হান্টার কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ আলােচনা করাে।

হান্টার কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ আলােচনা করাে।
অথবা, হান্টার কমিশন কত খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়? হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দেশীয় শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষানীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে। 1 + 2 + 5

উত্তর : 

হান্টার কমিশনের সুপারিশ : 

1882 খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার পর্যালােচনা করার জন্য স্যার উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে ভারতীয় শিক্ষা কমিশন তথা হান্টার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষার একটি শােচনীয় চিত্র তুলে ধরে। এই শিক্ষার প্রসারের জন্য কতকগুলি সুপারিশ করেন। নীচে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল— 

[1] দেশীয় শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ :

(i) দেশীয় পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য দেশীয় জনসাধারণের দ্বারা স্থাপিত বা পরিচালিত বিদ্যালয়গুলি প্রয়ােজনীয়। তাই এগুলির সংস্কারসাধন করে, এগুলিকে শিক্ষাবিস্তারের কাজে লাগাতে হবে। 

(ii) অধিক সংখ্যক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে গড়ে ওঠে বা স্থাপিত হতে পারে, তার জন্য সরকারকে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

(iii) শিক্ষার্থীদের সাফল্যের নিরিখে অনুদান মঞ্জুর করার নীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে উৎসাহ দান করতে হবে।

(iv) যে-সমস্ত অঞ্চলে স্থানীয় বাের্ড বা মিউনিসিপ্যালিটি বর্তমান, সেই সকল স্থানে ওই কর্তৃপক্ষকেই দেশীয় বিদ্যালয়গুলির ব্যয়ভার চালানাের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে।

[2] প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ : 

1854 খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে 1882 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার তেমনভাবে ঘটেনি। সেই কারণে হান্টার কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষভাবে নজর দিয়ে অনেকগুলি মূল্যবান সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে। এখানে সংক্ষেপে সুপারিশগুলি উল্লেখ করা হল – 

A) শিক্ষানীতি সম্পর্কিত সুপারিশ : 

(i) প্রাথমিক শিক্ষাকে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে বিবেচনা না-করে, এটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষাপর্যায় হিসেবে গণ্য করতে হবে।

(ii) এর মূল উদ্দেশ্য হবে সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম শিক্ষাদান করা। 

(iii) প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সরকারকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। 

B) প্রশাসনিক সম্পর্কিত সুপারিশ : 

(i) প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসনিক কার্য পরিচালনার ভার জেলা বাের্ড ও মিউনিসিপ্যাল বাের্ডগুলির ওপর ন্যস্ত করতে হবে। 

(ii) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির পরিচালন ভার শিক্ষাবাের্ডের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। 

C) অর্থ সম্পর্কিত সুপারিশ : 

(i) জেলা বাের্ড এবং মিউনিসিপ্যাল বাের্ডগুলিকে প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালনা ও বিকাশের জন্য আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে।

(ii) রাজস্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। 

(iii) সরকারকে শিক্ষাখাতের মােট বরাদ্দ অর্থের এক-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে অনুদান হিসেবে ব্যয় করতে হবে। 

(iv) বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য সৃষ্ট কেন্দ্রগুলির পরিচালনার খরচ প্রাদেশিক সরকারকে বহন করতে হবে।

D) পাঠক্রম সম্পর্কিত সুপারিশ : 

(i) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

(ii) দেশীয় গণিত, হিসাবশিক্ষা, জরিপ, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, শিল্পকলা, কৃষিবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়গুলিকে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

(iii) পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনতা দিতে হবে। 

(iv) এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলিতে খেলাধুলাে, ব্যায়াম, স্কুল ড্রিল প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। 

E) শিক্ষক-শিক্ষণ বিষয়ক সুপারিশ : 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য প্রতি মহকুমায় একটি করে প্রশিক্ষণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা নর্মাল স্কুল স্থাপন করতে হবে। নর্মাল স্কুলগুলির দায়িত্ব ও ব্যয়ভার প্রাদেশিক সরকারকেই বহন করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment