ঘাসফড়িং অরুণ মিত্র এর লেখা কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর এই আর্টিকেলে আমরা Class 6 এর ছাত্রছাত্রী দের জন্য নিয়ে এসেছি। তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেনীর পাঠ্যবইতে অরুণ মিত্র এর লেখা ঘাসফড়িং গল্প রয়েছে। কবিতার শেষে যে সব প্রশ্নপত্র গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
ঘাসফড়িং
অরুণ মিত্র
কবি পরিচিতি
কবি অরুণ মিত্রের জন্ম বাংলাদেশের যশোহর জেলায় ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর। তাঁর বাবার নাম হীরালাল মিত্র, মায়ের নাম যামিনীবালা মিত্র। তিনি ছিলেন কবি, অধ্যাপক ও সাংবাদিক। তিনি ফ্রান্স থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষজ্ঞ। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘অরণি’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল—খুঁজতে খুঁজতে এতদূর, প্রান্তরেখা, উৎসের দিকে, মঞ্চের বাইরে মাটিতে, এই অমৃত এই গরল, শুধু রাতের স্বপ্ন নেই, ফরাসি সাহিত্য প্রসঙ্গে। তিনি বহু প্রাচীন সাহিত্য অনুবাদ করেছেন। তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
সার-সংক্ষেপ
একটা ঘাসফড়িং-এর সাথে কবির ভাব হয়েছে। ঝিরঝিরে বৃষ্টির পর কবি ঘাসে পা দিয়েছেন। তখনই সবুজ ঘাসে সবুজ রঙে মাখামাখি ঘাসফড়িংটি কবির কাছে আসে, কত খেলা দেখালো সে, যখন কবি চলে এলেন তখন আবার কবির মন খারাপ হয়ে গেল। কথা দিয়ে এলেন আবার আসবেন। আবার ঝিরঝিরে বৃষ্টি এল কবি কথা দিয়েছিলেন ঝিরঝিরে বৃষ্টি এলে তিনি আবার আসবেন। তাই ভিজে ঘাসের ওপর কবিকে ফিরে যেতেই হবে।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : কবি অরুণ মিত্রের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম – প্রান্তরেখা, ঘনিষ্ঠ তাপ।
২. বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ আলাদা করে দেখাও :
২.১ ভাব না করে পারতামই না আমরা।
২.২ সবুজ মাথা তুলে কত খেলা দেখাল ঘাসফড়িং।
২.৩ আমার ঘরের দরজা এখন সবুজে সবুজ।
২.৪ ভিজে ঘাসের ওপর আমাকে যেতেই হবে আবার।
উত্তর :
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
২.১ আমরা | ‘ভাব না করে পারতাম না। |
২.২ ঘাসফড়িং | সবুজ মাথাতুলে কত খেলা দেখাল । |
২.৩ আমার ঘরের দরজা | সবুজে সবুজ। |
২.৪ আমাকে | ভিজে ঘাসের ওপর যেতেই হবে আবার। |
৩. নীচের শব্দগুলি বাক্যে ব্যবহার করে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করো : ভাব, ভিজে, নতুন, আত্মীয়তা, মনখারাপ, সবুজ, ঝিরঝির।
উত্তর : খোলা মাঠের সঙ্গে আমার ভারি ভাব। বিশেষ করে তার উপরে গালচের মতো সবুজ ঘাস যখন ভিজে থাকে। যেন একটা নতুন পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি। আমি প্রকৃতির কতো কাছে, প্রকৃতির সাথে আমার আত্মীয়তা বহুদিনের। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, চারিদিক ধোঁয়া ধোঁয়া দেখাচ্ছে। যত রাজ্যের মন খারাপ মনের মধ্যে চেপে বসেছে। শুধু মনে হচ্ছে কী যেন নেই কী হারিয়ে গেছে।
8. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো : আত্মীয়তা, ঘাস, সবুজ, নতুন।
উত্তর :
বিশেষ্য | বিশেষণ | বিশেষ্য | বিশেষণ |
ঘাস | ঘেসো | আত্মীয়তা | আত্মীয় |
সবুজতা | সবুজ | নতুনত্ব | নতুন |
৫. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো :
৫.১ সবুজ মাথা তুলে কত খেলা দেখাল ঘাসফড়িং। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর : ঘাসফড়িং সবুজ মাথা তুলল এবং কত খেলা দেখাল।
৫.২ একটা ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে আমার গলায় গলায় ভাব হয়েছে। (জটিল বাক্য)
উত্তর : ওই যে ঘাসফড়িংটা ওর সঙ্গে আমার গলায় গলায় ভাব হয়েছে।
৫.৩ যেই ঝিরঝির বৃষ্টি থেমেছে অমনি আমি ভিজে ঘাসে পা দিয়েছি। (সরল বাক্য)
উত্তর: ঝিরঝিরে বৃষ্টি থামতেই আমি ভিজে ঘাসে পা দিয়েছি।
৫.8 আমার ঘরের দরজা এখন সবুজে সবুজ। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর : আমার ঘরের সমস্ত দরজা এখন সবুজ আর সবুজ।
৬. নীচের বাক্যগুলি থেকে শব্দ বিভক্তি এবং অনুসর্গ খুঁজে নিয়ে লেখো :
৬.১ তার কাছ থেকে চলে আসার সময় আমার কী মন খারাপ।
উত্তর : তার, কাছ–শূন্য বিভক্তি, থেকে—অনুসর্গ, চলে—এ বিভক্তি, আসার –র বিভক্তি, সময় শূন্য বিভক্তি, আমার–র বিভক্তি, কী, মন, খারাপ–শূন্য বিভক্তি।
৬.২ আমি কথা দিয়ে এসেছি।
উত্তর : আমি, কথা—শূন্য বিভক্তি, দিয়ে—অনুসর্গ, এসেছি –শূন্য বিভক্তি।
৬.৩ ঝিরঝির বৃষ্টির পর আমি ভিজে ঘাসে পা দিয়েছি।
উত্তর : ঝিরঝির–শূন্য বিভক্তি, বৃষ্টির–র বিভক্তি, পর, আমি, ভিজে—শূন্য বিভক্তি, ঘাসে—এ বিভক্তি, পা, দিয়েছি—শূন্য বিভক্তি।
৬.৪ ভিজে ঘাসের ওপর আমাকে যেতেই হবে আবার।
উত্তর : ভিজে—শূন্য বিভক্তি, ঘাসের-এর বিভক্তি, ওপর-শূন্য বিভক্তি, আমাকে কে বিভক্তি, যেতেই, হবে, আবার-শূন্য বিভক্তি।
৭. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৭.১ কবির সঙ্গে ঘাসফড়িং-এর নতুন আত্মীয়তা কীভাবে গড়ে উঠল?
উত্তর : একটা ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে কবির গলায় গলায় ভাব হয়েছিল। ঝিরঝির বৃষ্টির পর কবি যখন ভিজে ঘাসে পা দিয়েছিলেন, তখনই ঘাসফড়িং-এর সাথে তার নতুন আত্মীয়তা শুরু হল।
৭.২ কবির কৌতূহল ও ভালোলাগায় ঘাসফড়িং কীভাবে সাড়া দিল বলে তোমার মনে হয় ?
উত্তর : ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে কবির প্রথম দেখাতেই আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল। ঘাসফড়িং তার সবুজ মাথা তুলে কবিকে নানা খেলা দেখাল। এটাই তার সাড়া দেওয়া ।
৭.৩ ঘাসফড়িং-এর কাছ থেকে চলে আসার সময় কবির মন খারাপ হল কেন বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবি প্রকৃতি প্রেমিক, ঘাসফড়িং তো প্রকৃতিরই অঙ্গ। সে বিভিন্নভাবে নতুন পাওয়া বন্ধুকে খেলা দেখিয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে কবিকে চলে আসতে হল। নতুন বন্ধুকে ছেড়ে আসতে হচ্ছে বলে কবির মন খারাপ।
৭.৪ “বলে এলাম আমি আবার আসবো”। — পঙ্ক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবির কোন্ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে?
উত্তর : কবি তার নতুন পাওয়া বন্ধুকে নিয়ে মশগুল ছিলেন, সবুজ ঘাসের মধ্যে তার খেলা দেখছিলেন। সে কবিকে আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু সময়ের অভাবে করিকে ফিরে যেতে হল। কবির মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল, তাই তিনি কথা দিলেন, আবার ফিরে আসবেন।
৭.৫ “আমার ঘরের দরজা এখন সবুজে সবুজ”। —কবির এইরূপ সবুজের সমারোহ দেখার কারণ কী?
উত্তর : কবি প্রকৃতি প্রেমিক, সবুজ ঘাসে মাঠ ভরে গেছে। বর্ষার জলে চারিদিকে সবুজের প্লাবন, সবুজের ছোঁয়া কবির মনে, চোখে। সবুজ ঘাসফড়িং ছুটে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। এই রঙের ছোঁয়া এসে লেগেছে কবির মনের দরজায়।
৭.৬ “ভিজে ঘাসের উপর আমাকে যেতেই হবে আবার”।—কোন ভিজে ঘাসের ওপর কবিকে ফিরতেই হবে? সেখানে তিনি যেতে চান কেন?
উত্তর : ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে কবিকে যেতেই হবে। তিনি সেখানে যেতে চান কারণ তাঁর বন্ধু ঘাসফড়িং রয়েছে, যার খেলা কবির মন জুড়ে রয়েছে। কবিকে ফিরে যেতে হবে কারণ তিনি কথা দিয়েছেন।
*** প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার নিবিড় টান কীভাবে কবি অরুণ মিত্রের ঘাসফড়িং কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে— তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : কবি প্রকৃতি প্রেমিক। সবুজের সমারোহ প্রকৃতির বুকে। তার ঢেউ এসে লেগেছে কবির বুকেও। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে প্রকৃতির রূপ হয়েছে অপরূপ, তাই দেখতে কবি গিয়েছেন খোলা সবুজ মাঠে। সেখানে কতো তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস কবিকে আকর্ষণ করেছে। ঘাসফড়িং তারই অঙ্গ। তার সাথে কবির ভীষণ বন্ধুত্ব হয়েছে, সেও কবিকে মাথা তুলে নানাভাবে খেলা দেখিয়েছে। ব্যস্ততার জন্য কবিকে ফিরে আসতে হবে। কিন্তু ঘাসফড়িংকে ছেড়ে আসতে কবির কষ্ট হয়। তাই তিনি এখানে আবার ফিরে আসবেন কথা দিয়েছেন।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
১. ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে কার ভাব হয়েছিল?
উত্তর : ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে কবি অরুণ মিত্রের ভাব হয়েছিল।
২. কবি কখন ভিজে ঘাসে পা দিয়েছেন?
উত্তর : ঝিরঝিরে বৃষ্টির পর কবি ভিজে ঘাসে পা দিয়েছেন।
৩. অমনি শুরু হয়ে গেল আমাদের নতুন আত্মীয়তা’–এখানে আমাদের বলতে কার কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : এখানে আমাদের বলতে ঘাসফড়িং ও কবির কথা বলা হয়েছে।
8. ‘আমি কথা দিয়ে এসেছি – কে কাকে কী কথা দিয়ে এসেছেন ?
উত্তর : কবি ঘাসফড়িংকে কথা দিয়ে এসেছেন যে আবার তিনি ঘাসফড়িং-এর কাছে ফিরে যাবেন।
৫. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো :
৫.১ একটা ঘাসফড়িং-এর সঙ্গে আমার গলায় গলায় ভাব হয়েছে, (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর : একটা ঘাসফড়িং আছে এবং তার সঙ্গে আমার গলায় গলায় ভাব হয়েছে।
৫.২ আমি বলে এলাম যে আবার আসব। (সরল বাক্যে)
উত্তর : আমি আবার আসবার কথা বলে এলাম।
৫.৩ তার কাছ থেকে চলে আসার সময় আমার কী মনখারাপ (জটিল বাক্যে)
উত্তর : যখন তার কাছ থেকে চলে এলাম, তখন কী মন খারাপ হয়েছিল।
আরো পড়ুন
ভরদুপুরে কবিতা | নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী | প্রশ্ন ও উত্তর | ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা
শঙ্কর সেনাপতি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
খোলামেলা দিনগুলি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | শান্তিসুধা ঘোষ
পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি কবিতার প্রশ্ন উত্তর | হাইনরিখ হাইনে
কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য
চিঠি কবিতার প্রশ্ন উত্তর | জসীমউদ্দিন
হাট কবিতার প্রশ্ন উত্তর | যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।