তোমার প্রিয় উপন্যাস
ভূমিকা : বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের আদিগুরু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তারপর একে একে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতাে একাধিক ঔপন্যাসিক। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ থেকে ‘চোখের বালি’, ‘শ্রীকান্ত’ থেকে ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পথের পাঁচালী’-এ জাতীয় বহু উপন্যাসই বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তবু অনেক বেশি স্বদেশ ও জীবনের উত্তাপ আমি পেয়েছি সমরেশ বসুর লেখা শ্রীমতী কাফে’ উপন্যাসটি পাঠ করে।
উপন্যাসের ভারসংক্ষেপ : সমরেশ বসুর শ্রীমতী কাফে’ জাতীয় জীবনের স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তেজনাময় নানা মুহুর্তের নীরব সাক্ষী। উপন্যাসের ঘটনাকাল ১৯২০ থেকে ১৯৪৯—এই তিন দশক। গান্ধিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মার্কসবাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে যে কল্পনা তৈরি হয়েছিল সমকালীন ভারতবর্ষে, তার আভাস পাওয়া যায় শ্রীমতী কাফের চায়ের টেবিলে। নিছক আড্ডা মেরে সময় কাটানাে নয়, এই চায়ের টেবিলেই ধরা পড়েছে নানা মত ও মতান্তরের সংবাদ। ইতিহাসের সর্পিল গতিকে আমরা লক্ষ করি শ্রীমতী কাফের আসরে বসেই। নানা মত ও পথে বিশ্বাসী যুবক এখানে এসেছে। কৈশাের, যৌবন অতিক্রমের দিনগুলিতে ইতিহাস তাদের কীভাবে ছুঁয়ে গেছে, কীভাবে দ্বান্দ্বিক ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে তারা বিবর্তিত হয়ে স্বাধীনতার মুক্তিতীর্থে পৌছেছে তা আমরা শ্ৰীমতী কাফের চায়ের টেবিলেই লক্ষ করি।
উপন্যাসের বিষয় : শ্রীমতী কাফে একসময় ছিল ভজুলাটের চায়ের দোকান। এখানেই রাজনৈতিক কর্মীরা পারস্পরিক ভাবনার আদানপ্রদান করত। নিয়মিত আসত হীরেন, কৃপাল, রথীনরা। এখানেই দেখা গেল গান্ধিবাদী তরুণ সন্ত্রাসের রাজনীতিতে ঝুঁকতে শুরু করেছে। ভজুলাট লক্ষ করে নারায়ণ একটা প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে পড়ল দুটি রিভলভার। অসহযােগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর নতুন আন্দোলনের পথ খুঁজছিল কৃপাল-হীরেনরা। কিন্তু নারায়ণের এ পথ পছন্দ হয়নি। এখানে একসময় এসেছে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে বিশ্বাসী প্রিয়নাথ। বিশের দশকে একই টেবিলে বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী যুবকরা বসে আলাপ-আলােচনা করত। কিন্তু চল্লিশের দশকে দেখা গেল বিভিন্ন টেবিলে বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষ। কমিউনিস্ট প্রিয়নাথই আজ রেস্টুরেন্টের মালিক। অবশেষে দেশ স্বাধীন হল। রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। স্বাধীন দেশের সরকার নিষিদ্ধ করল কমিউনিস্ট পার্টিকে (১৯৪৮)। পুলিশ এসে তালাবন্ধ করে দিল শ্রীমতী কাফের আখড়াকে। তবু উপন্যাসের শেষে দেখা গেল শ্রীমতী কাফেতে শুধু মুক্তির বীজ বােনা হয়নি, সেই বীজ বৃক্ষ হয়ে নতুন করে স্বপ্নও বুনেছে দেশের মাটিতে।
কেন প্রিয়: শ্রীমতী কাফে’ একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে এ জাতীয় উপন্যাসগুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’,শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উল্লেখযােগ্য। কিন্তু এই উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী তিন দশকের গােটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি। একটি চায়ের টেবিল ক্রমশই হয়ে উঠেছে গােটা বাংলা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বােঝার উপযুক্ত একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র। তাই এটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস।
উপসংহার : প্রিয় বা অপ্রিয়—এই বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগত অনুভূতিই নির্বাচন করে দেয় বিষয়টি। কাজেই আমার প্রিয় উপন্যাস ‘শ্রীমতী কাফে’ এই ভাবনাটি সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত ভাবনা। এজাতীয় অন্য উপন্যাসগুলিও আমার অত্যন্ত প্রিয়, তবে শ্রীমতী কাফে’ আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস।
আরো পড়ুন
বাংলার সংস্কৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
তােমার প্রিয় কবি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
তােমার প্রিয় লেখক – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবাংলার হস্তশিল্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।