সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করো

সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করো
অথবা, সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান তা আলোচনা করো

উত্তর : 

সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে সম্পর্ক : 

ব্যক্তিজীবনের কতকগুলি প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে কিছু সহজাত প্রবৃত্তি এবং কিছু প্রতিবর্ত ক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষমতা যথেষ্ট উপযােগী হলেও, কেবলমাত্র এগুলির মাধ্যমে ব্যক্তির পক্ষে সদাপরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। এর জন্য ব্যক্তিকে তার আচরণধারার পরিবর্তন করতে হয়, নতুন নতুন আচরণ আয়ত্ত করতে হয়। আচরণ হল আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফল। আর আচরণ পরিবর্তনের ভিত্তি হল জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা। জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রক্রিয়া হল সংবেদন, প্রত্যক্ষণ এবং ধারণা। নীচে এই তিনটি প্রক্রিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক আলােচনা করা হল —

[1] সংবেদন : এটি হল জ্ঞানার্জনের প্রথম পর্যায় বা ধাপ। এই মানসিক প্রক্রিয়াটি সৃষ্টি হয় উদ্দীপকের ক্রিয়ায়। বাইরের জগতের বা পরিবেশের কোনাে বস্তু, ঘটনা বা অন্তর্জগতের কোনাে পরিবর্তন জ্ঞানেন্দ্রিয়ের ওপর ক্রিয়া করে প্রথমে জ্ঞানেন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করে। পরে সেই উদ্দীপনা অন্তর্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট অঞ্চলে পৌঁছােলে এক বিশেষ মানসিক অনুভূতি বা চেতনার সৃষ্টি হয়। একে বলে সংবেদন। মানুষের প্রতিটি আচরণই উদ্দীপকের উপস্থিতিতে প্রতিক্রিয়ার ফল। এই উদ্দীপক প্রধাণত দেহের বাইরে অবস্থান করে। আমাদের চোখ আলােক শক্তির দ্বারা, কান শব্দের দ্বারা এবং ত্বক তাপ শক্তির দ্বারা উদ্দীপিত হয়। 

[2] প্রত্যক্ষণ : এটি হল জ্ঞানার্জনের দ্বিতীয় পর্যায় বা ধাপ। এটি সংবেদেনের ওপর নির্ভরশীল। সংবেদন-এর ফলে জ্ঞানের কাচামাল সংগৃহীত হয়। পূর্বঅভিজ্ঞতা এবং শিখনের সাহায্য নিয়ে সংবেদনকে যখন অর্থপূর্ণ করে তােলা হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষণ বলা হয়। সংবেদন হল কেবলমাত্র উদ্দীপকের সান্নিধ্যে আসা। কিন্তু প্রত্যক্ষণকে বিশ্লেষণ করলে উদ্দীপক বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। মনােবিদদের মতে, প্রত্যক্ষণ হল সংবেদন এবং ব্যাখ্যার সমষ্টি অথবা সংবেদন ও অর্থের সমষ্টি। তবে সকল সংবেদনের প্রত্যক্ষণ ঘটে না। অন্যভাবে বললে, সকল সংবেদনই ব্যক্তির কাছে অর্থপূর্ণ হয় না। কিন্তু সংবেদন ছাড়া প্রত্যক্ষণ একেবারেই সম্ভব নয়।

[3] ধারণা : এটি হল জ্ঞানার্জনের তৃতীয় ও শেষ পর্যায়। সমজাতীয় বস্তুর মধ্যে নানান ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে। ওই সব বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে আবার কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে ওই শ্রেণির বস্তু সম্পর্কে যে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, তাই হল ধারণা। পায়রা, কোকিল, কাক, শালিক, বুলবুলি, টিয়া প্রভৃতি পাখিহুলির মধ্যে নিজস্ব কতকগুলি বৈশিষ্ট্য থাকলেও তাদের মধ্যে কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্তমান। যেমন— এদের চক্ষু আছে, এদের প্রত্যেকের দুটি করে ডানা আছে, এরা প্রত্যেকে উড়তে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ধারণা গঠন করে, এদের নাম দিয়েছি ‘পাখি’। 

উপরিউক্ত আলােচনার মাধ্যমে বলা যায়— সংবেদন, প্রত্যক্ষণ এবং ধারণা হল ক্ৰমজটিল তিনটি মানসিক প্রক্রিয়া। এদের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমান। এই তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমাদের জানার কৌশলটি সম্পূর্ণতা লাভ করে। জানার প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করলে, যে ধারাবাহিক পর্যায়গুলির সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলি হল— (1) উদ্দীপক ও ইন্দ্রিয়ের মধ্যে আন্তক্রিয়ার ফলে সংবেদন সৃষ্টি হয়। (2) এই সংবেদনকে অতীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করে, অর্থপূর্ণ করা হলেই তা প্রত্যক্ষণ পর্যায়ে পৌঁছায় l (3) প্রত্যক্ষ বিষয়, বস্তু বা ঘটনাকে যখন পর্যালােচনা, তুলনাকরণ, পৃথকরণ, সামান্যীকরণ প্রভৃতির মাধ্যমে একটি নাম দেওয়ার পর্যায়ে আনা হয় তখন তাকে ধারণা বলা হয়। মােটকথা, সংবেদন ব্যতীত প্রত্যক্ষণ অসম্ভব এবং সংবেদন ও প্রত্যক্ষণ ছাড়া ধারণা গঠনও সম্ভব নয়। সুতরাং এই বিষয়ে দ্বিমত নেই যে, সংবেদন, প্রত্যক্ষণ এবং ধারণা—সম্পূর্ণযুক্ত প্রক্রিয়া।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment