দশম শ্রেনী (মাধ্যমিক) Class 10 Geography নদীর কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি চিত্র সহ বর্ণনা করাে ?

নদীর কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি চিত্র সহ বর্ণনা করাে ? 

প্রশ্ন: নদীর কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি চিত্র সহ বর্ণনা করাে ? 

অথবা, নদীর কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করাে ? 

অথবা, নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি চিত্র সহ বর্ণনা করাে ?

অথবা, নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি চিত্র সহ বর্ণনা করাে ?

উত্তর: নদী প্রধানত ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে নিম্নের ভূমিরূপগুলি তৈরি করে থাকে। যথা –

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ:-

1. গিরিখাত : নদীর উচ্চগতিতে ঢাল বেশি হওয়ায় নদীবাহিত পদার্থসমূহের সঙ্গে নদীর তলদেশের ঘর্ষণ বেশি হয়। আবার নদীর দুই ঢাল কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত বলে এই পার্বত্য অঞলে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়। ফলে ইংরেজি ‘V আকৃতির ন্যায় উপত্যকা গঠন করে, একে গিরিখাত বলে।

গিরিখাত

2. শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বা আবদ্ধ শৈলশিরা : পার্বত্য অঞলে নদীর চলার পথে কঠিন শিলা অবস্থান করায় নদী এঁকেবেঁকে চলতে শুরু করে। এর ফলে নদীর একটি পাড় অপর একটি পাড়কে আড়াল করে রাখে। ফলে নদীর গতিপথ সােজাসুজি বেশিদূর দেখা যায় না। পার্বত্য অঞলে নদীর এইরকম পাড়কে শঙ্খলিত শৈলশিরা বলে।

শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বা আবদ্ধ শৈলশিরা

3. জলপ্রপাত : পার্বত্য অঞলে অনুভূমিকভাবে কঠিন ও কোমল শিলা পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করলে নদীর প্রবল স্রোতের ফলে কোমল শিলা ক্ষয় পেয়ে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। এই খাড়া ঢালের উপর দিয়ে জলরাশি সরাসরি উপর থেকে নীচে পড়ে, একে জলপ্রপাত বলে।

জলপ্রপাত

4. মন্থকূপ : পার্বত্য অঞলে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত নুড়ি, বালি, পাথরের দ্বারা অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীখাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রায় গােলাকার যে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে মন্থকূপ বলে।

মন্থকূপ

নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ:-

1. পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু : পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমভূমিতে নামার সময় নদীবাহিত শিলাখণ্ডগুলি সমভূমিতে জমা হয়ে পাখার ন্যায় শঙ্কু আকৃতির ত্রিকোণাকার যে ভূভাগ সৃষ্টি করে তাকেই পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু বলে।

পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু

2. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : কোনাে কোনাে নদীতে অসংখ্য বাঁকের সৃষ্টি হলে ঐ বাঁক এত বেশি হয় যে, দু’টি বাঁক নিজেদের খুব কাছাকাছি চলে আসে এবং বাঁকের মাঝের অংশ ক্ষয় পেয়ে বাঁক দুটি আলাদা হয়ে যায়। ফলে নদী সােজা পথে চলতে শুরু করে। ফেলে রাখা বাঁকটি দেখতে অনেকটা অশ্বের ক্ষুরের ন্যায় হয় বলে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। | 

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ

3. প্লাবন সমভূমি : নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে নদীগর্ভ পলি দ্বারা ভরাট হয়ে অগভীর হয়। বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির জল ধরে রাখতে না পেরে নদী দুকূল ছাপিয়ে প্লাবনের সৃষ্টি। দীর্ঘদিন ধরে নদী উপত্যকার দু’কূলের নীচু জমিতে পলি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি করে, তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।

প্লাবন সমভূমি

4. নদীমঞ্চ : সমভূমি অঞলে নদীর গতিবেগ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় নদীবাহিত নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদা, পলি প্রভৃতি নদীর ধারে জমা হয়ে অসমান ধাপের সৃষ্টি করে। নদী উপত্যকায় গঠিত সিঁড়ির মতাে ঐ ধাপকে নদীম বলে।

নদীমঞ্চ

5. U’ আকৃতির উপত্যকা : হিমবাহ অত্যন্ত ভারী ও কঠিন ঘনীভূত বরফের স্থূপ হওয়ার দরুন এর ক্ষয়কার্য বেশি। অধিক শিলাচূর্ণ বহনের ফলে আগেকার পর্বতের `V`  আকৃতির উপত্যকার খাড়াই দু’পাশ সম্পূর্ণ ক্ষয়ে গিয়ে আরও গভীর ও খাড়াই হয়। তখন এর আকৃতি অনেকটা ইংরাজি `U’  অক্ষরের মতাে হয়। হিমবাহের এইরূপ উপত্যকাকে U আকৃতির উপত্যকা বলে।

U আকৃতির উপত্যকা

Read Also

শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি কাকে বলে? শস্যাবর্তন এর বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি? শস্যাবর্তন এর গুরুত্ব বা সুবিধা উল্লেখ করাে।

আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির পার্থক্য লেখ ?

মৃত্তিকা গঠন (Soil Structure) কাকে বলে? অথবা, মাটির গঠন বলতে কী বোঝো? মৃত্তিকা গঠনের গুরুত্ব লেখো।

মৃত্তিকা গঠনের প্রক্রিয়াগুলি আলোচনা করো।

ভারতে কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখো ?

পরিণত ও অপরিণত মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য লেখ ?

নদীর কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি চিত্র সহ বর্ণনা করাে ? 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment