অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে | অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে | অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks

উত্তর:

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা : 

সাধারণত বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের বাইরে কোনাে ধরনের পূর্বনির্ধারিত সূচি ছাড়াই ছাত্রছাত্রীরা যে বিশেষ প্রকার শিক্ষালাভ করে, তাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কুম্বস-এর মতে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা স্বাভাবিকভাবে অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে জীবনের বিভিন্ন ধাপে যে-কোনাে সময়ে আসতে পারে।

শিক্ষাবিদ জে পি নায়েক-এর মতে সমাজজীবনে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে যা-কিছু শেখা যায়, তাই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য : 

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি হল : 

[1] নিয়ন্ত্রণহীন শিক্ষা : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সবথেকে উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর নিয়ন্ত্রণহীনতা। এই জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানের ক্ষেত্রে, যেমন—শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পাঠক্রম, শিক্ষালয় ইত্যাদির বিষয়ে কোনাে প্রকার বিধিনিষেধ থাকে না। যে-কোনাে বয়সের যে-কোনাে মানুষ এই শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। 

[2] জ্ঞান অর্জনে সহায়তা : এই জাতীয় শিক্ষায় ব্যক্তি নানান বিষয়ে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। এতে ব্যক্তি আপন ইচ্ছা বা মর্জি অনুযায়ী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। 

[3] শিক্ষকনির্ভর নয় : এই ধরনের শিক্ষায় শিক্ষাদানের দায়িত্ব কোনাে নির্দিষ্ট শিক্ষক বা শিক্ষিকার ওপর ন্যস্ত থাকে না। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী কখনও পরিবার, কখনও প্রকৃতি আবার কখনও সামাজিক সংস্থা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে রেডিয়াে, সিনেমা, খবরের কাগজ, টেলিভিশন প্রভৃতি গণমাধ্যম থেকেও শিক্ষার্থীরা অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। 

[4] নির্দিষ্ট পাঠক্রমভিত্তিক নয় : এই জাতীয় শিক্ষায় কোনাে নির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুসরণ করা হয় না। এতে কোনাে বিষয়ও নির্দিষ্ট থাকে না। 

[5] পূর্বপরিকল্পিত ও পূর্বনির্ধারিত নয় : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার কোনাে কিছুই পূর্বপরিকল্পিত ও পূর্বনির্ধারিত নয়। যেহেতু এক্ষেত্রে কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কোনাে পাঠক্রম থাকে না, কোনাে নির্দিষ্ট সময় থাকে না, তাই পুর্বপরিকল্পনার কোনাে বিষয়ও থাকে না। 

[6] নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক থাকে না : যেহেতু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কোনাে পাঠক্রম অনুসৃত হয় না, তাই এই শিক্ষার জন্য কোনাে নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তকও রচনা করা হয় না। 

[7] প্রাসঙ্গিকতা : এই ধরনের শিক্ষা থেকে কোনাে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী যে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা সর্বদাই প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ ব্যক্তি আপন ইচ্ছানুসারে এই জাতীয় শিক্ষাগ্রহণে অগ্রসর হয়। কোনাে পরিবার, সমাজ বা সংস্থায় তাকে এই ধরনের শিক্ষাগ্রহণে বা জ্ঞানার্জনে বাধ্য করে না। 

[8] শৃঙ্খলা : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় ব্যক্তিকে বা শিক্ষার্থীকে কোনাে বাঁধাধরা নিয়মে চলতে হয় না। ফলে সে স্বাধীনভাবে আপন ইচ্ছানুসারে শিক্ষাগ্রহণ করে। এতে বাইরে থেকে কোনাে শৃঙ্খলা আরােপ করা হয় না। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জন করে। 

[9] পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে শিখন : এই জাতীয় শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা নিজের পরিমণ্ডলের কোনাে উপাদান বা বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করে, তা অনুশীলনের মাধ্যমে নিজে নিজেই শেখে। মােট কথা পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই ধরনের শিখন ঘটে থাকে। 

[10] নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তর ও বয়সবিহীন : অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কোনাে নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তর বা পর্যায় থাকে না। এতে শিক্ষার্থীর কোনাে বয়স স্তরও থাকে না। 

[11] মূল্যায়ন : এই জাতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনাে প্রকার মূল্যায়নের ব্যবস্থাও থাকে না। এখানে মূল্যায়ন বলতে বােঝায় কোনাে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী তার অর্জিত জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা বাস্তবক্ষেত্রে কতটা প্রয়ােগ করতে পারছে, তাতেই তার শিক্ষার মূল্যায়ন হয়। 

[12] বাধ্যবাধকতাহীন ও স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন : এই শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনাে বাধ্যবাধকতা থাকে না। এক্ষেত্রে ব্যয় প্রায় নেই বললেই চলে।

জীবনের সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা সমার্থক। এই শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, চারপাশের প্রকৃতি, খেলার সাথি প্রভৃতি উৎস থেকে দৈনন্দিন প্রয়ােজনীয় বহু কিছু শিখে থাকে। এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর মূল্যবােধ ও মনােভাব গঠনে এবং জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে বিশেষভাবে সহায়ক।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment