করে?
উওরঃ বিখ্যাত কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়াদের বাড়ি না থাকার প্রসঙ্গটিই বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
সারাদিন, সারারাত হাওয়া তার বাসা না পাওয়ার দুঃখ, যন্ত্রণা, অস্থিরতা নিয়ে পৃথিবীর জলে, স্থলে, কূলে, অরণ্যে, পাহাড়-পর্বতে, নগরে-বন্দরে প্রান্তরে-তেপান্তরে সেই বাসাকেই খুঁজে বেড়ায়।
৪.২ “চিরকাল উত্তাল তাই রে”–কে চিরকাল উত্তাল? কেন সে চিরকাল উত্তাল হয়ে রইল?
উওরঃ কবি বুদ্ধদেব বসু ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় অস্থির হাওয়াকে ‘উত্তাল’ বলা হয়েছে।
নিজ বাসস্থান খোঁজার চেষ্টায় ক্লান্ত, ব্যর্থ বাতাস যেন উৎকট শব্দে তার নিশ্বাস ছাড়ছে। তাই সে ‘উত্তাল’। তার কোনো বাড়ি নেই — এই দুঃখ প্রাণপণে সারা দিন-রাত বুকচাপা কান্নায় হাওয়াকে বয়ে বেড়াতে হয়। পৃথিবীর জল, স্থলকে বাসা বানানোর দুর্বার ইচ্ছায় স্পর্শ করে গেলেও সেই স্বপ্ন তার সফল হয়নি। তাই হাওয়াকে চিরকাল এমনই অস্থির এবং উত্তাল হয়েই থাকতে হয়৷
৪.৩ কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী যুক্তি কবির মনে এসেছিল বলে তোমার মনে হয়?
উওরঃ ‘হাওয়ার গান’ কবিতার প্রতিটি ছত্রে বাসার খোঁজে বাতাসের কান্না আর হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে। জলে, স্থলে, বন্দরে, নগরে, পর্বতে কোথাও আশ্রয় না পাওয়ার ব্যর্থতায় হাওয়া “শুধু কেঁদে মরে বাইরে”। “কোথায় তাদের বাড়িঘর” – এই মরমী প্রশ্নের উত্তরে সমস্ত জগৎসংসারই নিরুত্তর। অতলান্ত সমুদ্রের উচ্ছ্বসিত জলরাশি থেকে সুউচ্চ পাহাড়ের গম্ভীর প্রদেশের কোথাও তারা নিজের ঘর পেল না। অথচ পার্কের বেঞ্চে পাতা খসানোর আয়োজনে, কিংবা শার্সিতে কেঁপে ওঠা ভাষায় দেয়ালের ছবিতে, চিমনির স্বরে, বনের মর্মর ধ্বনিতে হাওয়া তার উপস্থিতির জানান দিয়েছে প্রবলভাবে। শান্ত, মনোরম, নিস্তব্ধ ঘরে অশরীরী হাওয়া নিরাপদ শিশুকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেখেছে, কার্পেটে তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুরকে আবছা মায়াবী মোমের আলোয় স্বস্তি খুঁজে পেতে দেখেছে কিংবা দেখেছে অকূল অন্ধকারে সাগর পাড়ি দেওয়া জাহাজে মানুষ কীভাবে আশ্রয় আর বিনোদন পেয়েছে। বিশ্রামের প্রত্যাশায় আকাশের চাঁদও কখনো-কখনো মেঘের আড়ালে ঠাঁই নেয়। বারংবার প্রশ্নে কিংবা অনুসন্ধানেও কোনো সুরাহা নেই। সময়ের মতোই অন্তহীন, অফুরন্ত তাদের অনুসন্ধানই আলোচ্য কবিতায় যেন সংগীতের করুণ সুরে প্রকাশিত হয়েছে। কবি যেন বাতাসে কান পেতে তার সেই অসহায় আর্ত-কান্নার সুর শুনেছেন। আর সে কারণেই সেই কান্নাকে ‘হাওয়ার গান’ নামকরণের মধ্য দিয়ে অর্থপূর্ণ করে তুলেছেন।
৫. নীচের পক্তিগুলির মধ্যে ক্রিয়াকে চিহ্নিত করো এবং অন্যান্য শব্দগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখাও।
৫.১ ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মোম৷
উওরঃ জ্বলে যায় — ক্রিয়া,
ঘরে ঘরে — অধিকরণকারক,
মোম — কর্মকারক,
স্বপ্নের — সম্বন্ধপদ৷
৫.২ আধারে জাহাজ চলে।
উওরঃ চলে — ক্রিয়া,
জাহাজ — কর্তৃকারক,
আঁধারে — অধিকরণকারক।
৫.৩ শার্সিতে কেঁপে ওঠা দেয়ালের পঞ্জর।
উওরঃ কেঁপে-ওঠা — ক্রিয়া,
পঞ্জর — কর্তৃকারক,
শার্সিতে — অধিকরণকারক,
দেয়ালের — সম্বন্ধ পদ৷
৫.৪ অকূল অন্ধকারে ফেটে পড়ে গর্জন।
উওরঃ ফেটে পড়ে — ক্রিয়া,
অকূল — বিশেষণ পদ (ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নেই),
অন্ধকারে — অধিকরণকারক,
গর্জন — কর্তৃকারক।
৬. “বন্দর, বন্দর, নগরের ঘন ভিড়”–পক্তিটির প্রথমে একই শব্দ দু-বার ব্যবহার করা হয়েছে। এই রকম আরও চারটি পঙ্গুক্তি উদ্ধৃত করো। কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ কী?
উওরঃ কবিতার মধ্যে একই শব্দ দু-বার ব্যবহৃত হয়েছে এমন চারটি পঙ্গক্তি হল –
১) ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মোম
২) খুঁজে খুঁজে ঘুরে ফিরি বাইরে
৩) কেঁদে-কেঁদে মরি শুধু বাইরে
৪) সুরে-সুরে ব’লে যাই-নেই রে
কবিতার ক্ষেত্রে ক্রিয়ার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহারের দক্ষতার উপর নির্ভর করে কবিতার গতি ও চলন। একই শব্দ দু-বার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া তৈরি করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে তৈরি হয়েছে কোনো কাজের পুনরাবৃত্তির আমেজ। সাধারণ অসমাপিকা ক্রিয়ার চেয়ে এই দু-বার ব্যবহৃত শব্দ নিঃসন্দেহে শ্রুতিমধুর এবং তা বক্তব্যের গুরুত্বও বাড়ায়, তাই কবিতায় এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়।
৭. ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলি পূর্ণ করো:
উওরঃ
চন্দ্র > চন্ন > চাঁদ
রাত্রি > রাত্রির
পঞ্জর > পাঁজর
৮. ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লেখো। এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে পঙক্তিগুলি আবার লেখো।
উওরঃ
‘হাওয়ার গান’ কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ হল – চিমনি, পার্ক, ডেক, সিনেমা, কার্পেট।
মূল বাক্য:-
পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝর্ঝর।
যাত্রীরা সিনেমায়, কেউ নাচে, গান গায়।
চিমনির নিস্বনে কাননের ক্রন্দনে।
অবশেষে থামে সব,বেকী হয় জাহাজের।
আবছায়া কার্পেট কুকুরের তন্দ্রায়।
পরিবর্তিত বাক্য:-
উদ্যানের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝর্ঝর।
যাত্রীরা চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে, কেউ নাচে, গান গায়।
ধূম্রনালীর নিস্বনে কাননের ক্রন্দনে।
অবশেষে থামে সব, জাহাজের পাটাতন হয় নির্জন।
আবছায়া গালিচা কুকুরের তন্দ্রায়।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse
চিঠি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Chithi Class 8 Question Answer | Wbbse
গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর | জগদীশচন্দ্র বসু | Class 8 Bengali Gacher Kotha Question Answer | WBBSE
গড়াই নদীর তীরে প্রশ্ন উত্তর | জসীমউদ্দীন | Gorai Nodir Tire Question Answer | Class 8 | Wbbse
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।