বিদ্যালয়-শিক্ষার উন্নতিতে বিদ্যাসাগরের অবদান

বিদ্যালয়-শিক্ষার উন্নতিতে বিদ্যাসাগরের অবদান
অথবা, বিদ্যালয়-শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর যে অবদান রেখে গেছেন তা আলােচনা করাে।

উত্তর : 

বিদ্যালয়-শিক্ষার উন্নতিতে বিদ্যাসাগরের অবদান : 

বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাসংস্কারক। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা, স্ত্রীশিক্ষা, গণশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা প্রসারে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

[1] গ্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে : তৎকালীন ভারতবর্ষ ছিল অশিক্ষার অন্ধকারে আচ্ছন্ন। ভারতীয়দের জন্য প্রয়ােজন প্রাথমিক শিক্ষা। তাই তিনি এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগী হন। 1853 খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। পাঠ্যবই রচনা করতে হবে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের জন্য শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মাতৃভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

তার ফলস্বরূপ হ্যালিড সাহেবের সহযােগিতায় বিদ্যাসাগর হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান প্রভৃতি জেলায় বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। এইসমস্ত স্কুলে ইতিহাস, ভূগােল, বিভিন্ন বিজ্ঞানের শাখা, পাটিগণিত প্রভৃতি বিষয় পড়ানাে হত। 

[2] বিদ্যাশিক্ষার জন্য পুস্তক প্রণয়ন : শিক্ষার্থীর অক্ষর জ্ঞানের জন্য প্রথম প্রয়ােজন পুস্তক। তার জন্য তিনি রচনা করেন বর্ণপরিচয়’ প্রথম ভাগ (1855 খ্রিস্টাব্দে) ও ‘বর্ণপরিচয় দ্বিতীয় ভাগ (1855 খ্রিস্টাব্দে)। তিনি ভাষা সহজসরল করার জন্য যতি চিহ্নের প্রচলন করেন। সহজ ভাষায় ব্যাকরণ রচনা করেন ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘উপক্রমণিকা। এ ছাড়া ভাষাশিক্ষার জন্য কথামালা’, ‘বােধােদয়’ প্রভৃতি রচনা করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য অনুবাদ করেন।

[3] উচ্চশিক্ষার প্রসারে : বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন নামক বিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে সেখানে বিএ (অনার্স), এম.এ আইনশাস্ত্র প্রভৃতি পড়ানাের ব্যবস্থা হয়। 

[4] অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষাসংস্কার : 1851–1858 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন ছিলেন। তিনি পাঠক্রম, পরীক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করেন। ছাত্ররা যাতে ইংরেজি শিখতে পারে তিনি তার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া তিনি অব্রাম্মণ ছাত্রদের জন্য সংস্কৃত কলেজে পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। 

[5] স্ত্রীশিক্ষার উন্নতিকল্পে : তিনি বঙ্গদেশের নারীদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে তিনি যেমন সচেষ্ট হয়েছিলেন, তেমনি তিনি নারীশিক্ষার জন্য বিদ্যালয় স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তার প্রচেষ্টায় তৎকালীন সময়ে 35টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। অনেক সময় তিনি এইসমস্ত বিদ্যালয়ের আর্থিক দায়ভার গ্রহণ করতেন। এইসমস্ত বিদ্যালয়ের আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি নারীশিক্ষা ভাণ্ডার’ গঠন করেছিলেন। 

[6] জনশিক্ষার প্রসার : তিনি জনশিক্ষার প্রসারে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। দেশের সকল ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তােলার ব্যাপারে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। এর জন্য তিনি তত্ত্ববােধিনী, সােমপ্রকাশ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে মতামত প্রকাশ করতেন। 

উপসংহার :

তিনি ছিলেন একজন আধুনিক বাঙালি। তিনি বঙ্গদেশে তথা ভারতের বিদ্যা উন্নতির জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেন। তাঁর শিক্ষামূলক সংস্কারের জন্য সমগ্র জাতি আজও চিরঋণী।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment