শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক আলোচনা করো

শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক আলোচনা করো

উত্তর :

শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক : 

শিখন ও পরিণমন দুটি পৃথক প্রক্রিয়া হলেও এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। পরিণমন একটি স্বয়ংনির্ভর ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। তাই এই প্রক্রিয়াটি শিখনের ওপর নির্ভরশীল নয়। অন্যদিকে শিখন প্রক্রিয়াটি শিক্ষার্থীর পরিণমনের ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে শিশুর বা শিক্ষার্থীর পরিণমনের ওপর নির্ভর করে শিখনের প্রস্তুতি শুরু হয়। পরিণমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত পরিপক্বতা না-এলে শুধুমাত্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাঞ্ছিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। বস্তুতপক্ষে শিখন তখনই সফল হবে যখন ব্যক্তি পরিণমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পরিপকৃতার স্তরে উন্নীত হবে। এই ক্ষেত্রে পরিণমনই ঠিক করে দেয়, কখন শুরু করলে শিখনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসবে না। শিখন ও পরিণমনের মধ্যে যে একটি সম্পর্ক রয়েছে, তা নীচের আলােচনা থেকে বােঝা যায়— 

[1] শিক্ষার্থীর আচরণগত পরিবর্তনে শিখন ও পরিণমন : শিশুর বা শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে শিখন ও পরিণমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও প্রক্রিয়া দুটি পুরােপুরি পৃথক ধরনের, কিন্তু এরা শিশুর জীবন বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। যেমন—পরিণমনের একটি পর্যায়ে শিশু কথা বলতে শেখে। কিন্তু সে কোন ভাষায় কথা বলবে, কীভাবে উচ্চারণ করবে, শব্দভাণ্ডার কেমন হবে—এসব কিছুই তার শিখনের ওপর নির্ভরশীল। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, শারীরিক ও মানসিক পরিণমন মূলত আত্মবিকাশ ঘটায় ও সরল আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করে। তবে জটিলতর আচরণ, দক্ষতা অর্জনের পক্ষে শিখনগত অনুশীলন, অভ্যাস এবং বিশেষ শিক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা সমধিক। তবে পরিণত অবস্থা না -এলে শুধুমাত্র অনুশীলন করে প্রত্যাশিত বা বাঞ্ছিত ফল লাভ করা যায় না।

[2] পরিণমন অনুসারে শিখন পরিচালিত হয় : পরিণমন একটি সহজাত, অভ্যন্তরীণ, স্বতঃস্ফুর্ত, স্বাভাবিক, জৈবিক প্রক্রিয়া। তাই বাইরের পরিবেশ একে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। অন্যদিকে শিখন এক ধরনের শর্তসাপেক্ষ, বিকাশমান, মানসিক প্রক্রিয়া। তাই এটি শিশুর ‘চাহিদা, প্রেষণা, আগ্রহ, মনােযােগ, চর্চা ও পরিণমনের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। এর সাহায্যেই শিশু বা শিক্ষার্থী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। মনােবিজ্ঞানীদের মতে, সঠিক শিখনের জন্য উপযুক্ত পরিণমনের দরকার হয়। কোনাে বিষয়ে জ্ঞানলাভ করার জন্য শিক্ষার্থী বা শিশু যদি পরিণত বা প্রস্তুত না হয় এবং তাকে যদি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনাে বিষয় শেখানাের চেষ্টা করা হয়, তাহলে ফল বিপরীত হয়, বিকাশ ব্যাহত হয়।

[3] শিক্ষা পরিকল্পনায় পরিণমন : শিখনের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তা হল শিক্ষা পরিকল্পনা। যে-কোনাে স্তরের শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বয়স ও পরিণমনের সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষার জন্য পরিকল্পনা করা হয়। মােটকথা শিখনের সঙ্গে শিক্ষা পরিকল্পনা এবং শিক্ষা পরিকল্পনার সঙ্গে পরিণমন সম্পর্কযুক্ত। তাই বলা যায় শিখন ও পরিণমন পরস্পর প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত। 

[4] পরিণমন নির্ধারণ করে শিখন সীমারেখা : মনােবিজ্ঞানীদের মতে, কোন বয়সে শিক্ষার্থীকে কোন বিষয়টি শিক্ষা দিতে হবে এবং কোন প্রণালীতে চেষ্টা করলে অল্প পরিশ্রমে সুফল লাভ করা যাবে, জৈবিক পরিণমন দেখেই তা বােঝা যায়। উপযুক্ত সময়ে সঠিক বিষয় অনুশীলনের গুরুত্ব তাই শিশুর বা শিক্ষার্থীর জীবনে অনস্বীকার্য। শিখনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল পরিণমন। যথাযথ পরিণমন ব্যতীত শিখন অসম্ভব। পরিণমন প্রক্রিয়াটি শিখনের সীমারেখা নির্ধারণ করে। 

[5] শিখন ও পরিণয়নের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা : শিখন ও পরিণমন এই প্রক্রিয়া দুটি পরস্পর নির্ভরশীল। কারণ এই দুই প্রক্রিয়ার সমন্বয়ের ওপর ব্যক্তির সার্থক ও সুষ্ঠু জীবন বিকাশ নির্ভর করে। এদের কোনাে একটিকে বাদ দিলে ব্যক্তির জীবন বিকাশ যথাযথভাবে ঘটবে না। কোনাে বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা বা পটুতা অর্জনের জন্য পরিণমন অপরিহার্য, কারণ ওই প্রক্রিয়াটি সম্পাদনের জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়ােজন হয়, তা এনে দেয় পরিণমন। আবার এই বিষয়ে পারদর্শিতা আনতে শিখনের অপরিহার্যতাও লক্ষ করা যায়। 

মন্তব্য :

উপরােক্ত আলােচ্য বিষয়ের ভিত্তিতে বলা যায় ‘শিখন ও পরিণমন’-এই দুয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির কথা ভাবা যায় না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment