মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়ই পরিবেশ দূষণ বিষয়ক একটি রচনা দেখতে পাওয়া যায়। তাই এখানে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার নিয়ে প্রবন্ধ রচনা লিখে দেওয়া হল। সুন্দর ভাবে পয়েন্ট করে রচনাটি লেখা হয়েছে, আশা করি সবার ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ – উজ্জ্বল পরমায়ু।”
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
🔹ভূমিকা :
আকাশ, বাতাস, জল, উদ্ভিদ জগত, প্রাণী জগত সব কিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ। এগুলির কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না। মানুষ তার বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে এবং পরিশ্রমে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে কিন্তু পরিবেশের অগ্রগতির সাথে সাথে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে।
🔹পরিবেশ দূষণ কী? :
পরিবেশ যখন ক্ষতিবাচক কারণ প্রভাবিত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনই তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হল মানুষ ও তার লোভ, স্বার্থ ও বুদ্ধিহীনতা। যার ফলে সে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছে পৃথিবীর ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা।
পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা — বায়ু দূষণ, জল দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ, শব্দ দূষণ ও মনস্তাত্ত্বিক দূষণ।
• বায়ু দূষণ :
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম ও প্রধান হল বায়ু বা বাতাস, যা ছাড়া প্রাণীজগত এক মুহূর্তও বাঁচতে পারে না। অবিচারে বৃক্ষ ছেদন, বনভূমিতে আগুন জ্বালানো, কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, যানবাহনের পরিত্যক্ত গ্যাস বায়ুতে মিশে ক্রমাগত বায়ুকে দূষিত করে চলেছে। মানুষ গরমের থেকে রক্ষা পেতে যথেষ্ট ভাবে এ.সি., ফ্রিজ ব্যবহার করছে। কিন্তু এতে CO₂, CFC ইত্যাদির মতো বিষাক্ত গ্যাস পরিবেশে মিশে বায়ুকে দূষিত করে তুলছে। দূষণের ফলে মানুষের শ্বাস কষ্ট, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হতে হচ্ছে।
• জল দূষণ :
জলের অপর নাম জীবন। মানব জীবনে জলের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে সেই জল দূষণই একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে কলকারখানার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। সেই কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত জল নদীর জলের সাথে মিশে নদীর জলকে দূষিত করছে। এছাড়াও শহরের সমস্ত নর্দমার জল নদীতে পড়ে নদীর জলকে দূষিত করছে। ফলে জলবাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও মানুষের পানীয় জল ও জলচর প্রাণীদের জীবন আজ সংকটাপন্ন।
• মৃত্তিকা দূষণ :
কৃষি ও শিল্প বিপ্লব মৃত্তিকা দূষণের প্রধান কারণ। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহর এলাকার আবর্জনা প্রভৃতি মাটিতে মিশে মাটিকে দূষিত করে। এর ফলে নানা সংক্রামক রোগ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।
• শব্দ দূষণ :
কলকারখানার উচ্চ শব্দ, যন্ত্রচালিত গাড়ির হর্ন, বাজি পটকার শব্দ, মাইক্রোফোনের আওয়াজে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি, স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
• মনস্তাত্ত্বিক দূষণ :
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ এক প্রকার জাতীয় দূষণ। সামাজিক অপসংস্কৃতি, বেকারত্ব, কুরুচির সিনেমা, পত্রিকা প্রভৃতি যুবক-যুবতীদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে। এর ফলে সমাজের দুষ্কর্মের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
🔹পরিবেশ দূষণের প্রতিকার :
পরিবেশ দূষণ আজ সারা পৃথিবীর একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন —
১. আমাদের প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে।
২. কলকারখানার দূষিত জল নদীতে যেন না মেশে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
৩. কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৪. যানবাহনে পেট্রোল বা ডিজেল পোড়ানোর পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার করতে হবে।
৫. শব্দ দূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
৬. সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
🔹উপসংহার :
আমাদের মনে রাখতে হবে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের দেয় নীরোগ স্বাস্থ্য ও অক্ষয় দীর্ঘায়ু। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকার, বা সংস্থা বা কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়, এই দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সকলকে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে।
আরো পড়ুন
উন্নয়ন বনাম পরিবেশ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় অরণ্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আমাদের পরিবেশ : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।