মঙ্গল অভিযানে ভারত  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

মঙ্গল অভিযানে ভারত

ভূমিকা: উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ভারতের বহুসংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে, এ কথা সত্য। কিন্তু আর্থিকভাবে দরিদ্র হলেও এ-দেশ মেধায় দরিদ্র নয়। তাই বিজ্ঞানের সাধনায় ভারত চিরকাল স্বল্প পুঁজিকে সম্বল করে গােটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। বিশেষত মহাকাশ গবেষণার মতাে ব্যয়বহুল ক্ষেত্রেও কেবল প্রযুক্তির জোরে কম খরচে ভারত তার মঙ্গল অভিযানের স্বপ্নকে সফল করে তুলেছে। উচ্চাশার সঙ্গে আত্মবিশ্বাস এবং লক্ষ্যপূরণের ইচ্ছার সঙ্গে যথার্থ পরিকল্পনার সার্থক মেলবন্ধন ঘটলে অসাধ্যসাধন হয়, ভারতের মঙ্গল অভিযান তারই উজ্জ্বল উদাহরণ।

মঙ্গলযাত্রার ইতিহাস : এখনও পর্যন্ত আমেরিকা ২৩ বার মঙ্গল অভিযান করে সাফল্য পেয়েছে ১৬ বার। রাশিয়ার ১৭ বারের অভিযানে সাফল্য এসেছে মাত্র ৫ বার। ইউরােপ মােট ৩ বার অভিযান করে সাফল্য পেয়েছে ২ বার। চিন ও জাপান ১ বার করে অভিযান করলেও কোনাে সাফল্য পায়নি। সেখানে ভারত ১ বার অভিযান করেই সাফল্য অর্জন করেছে।

ভারতের মঙ্গল অভিযান : ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশ শ্রীহরিকোটা ফার্স্ট লঞ্চ প্যাড থেকে ইসরাে পি এস এল ভি সি-২৫ রকেটে ভারতের মাস অরবিটার মিশন মঙ্গলযাত্রা শুরু করে। ৭ নভেম্বর পৃথিবীর অভিকর্ষ কাটাতে প্রথমবার ল্যাম ফায়ারিং করা হয়, এরপর ৮, ৯, ১১, ১২ এবং ১৬ নভেম্বর যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ল্যাম ফায়ারিং করা হয়। ১ ডিসেম্বর পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে মার্স অরবিটার মিশন মঙ্গলের দিকে রওনা দেয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর ৯.২৫ লক্ষ কিলােমিটার ব্যাসার্ধে ক্রিয়াশীল অভিকর্ষের টান অতিক্রম করে পাকাপাকি মঙ্গলের দিকে যাত্রা করে। ১১ ডিসেম্বর ল্যাম ফায়ারিং করে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশে ধাবমান মঙ্গলযানের গতিপথে প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন করা হয়। ১১ জুন দ্বিতীয়বার মঙ্গলযানের গতিপথের বদল ঘটানাে হয়। ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলযানটি মঙ্গল গ্রহের অভিকর্ষজ এলাকায় ঢুকে পড়ে। ওখানে ৩০০ দিন সুপ্ত থাকার পর ৪৪০ নিউটন লিকুইড অ্যাপােজি মােটর (ল্যাম) টেস্ট করা হয় এবং শেষবারের মতাে গতিপথে প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন করা হয়। আসলে মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে ‘মার্স অরবিটার-কে প্রবেশ ও স্থাপন করানাের ব্যাপারটা মােটেই সহজ কাজ নয়। মহাকাশ স্টেশন থেকে সংকেত পাঠিয়ে অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে এই কাজটি করা হয়। অবশেষে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ নভেম্বর বুধবার ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ৪ মিনিটে সমস্ত উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে লালগ্রহের কক্ষপথে মঙ্গলযানটি ঢুকে পড়ে। ভারতই একমাত্র দেশ যে প্রথম প্রচেষ্টায় মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করল।

ভারতের মঙ্গল সাফল্যের কান্ডারিন : ভারতের অভিযানের প্রধান হলেন ইসরাের চেয়ারম্যান কে রাধাকুন। মা যানের গতিবিধি ঠিক করতেন প্রােগ্রাম ডিরেক্টর মিলস্বামী আন্নাদর, পি এস এল ভি-র প্রােজেক্ট ডিরেক্টর পি কুন্নিকৃয়ন মাটি থেকে মঙ্গল আকাশে পৌঁছােনাের দায়িত্বে ছিলেন। মঙ্গলযানের তিনটি সন্ধানী যন্ত। তৈরির পুরােভাগে ছিলেন এ এস কিরণ কুমার আর সমগ্র অভিযানটির। বিষয়ে প্রথম থেকেই পথ দেখিয়েছিলেন ভি আদিমূর্তি। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা মাত্র ১৫ মাসে ৭ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার খরচ করে মার্স অরবিটার মিশন। মঙ্গলযানটি তৈরি করেন, সেখানে আমেরিকার মার্স মাভেন মঙ্গলযান তৈরি করতে ৬৭ কোটি ১০ লক্ষ ডলার খরচ হয় এবং ৫ বছর সময় লাগে। আমেরিকার নাসার মতাে উন্নত রকেট ভারতে না-থাকলেও কেবলমাত্র প্রযুক্তির জোরেই মঙ্গল অভিযান সফল হয়েছে। 

উপসংহার : চিন বা জাপানের মতাে উন্নত দেশ যা পারেনি, বহু অর্থ খরচ করেও আমেরিকা একবারে যা করে দেখাতে পারেনি, ভারত খুব অল্প খরচ করেই তা করে দেখিয়েছে। ভারতের পক্ষে মহাকাশ অভিযানে আজও বহু বাধাবিঘ্ন রয়েছে। আজও এদেশ আর্থিকভাবে স্বনির্ভর নয়। কিন্তু ভারতের ইসরাের বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যপূরণের দৃঢ়তায় শুধু প্রযুক্তির জোরে একটা হলিউড ছবির থেকে কম খরচে মঙ্গল অভিযানে সাফল্য এসেছে, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

আরো পড়ুন

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও তার প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ভূস্বর্গ ভূমিকম্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি উৎসব স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment