শিক্ষাসংস্কারমূলক কাজে রাজা রামমােহনের অবদান লেখাে।

শিক্ষাসংস্কারমূলক কাজে রাজা রামমােহনের অবদান লেখাে।

উত্তর : 

শিক্ষাসংস্কারমূলক কাজে রাজা রামমােহনের অবদান : 

রামমােহন রায় ছিলেন শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারে ঊনবিংশ শতাব্দীর এক প্রগতিশীল চিন্তানায়ক। তিনি পাশ্চাত্যে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির দূত।

[1] পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার : তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে প্রথম অগ্রণী হন। তিনি প্রাচ্য শিক্ষার পুনরুজ্জীবন যেমন প্রয়ােজন তেমন পাশ্চাত্য শিক্ষার বিজ্ঞানভিত্তিক দিক গ্রহণ করা জরুরি মনে করতেন। তিনি বুঝেছিলেন— ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সাথে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটবে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবের আদান-প্রদান ঘটবে। 

[2] দেশীয় সংস্কৃতি ভাষার উন্নতিসাধন ও পাঠ্যবিষয় বস্তুর সম্পর্কে ভাবনা : তিনি দেশীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নতিসাধনে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি সংস্কৃত ভাষার কাঠিন্য দুর করতে প্রয়াসী ছিলেন। তিনি দেশীয় সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভাষা ঐতিহ্য পাশ্চাত্যবাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বিজ্ঞান, গণিত, জ্যামিতি, যন্ত্রবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের ওপর প্রাধান্য প্রদান করেছিলেন। ভাষা ও সাহিত্য হিসেবে আরবি, ফারসি, সংস্কৃতি শুধু নয়— ইংরেজি, বিজ্ঞানচর্চা জরুরি তিনি উপলব্ধি করেন। 

[3] পত্রপত্রিকা সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে শিক্ষার বিস্তার : শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি পত্রপত্রিকা, সংবাদমাধ্যমকে হাতিয়ার করেছিলেন। তিনি ধর্মনীতি, দেশবিদেশের সংবাদ, রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় আলােচনা, সামাজিক সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে স্বাধীন প্রবন্ধ ও মতামত, সমালােচনা, পত্রপত্রিকা-সংবাদপত্রে প্রকাশ করতেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্বাদ কৌমুদি’ (1821); ফারসি সাপ্তাহিক ‘মিরাৎ-উল-আখবার’ ‘The Brahmanical Magazine’l 

[4] শিক্ষাবিস্তারে সাহিত্যসৃষ্টি : তিনি দেশীয় ছাত্রদের জন্য পুস্তক রচনায় নিজেকে নিয়ােজিত করেছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় ভুগােল, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যার বই লেখেন। তিনি প্রচুর সংস্কৃত বই বাংলায় অনুবাদ করেন। যেমন— “বেদান্ত গ্রন্থ’, ‘বেদান্ত সার’, বিভিন্ন উপনিষদ। এ ছাড়া তিনি গৌড়ীয় ব্যাকরণ’, পথ্যপ্রদান, গােস্বামীর সহিত বিচার ইত্যাদির মতাে গ্রন্থ রচনা করেন। 1815 থেকে 1830 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি প্রায় ত্রিশটি পুস্তক, একাধিক পত্রপত্রিকা ও প্রবন্ধরচনা করেন। 

[5] শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন : 1822 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ইঙ্গ-বৈদিক স্কুল” নামে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এখানে বাংলা ভাষার মাধ্যমে ইউক্লিড-এর জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, যন্ত্রবিজ্ঞান প্রভৃতি পাঠদান করা হত। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিন্দু কলেজ স্থাপনে তার অবদান বিশেষ উল্লেখযােগ্যের দাবি রাখে। যদিও পরবর্তীকালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে গোঁড়া হিন্দুদের জন্য তাকে সরে যেতে হয়েছিল।

[6] শিক্ষাদানের জন্য মিশনারিদের অংশগ্রহণে সুপারিশ : ভারতে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের জন্য মিশনারিদের সংযুক্ত করা প্রয়ােজন তা তিনি অনুভব করেন। তিনি 1823 খ্রিস্টাব্দে ‘চার্চ অফ স্কটল্যান্ড’কে এই বিষয়ে অবগত করেন ফলস্বরূপ শিক্ষাপ্রেমী আলেকজান্ডার ডাফ পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাষা প্রসারে কলকাতায় এসেছিলেন।

[7] স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে অবদান : ভারতীয় নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রচলন ছিল এ ব্যাপারে তিনি হিন্দুশাস্ত্র থেকে উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি নারীর সামাজিক শিক্ষা, অধিকার দাবিতে ও শিক্ষা প্রসারে সচেষ্ট হন। তিনি এ ব্যাপারে বহু সুনিশ্চিত প্রবন্ধরচনা করেন। 

উপসংহার :

ভারতবাসীর কাছে তিনি শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা, গুণাবলি, মুক্তির পথ সম্পর্কে তুলে ধরেন। ভারতীয়দের শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন। তিনি ধর্মীয় সামাজিক সংস্কার প্রয়ােজন শুধু অনুভব করেননি। তা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেন। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment