স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা বিষয়ে আলােচনা

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা বিষয়ে আলােচনা

উত্তর:

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা :

বিবেকানন্দ ছিলেন একজন যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ। তিনি পরাবিদ্যা (পরমজ্ঞান) ও অপরাবিদ্যা (বস্তুজ্ঞান) এই দুই-এর মধ্যে মেলবন্ধন ঘটান। শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর বৈপ্লবিক ধারণা যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি ছিলেন ভারতীয় আদর্শের পথপ্রদর্শক। তাঁর শিক্ষাবিস্তারে বিভিন্ন দিক হল, যথা—

[1] আত্নজ্ঞান লাভ : বিবেকানন্দের মতে ভিতরের সত্তার আবিষ্কার হল শিক্ষা। যা হল আত্মজ্ঞান মানুষের মধ্যে সম্পূর্ণতা আগে থেকে বিরাজমান। শিক্ষা তাকে প্রকাশ করে। তাই তিনি penter 7601661- “Education is the Manifestation of the perfection already in man.” wefte us anglais মধ্যে মহত্ত্বের প্রকাশই হল শিক্ষা।

[2] মানসিক ও দৈহিক বিকাশ : তাঁর মতে শিক্ষা হল মানুষ তৈরির শিক্ষা (Man-making Education)। শিক্ষার্থী অবশ্যই নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস অর্জন করবে। | সে সহনশীলতার অধিকারী হবে। সংস্কারমুক্ত, আধুনিক হবে। শিক্ষার্থী অবশ্যই অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রের অধিকারী। হবে। নিজের সত্তা, সমাজ,দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। তার মতে শিক্ষা মানে তথ্য সংগ্রহ নয়— মানুষ তৈরি করা, চরিত্রগঠন করা (Character-making) ও বিভিন্ন ভাবনা যথাযথ আত্মস্থ (assimilation of ideas) করাই হল শিক্ষার উদ্দেশ্য। ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধার ভাব জাগ্রত হবে, শিক্ষার্থী। আত্মনির্ভর হবে। তার মানসিক শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে। তিনি দৈহিক শিক্ষার ওপর জোর দেন। ফলে শিক্ষার্থী সুস্থ দেহ-মনের অধিকারী হবে। গীতা চর্চা না করেও একজন ব্যক্তি ফুটবল খেলার মাধ্যমে ঈশ্বর উপলব্ধি করতে পারে’ (Even without goes through Gita one can realise God through football.’) 

[3]পাঠক্রম; তিনি পাশ্চাত্যের নকল করার প্রচেষ্টাকে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন—“আর অনুকরণ করিও না, আর অনুকরণ করিও না’– “তােমরা আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন হও। তিনি ভারতীয় ঋষির বাণী, ভারতবর্ষের ইতিহাস, ভূগােল, প্রাচ্য সংগীত, বিভিন্ন ভাষায় জ্ঞানার্জন, শরীরচর্চা, পাশ্চাত্য বিজ্ঞান। ইত্যাদির ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। 

[4] শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা ও শিক্ষক : বিবেকানন্দ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষানীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে শিক্ষায় শিশুকে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শিক্ষালাভের পথ হিসেবে মনােযােগ, একাগ্রতা ও ধ্যানের ওপর গুরুত্ব দেন।

শিক্ষার্থীর জ্ঞান উন্মেষের জন্য শিক্ষকের সাহচর্য প্রয়ােজন। সর্বোপরি শিক্ষা গুরু থেকে শিষ্যে সঞ্চারিত হবে। শিক্ষার্থীর লক্ষ্য হবে সত্যানুসন্ধান। শিক্ষক হবেন ত্যাগী, কায়মনােবাক্যে পবিত্র। নিঃস্বার্থপরায়ণ।

[5] মানবসেবা : তিনি শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেছেন শিক্ষা মানে কেবল ব্যক্তির নিজস্ব প্রাথমিক চাহিদা পুরণ করা নয়। তাঁর মতে শিক্ষা ধর্ম হল মানুষের প্রতি ভালােবাসা—এককথায় গভীর। মানবপ্রেম। তিনি শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে মেলবন্ধন করতে চেয়েছেন তিনি গর্বের সঙ্গে বলতেন— প্রতিটি OUTO Oplants Big (“Every Indian is my brother) বিবেকানন্দের অন্যতম শিক্ষাভাবনা হল— মানুষের মধ্যে অবস্থিত ঈশ্বর সেবা। কোনাে প্রতীকরূপে ঈশ্বর সেবা নয়।

[6] সর্বজন শিক্ষা : বিবেকানন্দ উপলদ্ধি করছেন এদেশের দুঃখদুর্দশা দূর করতে হলে প্রয়ােজন আপামর ভারতবাসীর শিক্ষা। জনগণের শিক্ষা দেশকে অগ্রসর করে। তিনি এক নতুন ভারত গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে নতুন ভারত বেরুকলাঙল ধরে চাষার কুটীর ভেদ করে, …..বেরুক ঝােপ-জঙ্গল পাহাড়-পর্বত থেকে।

 [7] নারীশিক্ষা : নারীশিক্ষার ওপর তিনি বিশেষ গুরত্ব। দিয়েছিলেন। পাশ্চাত্যে নারী হলেন পত্নী, প্রাচ্যে তিনি জননী। ভারতীয় নারীর চরিত্রের আদর্শ হবে সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তীর মতাে। তার মতে, মেয়েরা মানুষ হলে তবে তা কালে তাদের সন্তান-সন্ততি দ্বারা দেশের উন্নতি ঘটবে। মেয়েদের তিনি। ধর্ম, শিল্প, বিজ্ঞান, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য-বিষয়ক শিক্ষা দিতে। বলেছেন।

 [8] কারিগরি শিক্ষা : তিনি বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তােলার ব্যাপারে তিনি উদ্যোগী ছিলেন। 

উপসংহার :

বিবেকানন্দের শিক্ষা ভাবনার সাফল্য হল যুবশক্তির মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবােধ সৃষ্টি। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন— ভারত আবার উঠিবে কিন্তু জড়ের শক্তিতে নয়, চৈতন্যের শক্তিতে। তাই তিনি শিক্ষা ভাবনায় এক সফল বিপ্লবী।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment