মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি লেখাে

মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি লেখাে
অথবা, হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষানীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।

উত্তর : 

মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশ : 

মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি বিভিন্ন দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সুপারিশগুলি এখানে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হল— 

[1] মাধ্যমিক শিক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগের ব্যবস্থা :

(i) কমিশন সরকারকে মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব ধীরে ধীরে বেসরকারি কর্তৃপক্ষের হাতে পুরােপুরিভাবে হস্তান্তর করার জন্য সুপারিশ করে।

(ii) এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগ বলতে বেসরকারি ভারতীয় প্রচেষ্টাকেই বােঝানাে হয়েছে। মিশনারি প্রচেষ্টা নয়। 

(iii) বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে আরও উদারভাবে সরকারি অর্থ সাহায্য করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি বিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে অন্যান্য সুযােগসুবিধাদানের জন্য কমিশন সুপারিশ করে। 

(iv) কমিশনের মতে, যেসকল অঞ্চল অনুন্নত, সেখানকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির পরিচালনের দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। 

(v) প্রত্যেকটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার ব্যবস্থা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। ওই আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হবে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পথপ্রদর্শক। 

[2] পাঠক্রমে A কোর্স এবং B কোর্স-এর ব্যবস্থা : 

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘A কোর্স এবং B কোর্স’ নামে দুটি পৃথক কোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে।

(i) A-কোর্স : এটি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রস্তুতির জন্য তত্ত্বমূলক শিক্ষার স্তর।

(ii) B-কোর্স : এটি ব্যাবহারিক বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার স্তর। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র বা ছাত্রীকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। অষ্টম শ্রেণির পাঠ শেষ হলে, তারা A-কোর্স বা B-কোর্স অনুযায়ী পঠনপাঠন করবে। 

[3] নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা :

কমিশনের মতে, “নিম্নমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ইংরেজি অথবা মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।” এই সুপারিশ ব্যক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের মাধ্যম কী হবে সে-বিষয়ে কমিশনের সুনির্দিষ্ট অভিমত সুপারিশে উল্লেখিত ছিল না। এর ফলে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজিকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হয়েছিল। 

[4] শিক্ষক-শিক্ষণ বিষয়ে সুপারিশ : 

মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কমিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সুপারিশ করে। সুপারিশে বলা হয়—শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষণবিদ্যা বিষয়ে অভিজ্ঞতা না-থাকলে সেই ব্যক্তিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়ােগ করা যাবে না। 

সুপারিশের মূল্যায়ন : 

হান্টার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে খুবই কম সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ওই সুপারিশগুলি পরবর্তী ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মাধ্যমিক শিক্ষাকে প্রভাবিত করেছিল – 

(i) হান্টার কমিশনে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহদানের কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেশে বহুসংখ্যক মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। 

(ii) জেলায় জেলায় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনও কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ঘটেছে। 

(iii) কমিশনের সুপারিশে যে A-কোর্স এবং B-কোর্স-এর কথা বলা হয়েছিল তাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বর্তমান যুগের বহুমুখী মাধ্যমিক শিক্ষার মূল সূত্রটি A-কোর্স এবং B-কোর্স-এর মধ্যে নিহিত ছিল। (iv) কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের বিষয়ে যে সুপারিশ করেছিল, তার প্রভাবে বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয়ে জনগণের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment